বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রাথমিকে নিয়োগ: জেলায় পরীক্ষায় সায় নেই অধিদপ্তরের

  •    
  • ২১ মার্চ, ২০২২ ২০:২৮

বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে শুধু ঢাকায় নেয়ার পক্ষে মত দেয়া হয়। তাদের যুক্তি হলো, ঢাকায় পরীক্ষা হলে প্রশ্ন ফাঁসসহ অন্যান্য অসুদপায় এড়ানো সম্ভব হবে।’

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায়, নাকি জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে সোমবার আয়োজিত বৈঠকে দুটি পক্ষেই মত এসেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চাইছে লিখিত পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে শুধু ঢাকায় অনুষ্ঠিত হোক। অন্যদিকে, জেলা পর্যায়ে পরীক্ষার পক্ষে অবস্থান নেন মন্ত্রণালয়ের কয়েক কর্মকর্তা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রাথমিকের নিয়োগসংক্রান্ত মিটিং হয়েছে। তবে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে শুধু ঢাকায়, নাকি জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে- সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘বৈঠকে ঐকমত্য না হওয়ায় একপর্যায়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

বৈঠকে উপস্থিত আরেক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে শুধু ঢাকায় নেয়ার পক্ষে মত দেয়া হয়। তাদের যুক্তি হলো, ঢাকায় পরীক্ষা হলে প্রশ্ন ফাঁসসহ অন্যান্য অসুদপায় এড়ানো সম্ভব হবে।’

বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

প্রাথমিকের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এর আগে প্রতিবারই জেলা পর্যায়ে প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে।

সহকারী শিক্ষক পদের লিখিত পরীক্ষা শুধু ঢাকায় নিতে কেন্দ্র নির্বাচনসহ পরীক্ষাসংক্রান্ত নানা প্রস্তুতি শেষ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে হঠাৎ করেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মো. জাকির হোসেন জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা আয়োজনের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নিয়োগসংক্রান্ত বৈঠক হয়।

মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র নিউজবাংলাক জানান, গত ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে একাধিক সংসদ সদস্য জেলা পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিতে মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। তারা যুক্তি দেখান, জেলায় পরীক্ষা হলে চাকরিপ্রার্থীরা ঢাকায় আসার বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাবেন।

এ বিষয়ে জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মো. জাকির হোসেনকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

নিয়োগ পরীক্ষা জেলায় ফিরলে ‘দুর্নীতির শঙ্কা’

নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় নেয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন অনেক চাকরিপ্রার্থী। তাদের আশঙ্কা, জেলায় পরীক্ষা নেয়া হলে দুর্নীতির সুযোগ আবার তৈরি হবে।

কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জেলা পর্যায়ে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার খবরে তারা চরমভাবে হতাশ। কারণ জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা নেয়ার অতীত রেকর্ড ভালো নয়। বিগত সময়ে জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রক্সিসহ নানা অনিয়ম ঘটেছে।

প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা ঢাকায় নেয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাসও দিচ্ছেন অনেক চাকরিপ্রত্যাশী।

আরিফুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘অতীতের প্রাথমিকের সব নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। কারণ আবারও জেলায় পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

মাহমুদ কবির নামে আরেকজন লেখেন, ‘কিছু দিন আগের খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষাও জেলা পর্যায়ে নেয়া হয়েছিল। এর ফল কী হয়েছিল তা আমরা সবাই দেখেছি। এবারও খাদ্য অধিদপ্তরের মতো প্রশ্ন ফাঁস হবে। তাই ঢাকায় পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই।’

এর আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলমের সই করা পরীক্ষার কেন্দ্র নির্বাচনসংক্রান্ত চিঠিতে আগামী ৮ এপ্রিল থেকে নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর কথা বলা হয়েছিল।

চিঠিতে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ২০২০-এর লিখিত পরীক্ষা আগামী ৮, ১৫ ও ২২ এপ্রিল এবং ১৩ মে বিকেল ৩টায় গ্রহণ করা হবে।

এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জুলাই মাসের মধ্যে নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল।

সহকারী শিক্ষকের ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। করোনা মহামারির কারণে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে অবসরজনিত কারণে আরও ১০ হাজারেরও বেশি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে পড়েছে। এতে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ সমস্যার সমাধানে মন্ত্রণালয় আগের বিজ্ঞপ্তির শূন্য পদ ও বিজ্ঞপ্তির পরের শূন্য পদ মিলিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীদের বয়স বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন থেকে সর্বনিম্ন ২১ বছর এবং করোনার কারণে সাধারণ ছুটি শুরুর তারিখ অর্থাৎ গত বছরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত যাদের বয়স সর্বোচ্চ ৩০ বছর, তারা আবেদন করতে পারবেন। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে এ বয়সসীমা হবে ৩২ বছর।

প্রাথমিকের ইতিহাসে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর শুরু হয় এ পদের অনলাইনে আবেদন। এতে আবেদন করেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ চাকরিপ্রার্থী। সে হিসাবে ১টি পদের জন্য প্রতিযোগিতা হবে ২৯ চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে।

এ বিভাগের আরো খবর