দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনও দেড় বছরের বেশি সময় বাকি। তবে এখন থেকেই সংসদ সদস্যরা এলাকায় বেশি সময় দিতে শুরু করেছেন। এ অবস্থায় এলাকায় এমপিদের জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে ধর্মীয় অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয়ের সুযোগ করে দিচ্ছে সরকার।
এমপিদের জন্য ‘সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২’ হাতে নিয়ে যাচ্ছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৮২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) নির্বাহী কমিটির সভায় তোলা হচ্ছে। আগারগাঁওয়ের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠেয় সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, একনেকের কার্যতালিকায় থাকা প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। আগামী ৩ বছরে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ১৭ হাজারের বেশি ধর্মীয় স্থাপনায় এই প্রকল্পের অর্থ খরচ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
শুরুতে এ প্রকল্পে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। মূল্যায়ন কমিটির সভায় তা কমিয়ে ১ হাজার ৮২ কোটি টাকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সরকার নিজস্ব খাত থেকে পুরো টাকার জোগান দেবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৭ হাজার ৩২১টি সামাজিক ও ধর্মীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। এতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
প্রকল্পটি সারা দেশে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে সিটি করপোরেশন এলাকা এর বাইরে থাকবে। দেশে বর্তমানে ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে। সে হিসাবে প্রতি উপজেলায় গড়ে ২ কোটি টাকা খরচ করা হবে। আর সংরক্ষিত আসনসহ মোট সংসদ সদস্য রয়েছেন ৩৫০ জন। সে হিসাবে একেকজন সংসদ সদস্য নিজ এলাকায় সামাজিক অবকাঠমো উন্নয়নে গড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ের সুযোগ পাবেন।
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, কোথায় কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে তা ঠিক করবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। তিনি স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করবেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ওইসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভবন, দেয়াল নির্মাণ, আসবাবপত্র সরবরাহসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন করবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। এর আগে জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০১৭ সালে ‘সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ নেয়া হয়। তাতে খরচ ধরা হয় ৬৬৫ কোটি টাকা। সে প্রকল্পটি এখনও চলমান। এতে প্রতিটি উপজেলার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে ১ কোটি টাকা খরচ করা হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, উন্নয়ন টেকসই করতে জনগণের সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়ন অপরিহার্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে ‘সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের সুপারিশকৃত স্কিমগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৯৬ শতাংশ। প্রকল্পটি আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
দেশের জনসাধারণের মধ্যে সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী করতে সামাজিক সমাবেশ, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জন্য সামাজিক অবকাঠামো অপরিহার্য। আগের প্রকল্প সফল বাস্তবায়নের কারণে সরকারি খাস বা দান করা জমিতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান বা অবকাঠামো জনসাধারণের মধ্যে সামাজিক বন্ধন অটুট রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন আল রশীদ বলেন, ‘সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী করতে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান বা অবকাঠামো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই বন্ধন অটুট রাখতে সরকারি খাস বা দান করা জমিতে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কার জরুরি। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপন করা হচ্ছে।’