যৌতুক না দেয়ায় চুল কেটে নির্যাতনের বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করে এক মাসেও কোনো সুরাহা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন এক নারী।
পুলিশ বলছে, আদালত থেকে এই মামলার বিষয়ে তাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। ওই নারীও অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেননি।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালত-১-এ স্বামী, মামা শ্বশুর ও খালা শাশুড়ির নামে মামলা করেন হাছিনা বেগম।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মধুপুর গ্রামের ফিরোজ হোসেনের সঙ্গে পাশের গ্রাম ভান্ডারপুর দিঘীরপাড়ের হাছিনা বেগমের বিয়ে হয়। ব্যবসা করার জন্য বিয়ের দিন জামাইকে ১ লাখ টাকা যৌতুক দেন হাসিনার বাবা হোসেন আলী।
কিছুদিন পর থেকে ফিরোজ আরও ১ লাখ টাকার জন্য হাছিনাকে চাপ দেয়া শুরু করেন। হাছিনা এই দাবি না মানায় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ওপর নির্যাতন চালানো শুরু করে।
এ বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি যৌতুকের দাবিতে হাছিনাকে বেল্ট দিয়ে মারধর শুরু করেন ফিরোজ। সে সময় তার মামা ফজলু হোসেন ও খালা শেফালি বেগমও উপস্থিত ছিলেন। হাছিনা চিৎকার শুরু করলে তারা তার মুখে কাপড় গুঁজে আবারও নির্যাতন করেন। ওই নারী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার চুল কেটে ফেলা হয়। জ্ঞান ফেরার পর বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয় হাছিনাকে।
হাছিনা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২৩ তারিখ রাণীনগর থানায় আমিসহ আমার পরিবারের লোকজন মামলা করতে গেলে কর্তৃপক্ষ কোনো মামলা তো দূরের কথা সাধারণ অভিযোগও নেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলা করি।
‘এক মাস হয়ে এলেও এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি। যদি সঠিক বিচার না করা হয় তাহলে যৌতুকলোভীরা তাদের স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করতে উৎসাহিত হবে। দেশের অনেক নারী বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে।’
আমি একজন দিনমজুর। অনেক কষ্ট করে মেয়ের বিয়ের সময় জামাইয়ের চাহিদামতো যৌতুক দিয়েছিলাম। তারা আরও যৌতুকের জন্য মেয়েটাকে চাপ দিচ্ছিল ও নির্যাতন করছিল।
হাছিনার বাবা হোসেন আলী বলেন, ‘আমি একজন দিনমজুর। অনেক কষ্ট করে মেয়ের বিয়ের সময় জামাইয়ের চাহিদামতো যৌতুক দিয়েছিলাম। তারা আরও যৌতুকের জন্য মেয়েটাকে চাপ দিচ্ছিল ও নির্যাতন করছিল।
‘মেয়েটাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলে থানায় যাই মামলা করতে। পুলিশ মামলা না নিলে আদালতে মামলা করেছি। এতদিন হয়ে গেলেও কোনো সুষ্ঠু বিচার পাইনি।’
এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম কচি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা হলে অনেক সময় আমাদের মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে হাছিনা বেগমের করা মামলার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আমরা এখনও পাইনি। নিদের্শনা পেলে দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেব।’
রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন আকন্দের দাবি, ওই নারী বা তার পরিবারের কেউ থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেনি।
তিনি বলেন, ‘যদি থানায় অভিযোগ নিয়ে আসতো তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হতো। আদালতে মামলা করার বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা বা তদন্ত করার চিঠি পাইনি আমরা। নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’