দেশের উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অবদান রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তিনি বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আপনাদের (বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি) রয়েছে বিশাল অবদান। করোনাকালে যেভাবে অনলাইনে পাঠদান থেকে শুরু করে পরীক্ষা, ভর্তিসহ সব কাজ আপনারা করেছেন, সে জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আপনারা কাজটি করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার বিকেলে রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটন ঢাকায় আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সভায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘আজকে আমরা যে বাংলাদেশে আছি, সে বাংলাদেশ জাতির পিতার দেখানো পথেই পরিচালিত হচ্ছে। জাতির পিতার মাধ্যমে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীনতা, তিনি আমাদের দেখিয়েছেন মুক্তির পথ। যখনই এই দেশে মুক্তির যাত্রা শুরু হয়েছিল, তখনই তাকে (জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) আমাদের কাছ থেকে নৃশংসভাবে কেড়ে নেয়া হয়।’
বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তিনি একটি পরাধীন রাষ্ট্রকে, নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন করেছিলেন। তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছরে অনেক অসাধ্য সাধন করেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলেন, তিনি কোনো কাজ শুরু করতে গেলে এমন কোনো কাজ খুঁজে পান না যা জাতির পিতা শুরু করে দিয়ে যাননি।’
একই ধরনের মন্তব্য করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এখান থেকে আমরা দক্ষ জনসম্পদ পাচ্ছি। ২০৪০ সালে আমরা যে উন্নত রাষ্ট্রের বিনির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি, সেখানে আপনারাও কাজ করে যাচ্ছেন। এ জন্য অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের কথা উল্লেখ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় তিনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) অ্যাপ্লাইড নলেজের ওপর জোর দিয়েছিলেন। যেটিকে আমরা এখন বলছি আউটকাম এডুকেশন।’
শিক্ষার্থীদের জীবনসংশ্লিষ্ট শিক্ষার সুযোগ প্রদানের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান মহিবুল হাসান চৌধুরী।
বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বাস্তবসম্মত উচ্চশিক্ষার প্রতি জোর দিয়েছি। প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুধু অনার্স-মাস্টার্স না পড়িয়ে অনেকগুলো শর্ট কোর্স প্রবর্তন করতে হবে।’
সভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র নেতা, যিনি রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান না হয়েও যা বলতেন তৎকালীন পূর্ববাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ তাই শুনতেন। তাই ব্রিটিশ পত্রিকাগুলো ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের সঙ্গে তুলনা করত।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সে সময় যা বলতেন তাই মানত জনগণ। আর একটা কথা বলতেই হবে, বঙ্গবন্ধু হলেন সেই নেতা, যিনি একটি দলকে তিলে তিলে গড়ে একটি জাতিকে স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছেন।’
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণা করে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত গুণের কথা বর্ণনা করার সাধ্য বা জ্ঞান কোনোটাই আমার নাই। বঙ্গবন্ধু বাড়িতে আসলে উঠানে বসতেন। এলাকার সবাই আসত। তার পাশে বাচ্চারা এসে ভিড় করত। তিনি বাচ্চাদের অনেক ভালোবাসতেন। এ জন্যই কিন্তু ১৭ মার্চ শিশু দিবস পালন করা হয়।’
‘আজ বঙ্গবন্ধু নেই। বঙ্গবন্ধুরে ডালিম (বঙ্গবন্ধুর খুনি শরিফুল হক ডালিম) মারছে। ডালিমের শাশুড়ি কিন্তু ওই (ধানমন্ডির ৩২ নম্বর) বাড়িতে থাকত। সে কিন্তু তখন আমার বিয়ের ডালা নিয়ে গেছিল। এখনও কিন্তু এরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই সাবধান হতে হবে।’
এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে আনুপাতিক হারে সদস্য নিয়োগ দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে আনুপাতিক হারে সদস্য নিয়োগ দেয়া উচিত। এতে দেশের উচ্চ শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘বাঙালির কোনো জাতিরাষ্ট্র ছিল না। সেই জাতিরাষ্ট্র দিয়েছেন একজন, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ কারণেই বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।’
বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মতো বিশাল ব্যক্তিত্বকে এই স্বল্প পরিসরে মূল্যায়ন করা সম্ভব না। বঙ্গবন্ধু বরাবর আমার কাছে বিস্ময়। নিজ গুণে তিনি নিজেকে বিশ্বনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। অথচ তিনি জীবিত ছিলেন মাত্র ৫৫ বছর।’
অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রত্যয়ে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। রূপকল্প ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে আমরা আজকের আলোচনা সভার মতো গুরুত্বপূর্ণ সব অনুষ্ঠান, সভা এবং কর্মকাণ্ডের পাশে থাকার চেষ্টা করি। ভবিষ্যতেও শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পাশে থাকার কার্যক্রম অব্যহত রাখব।’
অনুষ্ঠানে ‘আমার দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতায় তিন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির আচিয়া খাজা, দ্বিতীয় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাজমুস সাকিব এবং তৃতীয় ফারইস্ট ইউনিভার্সিটির মারুফ হাসান।