বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেট্রোরেলের নিচে এক কিলোমিটার যেতে দেড় ঘণ্টা

  •    
  • ২১ মার্চ, ২০২২ ০৯:৩৫

বাসের হেলপার আসলাম হাঁক দিয়ে বলেন, ‘শেওড়াপাড়া-কাজীপাড়া কেউ থাকলে নাইমা যান। খামাখা বইসা সময় নষ্ট কইরেন না। সকালের ট্রিপে জ্যাম পার অইতে দুই ঘণ্টা লাগছে, এখন কতক্ষণ লাগে কওন যায় না।’

রোববার দুপুর। রাজধানীর আগারগাঁও থেকে যাত্রী নিয়ে মিরপুর-১০ নম্বরের দিকে যাচ্ছিল ‘খাজাবাবা’ পরিবহনের বাস। উঁচু-নিচু রাস্তায় পেছনে বসে অনবরত ঝাঁকি খাচ্ছিলেন যাত্রীরা।

যাত্রীদের একজন মিরপুর-১১-এর বাসিন্দা ওসমান গনি। রাস্তার অবস্থা দেখে কৌতুক করে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় শখ ছিল রোলার কোস্টারে চড়মু। গত তিন বছরে সে শখ পূরণ হইছে। বাসের ভাড়া দিয়াই রোলার কোস্টারের স্বাদ পাওয়া যায়। বাড়তি টাকা লাগে না।’

পাশে বসা মিরপুর-১০-এর যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কবে যে আল্লায় এই জ্যাম থেকে উদ্ধার করবে। ভালো, আজ তেমন জ্যাম নেই।’

আনোয়ারের কথা শেষ হতে না হতেই দাঁড়িয়ে পড়ে বাস। বাসের হেলপার আসলাম হাঁক দিয়ে বলেন, ‘শেওড়াপাড়া-কাজীপাড়া কেউ থাকলে নাইমা যান। খামাখা বইসা সময় নষ্ট কইরেন না। সকালের ট্রিপে জ্যাম পার অইতে দুই ঘণ্টা লাগছে, এখন কতক্ষণ লাগে কওন যায় না।’

হেলপার আসলাম জানান, মেট্রোরেলের কাজের জন্য রাস্তা একপাশ বন্ধ। এতে বাকি পথ যেতে অনেক সময় লাগবে। ইঞ্চি-ইঞ্চি করে কচ্ছপগতিতে বাসটি কাজীপাড়া বাস স্টপেজ অতিক্রম করতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে।

শেওড়াপাড়া থেকে কাজীপাড়া হয়ে মিরপুর-১০ পর্যন্ত রাস্তার এক লেনে চলে বাস ও অন্যান্য যানবাহন। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এতে অর্ধেক রাস্তাই বন্ধ হয়ে যায়। এখানে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। অনেক জায়গায় রাস্তা এমন সরু যে, বাস চলাচল বেশ কষ্টসাধ্য।

কিছু জায়গায় ফুটপাত পর্যন্ত কেটে রাখা হয়েছে, ফলে বাস চলাচলের রাস্তায় হেঁটে চলাচল করেছে সাধারণ মানুষ।

যানজটের ভোগান্তি মূলত মেট্রোরেলের শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়া স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় বেশি। শেওড়াপাড়ায় সুপার শপ ‘স্বপ্নে’র সামনের রাস্তায় ইট, পাথর, সুরকি, বালি রেখে রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে।

একটু সামনে গেলে স্টেশনের নিচে ক্রেন নিয়ে মালামাল উঠানামা করছে। এক পাশে কোনো রকমে দুটি বাস পার হওয়ার রাস্তা রয়েছে। সামনে গেল রাস্তা আরও সরু হয়ে পড়ে। প্রায় আধাকিলোমিটার রাস্তা খুঁড়ে বসানো হচ্ছে সুয়্যারেজ লাইন। এরপর আবার কাজীপাড়া স্টেশনের কাজের জন্যও রাস্তা অর্ধেক আটকে আছে।

স্যুয়ারেজ লাইনের এক কর্মী বলেন, ‘মেট্রোর কাজ শেষ ওইলে এমনিতেই রাস্তা ঠিক করতে অইত। তাই এ সুযোগ স্যুয়ারেল লাইন বসানোর কাম শুরু হইছে। লাইন আগের চাইতে বড় অইব। যাতে আগামী কয়েক বছরে আর হাত দেওয়া না লাগে।’

বাসযাত্রী আনোয়ার বলেন, ‘মেয়ে মনিপুরী স্কুলে পড়ে। প্রতিদিন নিয়ে যেতে হয়। সকাল থেকেই শুরু হয় ভোগান্তির যাত্রা। অনেক দিন রিকশা থেকে নেমে হেঁটে যেতে হয়েছে।

‘স্কুল-কলেজ শুরুর পর থেকে যানজটের ভোগান্তিও বেড়েছে। তবে রোববার মিরপুর এলাকার শপিং মলসহ অনেক দোকনাপাট বন্ধ থাকে। তাই এদিন ভোগান্তিও কিছুটা কম হয়।’

ব্যবসায়ও মন্দা

মেট্রোরেলের কাজ চলার পর থেকে ধূলাবালি ও ভোগান্তির এলাকা হয়ে উঠেছে মিরপুর। ফল ভোগ করছেন ব্যবসায়ীরাও। দোকানের সামনেই নির্মাণযজ্ঞ চলায় ক্রেতারা ঠিকমতো দোকানে প্রবেশ করতে পারে না। এমনি অনেকের দোকান নির্মাণসামগ্রীর আড়ালে পড়ে দেখাও যায় না।

শেওড়াপাড়ার মুসলিস সুইটসের বিক্রেতা মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘গত ৪ বছর ধরে কী যে কষ্টে আছি, বুঝাতে পারমু না ভাই। কাস্টমার নাই বললেই চলে। দিনে ৫-৬ বার দোকান ঝাড়ামোছায় সময় চলে যায়। জিনিসপত্র মুছেও রাখা যায় না। একটু দেরি হলেই মনে হয় কত যুগ ধরে কেউ পরিষ্কার করেনি।’

এখানকার বাসিন্দারা বলছেন, সামনে বর্ষার মৌসুম। এখনই যদি সড়কগুলো সংস্কার করা না হয় তাহলে বর্ষায় আরও বেশি গর্ত হয়ে যাবে। এতে এ সড়ক হয়ে উঠবে আরও ঝুঁকিপূর্ণ।

স্থানীয় বাসিন্দা আশিকুর রহমান বলেন, ‘এখন তো না হয় জ্যামে পড়লে মানুষ গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা হেঁটে পার হতে পারে। বর্ষায় সে অবস্থাও থাকে না। উঁচু-নিচু রাস্তায় পানি জমে থাকে। হাঁটার অবস্থাও থাকে না।

‘জমা পানিতে বাস চলাই কষ্টকর। এর চেয়ে ছোট গাড়ি হলে বন্ধ হয়ে যায়। তখন আরও বড় জ্যাম লাগে। আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ পর্যন্ত বন্ধ থাকে। পানি, কাঁদা, গর্ত ও যানজটে বিশ্রী অবস্থা দাঁড়ায়।

ভোগান্তির শেষ কবে

চলতি বছরের মধ্যেই চালু হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল, যা এমআরটি-৬ নামে পরিচিত। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের এই রুটে প্রথম পর্যায়ে চালু হবে উত্তরা তৃতীয় পর্ব হতে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার। এ অংশের কাজ ৯০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। আর পুরো প্রকল্পের কাজ হয়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি।

মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) বলছে, উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৯টি স্টেশন নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পরিষেবা স্থানান্তর, ভায়াডাক্টের উপর প্যারাপেট ওয়াল স্থাপন, সব স্টেশনের সাব- স্ট্রাকচার, কনকোর্স ছাদ, প্লাটফর্ম ছাদ এবং স্টিল রুফ স্ট্রাকচার নির্মাণ শেষ হয়েছে। ৯টি স্টেশনের মধ্যে উত্তরা ছাড়া বাকি ৮টির রুফশিট স্থাপন শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হবে মেট্রোরেল।

শেওড়াপাড়া স্টেশনের নিচে দায়িত্ব পালন করা ফোরম্যান মো. আলম বলেন, ‘এখানে লিফট বসানোর জন্য অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য আমাদের তাগিদ দেয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের আগেই এ স্টেশনের কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর