পুঁজিবাজারের মন্দা কাটাতে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল চেয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন- বিএমবিএ। বাজারের তারল্য বৃদ্ধির জন্য মধ্যস্থতাকারীদের জন্য এই তহবিল চেয়েছে সংগঠনটি।
এই টাকা উত্তোলনে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত লভ্যাংশ দিয়ে যে স্থিতিশীলতা তহবিল গঠন করা হয়েছে, তার মাধ্যমে বন্ড ইস্যুর প্রস্তাব দিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে তহবিলটি মধ্যস্বত্বভোগীদের মধ্যে কম খরচে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের আকারে বিতরণ করার কথা বলেছে।
বিএমবিএ বলেছে, বাংলাদেশে পুঁজিবাজারের প্রধান দুর্বলতা হচ্ছে এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কম। ব্যক্তিশ্রেণির ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। পুঁজিবাজারের প্রধান এই দুর্বলতা কাটাতে এ ধরনের একটি তহবিল দরকার।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া বাজার সংশোধন কাটিয়ে পুঁজিবাজার চলতি বছরের জানুয়ারিতে উত্থানের আভাস দিয়েছিল। তবে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসির মধ্যে মতভিন্নতা দূর না হওয়া নিয়ে চাপের মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় নামে ধস।
সোমবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ প্রস্তাব দিয়েছে বিএমবিএ।
এক দশকেরও বেশি সময়ের মন্দা কাটিয়ে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে উত্থানে থাকা পুঁজিবাজারে গত কয়েক মাসের মন্দাভাবে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মধ্যে বিএমবিএ সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ মতিতের সই করা চিঠিতে কীভাবে এই তহবিলের সংস্থান হতে পারে সে বিষয়েও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া বাজার সংশোধন কাটিয়ে পুঁজিবাজার চলতি বছরের জানুয়ারিতে উত্থানের আভাস দিয়েছিল। তবে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসির মধ্যে মতভিন্নতা দূর না হওয়া নিয়ে চাপের মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় নামে ধস।
এই পরিস্থিতিতে বিএসইসি এক দিনে শেয়ারের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণের পাশাপাশি স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের নির্দেশ দেয়।
এ ছাড়া ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ড পরিপালনকারী সম্পদ ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে বৈঠক করে সংস্থাটি। দুই বৈঠক শেষেই বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা আসে।
এরপর টানা চার কর্মদিবসে সূচক বাড়ে ৩০০ পয়েন্টেরও বেশি। কিন্তু চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে একটি জাতীয় দৈনিকের এক সংবাদে শেয়ারগুলো দর হারাতে থাকে আবার।
সেই সংবাদে বলা হয়, শেয়ারের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আবার ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এই খবরে এক দিনেই অল্প কিছু বাদে প্রায় সব শেয়ারের দর পড়ে।
তহবিলের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারের অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত পর্যায়ে নেই। বাহ্যিক মৌলিক কারণগুলোর পরিবর্তনের কারণে বাজারের অবস্থারও অবনতি হতে পারে। খুচরা বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে বিক্রির চাপ বাড়ায়। যেহেতু বাজার পতন অব্যাহত রয়েছে, তাই মার্জিন ঋণ প্রদানকারীদের শেয়ার বিক্রি করে তাদের মার্জিন অনুপাত সামঞ্জস্য করতে হবে।’
সেদিনই বিএসইসি থেকে বার্তা আসে, এই তথ্যটি সঠিক নয়। পরদিন লেনদেনের একপর্যায়ে আবার ঢালাও পতন দেখা দেয়। তবে শেষ বেলায় হারানো সূচক কিছুটা ফিরে পায়।
তবে বিনিয়োগ বাড়ানোর যে ঘোষণা এসেছিল, সেটি আদৌ হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। গত দুই দিন পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে ১১ মাসের সর্বনিম্ন।
চিঠিতে যা বলা হয়েছে
এই পরিস্থিতিতে মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের পুঁজিবাজারের প্রধান কাঠামোগত সমস্যাগুলোর একটি হলো- খুচরা বিনিয়োগকারীরা দ্বারা বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে আছে।
এখানে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের দ্বারা ডিলার বিনিয়োগসহ প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ খুব দুর্বল এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কম। বাজারের মধ্যস্থতাকারীদের তহবিলের উৎস সীমিত হওয়া এসব সমস্যার কারণ। তাদের (মধ্যস্থতাকারীদের) তহবিলের প্রধান উৎস পরিশোধিত মূলধন।
অন্যদিকে বেশির ভাগ মধ্যস্থতাকারীর কাছে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জামানত না থাকলেও পুঁজিবাজারের এক্সপোজার ইস্যুতে সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত অতিরিক্ত ১ শতাংশ সাধারণ বিধানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
ফলে ব্যাংকগুলো বাজারের মধ্যস্থতাকারীদের ঋণ দিতে নিরুৎসাহিত বোধ করে। পুঁজিবাজার বিনিয়োগের অন্তর্নিহিত ঝুঁকির জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও উচ্চহারে সুদ নেয়।
বাজারের মধ্যস্থতাকারীদের জন্য যদি এই বিশেষ তহবিল গঠন করা হয় এবং এটি যদি সঠিকভাবে বাজারে বিনিয়োগ করা হয়, তাহলে বাজারে বর্তমান মন্দাভাব কেটে যাবে এবং বাজারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তারল্য ঘাটতির সমস্যা সমাধান হবে। এ ছাড়া এই উদ্যোগ বাজার অংশগ্রহণকারীদের সংকেত দেবে যে সরকারের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারের উন্নতির জন্য কাজ করছে। এইভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা দৃঢ়ভাবে পুনরুজ্জীবিত হবে এবং বাজার স্থিতিশীল থাকবে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘তহবিলের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারের অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত পর্যায়ে নেই। বাহ্যিক মৌলিক কারণগুলোর পরিবর্তনের জন্য বাজারের অবস্থারও অবনতি হতে পারে।
‘খুচরা বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে বিক্রির চাপ বাড়ায়। যেহেতু বাজার পতন অব্যাহত রয়েছে, তাই মার্জিন ঋণ প্রদানকারীদের শেয়ার বিক্রি করে তাদের মার্জিন অনুপাত সামঞ্জস্য করতে হবে।’
এটি বারবার ঘটতে পারে- এই বিষয়টি উল্লেখ করে বিএমবিএ বলছে, ‘এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের বিশেষ ঋণ সুবিধা/তহবিল সহায়তার ব্যবস্থা করে বাজারের মধ্যস্থতাকারীদের শক্তিশালী করতে হবে; যাতে তারা হঠাৎ গুজবসহ অন্য যেকোনো ধরনের পতন থেকে বাজারকে সমর্থন করতে পারে।’
‘সে কারণেই এই বিশেষ তহবিল গঠন জরুরি’ উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ‘বাজারের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্যই ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা প্রয়োজন।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘বাজারের মধ্যস্থতাকারীদের জন্য যদি এই বিশেষ তহবিল গঠন করা হয় এবং এটি যদি সঠিকভাবে বাজারে বিনিয়োগ করা হয়, তাহলে বাজারে বর্তমান মন্দাভাব কেটে যাবে এবং বাজারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তারল্য ঘাটতির সমস্যা সমাধান হবে।
‘এ ছাড়া এই উদ্যোগ বাজার অংশগ্রহণকারীদের সংকেত দেবে যে সরকারের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারের উন্নতির জন্য কাজ করছে। এইভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা দৃঢ়ভাবে পুনরুজ্জীবিত হবে এবং বাজার স্থিতিশীল থাকবে।’