গ্রাহকের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ দেখিয়ে ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় উত্তরা ব্যাংকের ঝালকাঠি শাখার সাবেক ব্যবস্থাপকসহ তিন কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ রোববার বিকেলে এ আদেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপক এম এ কুদ্দুস, ঋণ আদায়কারী শাহাবুদ্দিন আহাম্মদ এবং সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমির হোসেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠির বাসিন্দা আবদুল জলিল খানের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আলেয়া ইলেকট্রনিকস সেন্টার নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ২০১২ সালে তাকে ৫০ লাখ টাকা সিসি (ক্যাশ ক্যাডিট) ঋণ নিয়ে জমি কিনে ব্যবসা করার প্রলোভন দেখান উত্তরা ব্যাংক ঝালকাঠি শাখার ব্যবস্থাপক এম এ কুদ্দুস, ঋণ আদায়কারী শাহাবুদ্দিন আহাম্মদ ও সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমির হোসেন।
২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর ওই তিন কর্মকর্তা ব্যবসায়ী জলিলের কাছ থেকে বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেন। ওই বছরের ২ ডিসেম্বর তার নামে ২৫ লাখ টাকার সিসি ঋণ পাস করা হয়েছে বলে একটি হিসাব খুলে টাকার অঙ্ক ও তারিখবিহীন ১০টি চেকের পাতায় স্বাক্ষর রাখেন তারা। ১০ ডিসেম্বর তিনি ব্যাংকের শাখায় সিসি ঋণের দুই লাখ টাকা উত্তোলন করতে যান।
ওই সময় জলিল খান জানতে পারেন, ব্যাংক কর্মকর্তারা তার অজান্তেই ৫ ডিসেম্বর ২৫ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে ব্যাংক ব্যবস্থাপক এম এ কুদ্দুস ৪০ লাখ টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন আবদুল জলিল খানকে।
একাধিকবার অঙ্গীকার করেও টাকা পরিশোধ না করে উল্টো ওই ব্যাংক কর্মকর্তারা আবদুল জলিল খানের নামে ২৯টি কৃষি ঋণের গ্রান্টার হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন। এমন পরিস্থিতিতে বসতঘর নিলামের হাত থেকে রক্ষা পেতে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি বাধ্য হয়ে ঋণের সুদ পরিশোধ করেন।
এ ছাড়াও উত্তরা ব্যাংক ঝালকাঠি শাখার সাবেক এই তিন কর্মকর্তা ২৬ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ২১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা কৃষিঋণ পাস করে জালিয়াতির মাধ্যমে তা উঠিয়ে আত্মসাৎ করেন। এই ঋণ পাসের সময় ব্যবসায়ী আবদুল জলিলকে গ্রান্টার দেখানো হয়।
অবশেষে ২০২১ সালের ২৭ মে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন ব্যবসায়ী আবদুল জলিল খান।
তদন্ত শেষে অর্থ আত্মসাতের ঘটনার প্রমাণ পেয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাপক এম এ কুদ্দুস, ঋণ আদায়কারী শাহাবুদ্দিন আহাম্মদ ও সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমির হোসেনকে চাকরিচ্যুত করেন। আসামিরা একপর্যায়ে উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের জামিন নেন।
রোববার এই তিনজন ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় বলে জানিয়েছেন মামলার বাদীর আইনজীবী নাসির উদ্দিন কবীর।
ব্যবসায়ী আবদুল জলিল বলেন, উত্তরা ব্যাংকের সাবেক এই তিন কর্মকর্তা শুধু আমাকেই হয়রানি করেননি, আরও ২৬ জনের নামেও কৃষিঋণের নামে টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন। আমরা ২৭ জন তাদের প্রতারণার শিকার হয়েছি।