বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেরিতে বিয়ের কারণে শিশুর ডাউন সিনড্রোম ঝুঁকি

  •    
  • ২১ মার্চ, ২০২২ ১১:৪৭

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে জন্মগতভাবে ডাউন সিনড্রোম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে ৩৫ বছর বয়সের পর নারীরা মা হলে শিশুর এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। মায়ের বয়স যত বেশি হয়, শিশুর ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তত বেশি থাকে।

মাদারীপুর জেলার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী হাজেরা বেগম। পড়াশোনা ও চাকরি শেষে যখন বিয়ে করেন, তখন তার বয়স ৩৪ বছর। বিয়ের দুই বছর পর সন্তানের মা হন। কিন্তু অন্যান্য শিশুর মতো স্বাভাবিক, নিয়মিত আচরণ করে না তার পুত্রসন্তান। শুরুর দিকে তেমন গুরুত্ব দেননি হাজেরা। সন্তানের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আচরণগত নানা পরিবর্তন দেখা দেয়।

মাদারীপুর থেকে চার বছরের শিশু সাইফকে চিকিৎসার জন্য তিনি আনেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজমে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানান, শিশু সাইফ ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত। শনাক্ত হওয়ার পর দুই বছর ধরে মাদারীপুর থেকে এসে সন্তানের চিকিৎসা করাচ্ছেন হাজেরা বেগম।

হাজেরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুরুর দিকে তেমন সমস্যা দেখা যায়নি। তবে সাইফের চার বছর বয়স হওয়ার পর বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে জন্মগতভাবে ডাউন সিনড্রোম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে ৩৫ বছর বয়সের পর নারীরা মা হলে শিশুর এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। মায়ের বয়স যত বেশি হয়, শিশুর ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তত বেশি থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩৫ বছর বয়সের প্রতি ৩৫০ জন গর্ভবতী মায়ের মধ্যে একজনের এবং ৪০ বছর বয়সের প্রতি ১০০ জন মায়ের একজনের ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশু হতে পারে। অন্যদিকে কোনো মায়ের আগে একটি ডাউন শিশু থাকলে পরবর্তী সময়ে ডাউন শিশু জন্মের আশঙ্কা বাড়ে। মা-বাবা ত্রুটিযুক্ত ক্রোমোজমের বাহক হলে তাদের সন্তানও ‘ডাউন’ শিশু হতে পারে। যদি বাহক বাবা হন, সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে ৩ শতাংশ আর মা হলে তা বেড়ে হয়ে যায় ১২ শতাংশ।

এই চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত একাধিক চিকিৎসক বলেন, মানুষের দেহকোষের ক্রোমোজমের অসামঞ্জস্যের কারণে জন্মগতভাবে বিশ্বে প্রতি ৮০০ শিশুর মধ্যে একটি শিশু ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত হচ্ছে। দেশে এখন এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। তবে এখনও শনাক্তের বাইরে রয়েছে ৩০ শতাংশ রোগী।

প্রাথমিক পর্যায়ে এই সমস্যা শনাক্ত না হওয়ায় ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজমের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা নিউজবাংলাকে বলেন, প্রতিবছর কী পরিমাণ শিশু এই সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে, তার কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রাথমিক সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশে ২ লাখ মানুষ ডাউন সিনড্রোমে ভুগছেন। তবে আগের তুলনায় এখন সেবা নেওয়া মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজমে সেবা নেওয়ার জন্য প্রতিদিন ১০০-এর বেশি মানুষ আসেন। এর মধ্যে প্রতিদিন তিন থেকে চারজন নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে।’

ডা. কানিজ ফাতেমা জানান, আগে শুধু শহরের মানুষ এখানে সেবা নিতে এলেও এখন গ্রামের মানুষ এই সেবার আওতায় আসছে। পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুর জন্মের আগেই তার ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকি আছে কি না তা নির্ণয় করা যায়। আলট্রাসনোগ্রাফি করেও ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের গর্ভস্থ শিশুর ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ডাউন সিনড্রোম সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ক্রনিওনিকভিলাস স্যামপ্লিং বা অ্যাওসেন্টেসিস নামক পরীক্ষা করা প্রয়োজন হবে। তবে ক্রোমোজম পরীক্ষাই এ রোগ নিশ্চিতকরণের একমাত্র উপায়।

ডাউন সিনড্রোম নিয়ে এখন দেশে অনেক সংগঠন কাজ করছে। এ রকমই একটি সংগঠন ডাউন সিনড্রোম সোসাইটি। এর অধীনে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তার উদ্দেশ্যে অভিভাবকদের সংগঠনের পাশাপাশি আক্রান্তদের ভাই-বোনদের নিয়েও বিশেষ সাপোর্ট গ্রুপে তৈরি করা হয়েছে।

এই বিশেষ রোগটির বিষয়ে জানতে চাইলে ডাউন সিনড্রোম সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরদার রাজ্জাক নিউজবাংলাকে বলেন, পরিবারের মানুষজনের সমর্থন ও সহায়তা পেলে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সহজেই সমাজের নাগরিক হিসেবে জীবনযাপন করতে পারেন। ডাউন সিনড্রোমে ভুগতে থাকা শিশুরা গতানুগতিক স্কুলে গেলেও অনেক সময় সহশিক্ষার্থীদের বা তাদের মা-বাবার বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হন। সহশিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ভুল ধারণার জন্যই এমনটা ঘটে থাকে।’

তিনি বলেন, মানুষের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন আচার-আচরণ, বুদ্ধিমত্তা, চেহারা, উচ্চতা, গায়ের রং সবকিছুই ক্রোমোজমের ভেতরের ডিএনএ-এর মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। এই ডিএনএ বা ক্রোমোজমের অসামঞ্জস্যতা থাকলে শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দেয়। ২১ নম্বর ক্রোমোজমের জায়গায় একটি বাড়তি ক্রোমোজমের কারণে ডাউন সিনড্রোম হয়। একে ‘ট্রাইসোমি ২১’ বলে। ৯৫ শতাংশ ডাউন সিনড্রোমই এই কারণে হয়ে থাকে। এতে শিশুদের বিশেষ কিছু শারীরিক ও মানসিক ত্রুটি দেখা যায়।

সরদার রাজ্জাক জানান, এ বিষয়ে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা দরকার। যেহেতু মায়ের কম বা বেশি বয়সের সঙ্গে ডাউন শিশু হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে, তাই চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধিক বয়সে, বিশেষ করে পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব বয়সে বিয়ে হওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়। মায়ের আগের শিশুটি যদি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত থাকে, তবে পরের সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কীভাবে বুঝবেন শিশুর ডাউন সিনড্রোম

ডা. কানিজ ফাতেমা বলেন, জন্মের পর ডাউন সিনড্রোম শিশুদের শরীরের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে থাকে। মাংসপেশিতে স্বাভাবিক শিশুর মতো শক্তি পায় না। চোখের বাইরের কোনা বাঁকাভাবে ওপরের দিকে উঠে থাকা, হাতের তালু জুড়ে একটিমাত্র রেখা থাকতে পারে, নাক চ্যাপ্টা, কান ছোট ও নিচু, জিহ্বা বের হয়ে থাকা, জন্মের সময় শিশুর ওজন ও দৈর্ঘ্য কম, উচ্চতা কম হতে পারে।

ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন মাত্রার বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত অক্ষমতা থাকে। এ ছাড়া আক্রান্ত অনেক শিশুর বিভিন্ন শারীরিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন জন্মগত হৃদরোগ, অন্ত্রের অস্বাভাবিকতা, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির বৈকল্য, থাইরয়েডের ত্রুটিপূর্ণ ক্রিয়া, অধিক সংক্রমণের আশঙ্কা, ঘাড়ের হাড়ের সমস্যা, রক্তের রোগ হয়ে থাকে। কিছু শিশুর এর কোনোটিই হয় না, আবার কাউকে এর কয়েকটি ভোগ করতে হয়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ের এই সমস্যাগুলো শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হলে তারাও অনেকটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।

আজকের দিবসটি উপলক্ষে কর্মসূচি

এমন পরিস্থিতিতে বিশেষত জন্মগত সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়তে আজ সোমবার সারা বিশ্বের মতো দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস। ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিনটি পালিত হয়ে আসছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘ইনক্লুশন মিন্স ইনক্লুসিভ এডুকেশন, ইনক্লুসিভ পার্টিসিপেশন’, যার মূল কথা ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেওয়া।

দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী বিএসএমএমইউতে বিনা মূল্যে মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। এই দিন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বুদ্ধির মাত্রা পরীক্ষার পাশাপাশি আচরণগত সমস্যা ও কথা বলতে দেরি হওয়ার জন্য স্পিচ থেরাপি, ফিজিওথেরাপি, হার্ট ও থাইরয়েড সমস্যার সেবা প্রদান করা হবে। এ ছাড়া ২৪ মার্চ এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর