আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ বা সমঝোতা করে গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টি আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের নেতৃত্বে জোট করার ঘোষণা দিয়েছে।
দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি কোনো দলের বি-টিম নয়, কোনো দলের দালালি করে না। জাতীয় পার্টি কারও জোটে নেই। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বেই জোট গঠন হবে। কেউ জাতীয় পার্টির ভেতরে থেকে অন্য দলের দালালি করতে চাইলে তার স্থান জাতীয় পার্টিতে হবে না।’
সোমবার বনানীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটির পরিচিতি সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
জাপা নেতা আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন ‘দেশে অসহিষ্ণু রাজনীতি শুরু করেছে বিএনপি। বিএনপি নিজেই এখন নেতৃত্বশূন্যতায় অধঃপতনের পথে। আর আওয়ামী লীগ প্রশাসন দিয়ে দেশ চালাচ্ছে। এ কারণে দেশের মানুষ সেবার পরিবর্তে শাসনের মুখে।’
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নরকের সঙ্গে তুলনা করেন জাতীয় পার্টির নেতা। বলেন, ‘দুর্নীতি, দুঃশাসন, বৈষম্য আর লুটপাটের কারণে দেশের মানুষ নরকের আগুনে পুড়ছে। মাঝে মাঝে ক্রিকেট ও ফুটবলে বিজয়ের দু-একটা সুখবরে যেন ঠান্ডা বাতাসে বয়ে যায়। যারা বোকার স্বর্গে বাস করেন, তারা হয়তো মনে করেন আমরা খুবই ভালো আছি। আসলে দেশের ৯৯ ভাগ মানুষই ভালো নেই।
‘শতকরা এক ভাগ মানুষ যারা দেশের বাইরে আসা-যাওয়া করেন, তারা বুঝতে পেরে বিদেশকে স্বর্গ ভেবে দেশ থেকে টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছেন।’
দেশে দুষ্টের লালন আর শিষ্টের দমন চলছে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রতিদিন দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণ যাচ্ছে যেন কারও কিছুই করার নেই। লঞ্চ দুর্ঘটনায় শত শত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে আবার সড়কে প্রতিদিন কত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে তার কোনো হিসেব নেই। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নেই, সামাজিক নিরাপত্তা নেই।
‘নাবালক শিশু কৌতুক করলেও তার সাজা হয়। আবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো কর্মকর্তা অবস্থান নিলে তার চাকরি চলে যায়। দেশে দুষ্টের লালন আর শিষ্টের দমন চলছে।’
জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘বিএনপি আবার হাওয়া ভবন সৃষ্টির স্বপ্ন দেখছে। অসুস্থ পল্লিবন্ধুকে (এরশাদকে পল্লিবন্ধু বলে জাতীয় পার্টি) জেলখানা থেকে পিজি হাসপাতালে নিতে বারবার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তখন বিএনপি সরকার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি।
‘বিএনপি চেয়েছিল এরশাদ যেন জেলখানাতেই মারা যান। কিন্তু আল্লাহর বিচার এখন দেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে। আবার আওয়ামী লীগ মনে করছে নৌকা পেলে এমপি, মন্ত্রী ও চেয়ারম্যান হওয়া যায়। তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকতে স্বপ্ন দেখছে।’
জাতীয় পার্টির গাজীপুর শাখার আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুস সাত্তার মিয়া, গাজীপুর জেলা সদস্য সচিব কামরুজ্জামান মন্ডল ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এ সময় বক্তব্য রাখেন।