ঘোষণা অনুযায়ী, পাঁচ দিনের জন্য অনলাইনে টিকিট সরবরাহ বন্ধ আছে। এ অবস্থায় হাতে লিখে ট্রেনের টিকিট সরবরাহ করছে রেলওয়ে স্টেশনগুলো।
স্বশরীরে টিকিট নেয়ার প্রথম দিন রোববার তাই চরম যাত্রী-দুর্ভোগ দেখা গেছে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে। টিকিটপ্রত্যাশীদের অনেকেই সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পেয়েছেন দুপুরে।
টিকিট কাটাকে কেন্দ্র করে এদিন যাত্রীদের সঙ্গে রেলকর্মীদের বাগবিতণ্ডাও হয়েছে। রেলওয়ে-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত যাত্রীদের কাউন্টার থেকেই টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিটের জন্য সকাল ৮টায় শতাধিক মানুষের একটি লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সিয়াম হোসেন। শুরু হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত তিনি টিকিট পেলেন বেলা সোয়া ১টায়।
সিয়াম বলেন, ‘পুরো সময়েই বিশৃঙ্খলা ছিল। কেউ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন, কেউ আবার লাইন ভেঙে কাউন্টারে যাচ্ছেন। এসব নিয়ে মাঝেমধ্যেই চলছিল হইচই। হাতে লেখা টিকিট দিতে সময় বেশি লাগছে। তা ছাড়া টিকিটে দেয়া তথ্যেও অনেক ভুল। কখন ট্রেন ছাড়াবে সেই তথ্য লেখা নেই টিকিটে।’
সাড়ে ৫ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ঢাকায় যাওয়ার টিকিট কেটেছেন সিফাত উল্লাহ। কেবিনের দুটি টিকিটের জন্য তার কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ১ হাজার ৯০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি টিকিটের দাম ৯৫০ টাকা। কিন্তু তাকে দেয়া টিকিটে ভাড়া লেখা আছে ৩৪৩ টাকা। কখন ট্রেন ছাড়বে সেই সময় লেখা নেই। লেখা নেই টিকিট ইস্যুর তারিখও।
রোববার বেলা ১১টার দিকে সবচেয়ে বড় লাইনটি দেখা গেছে এসি টিকিটের জন্য। টিকিটপ্রত্যাশীরা অভিযোগ করেন, কাউন্টারে বুকিং সহকারীরা ধীরগতিতে টিকিট দিচ্ছেন। কোনো কোনো বুকিং সহকারী কিছুক্ষণ পর পরই কাউন্টার থেকে অন্য কোথাও চলে যাচ্ছেন। কাউন্টার ফাঁকা পড়ে থাকছে। ফলে টিকিট পেতে সময় লাগছে বেশি।
লাইনে না দাঁড়িয়েও টিকিট নিতে দেখে প্রতিবাদ করেছিলেন নাজমুল হক নামে এক যুবক। এ ঘটনায় শেষ পর্যন্ত স্টেশনে থাকা রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্যের সঙ্গে তার হাতাহাতিও হয়েছে। ঘটনার পর আরএনবি সদস্যরা নাজমুলকে ধরে নিয়ে যান তাদের অফিসে। পরে মুচলেকা আদায়ের পর নাজমুলকে ছাড়া হয়।
নাজমুলের দাবি, অনেকে লাইনে না দাঁড়িয়েও টিকিট নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়।
এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘অনলাইন থেকে সাময়িক সময়ের জন্য আমাদের যেহেতু অফলাইনে ফিরতে হয়েছে, সে জন্য ছন্দপতন হয়েছে। এতে যাত্রীদের বিড়ম্বনা হচ্ছে এটাও আমরা জানি। এ জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে এই কষ্টটা যাতে কম হয়, সে জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা আছে। আমরা বাড়তি লোক দিয়ে টিকিট বিক্রি করছি। কোন কাউন্টারে কোন ট্রেনের কবেকার টিকিট দেয়া হবে, এসবও ঘোষণা দেয়া হয়েছে।’
তিনি জানান, রেলওয়ের কোনো কর্মীর কারণে যেন যাত্রীদের হয়রানি না হয় সেই বিষয়টিও মনিটর করা হচ্ছে। রোববার সকাল থেকে চার কর্মকর্তা বিষয়টি মনিটর করেছেন। ২৬ মার্চ থেকে আবারও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় টিকিট বিক্রি শুরু হবে।
এর আগে গত ১৪ মার্চ কারিগরি কিছু কাজের জন্য আগামী ২১ থেকে ২৫ মার্চ পাঁচ দিন অনলাইনে টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।