ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সরকারের কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এসএমই ফাউন্ডেশন। তবে করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে আরও ঋণ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। এজন্য এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রোববার ৬ষ্ঠ ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মিলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে সম্মিলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী সাখাওয়াত হোসেন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদ সদস্য হাসিনা নেওয়াজ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কারণ পণ্য আন্তর্জাতিক মানের না হলে আমাদের উদ্যোক্তারা পিছিয়ে যাবেন। তাদের উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান বাড়াতে হবে। তবে ব্যবসায় লাভ কম করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পাইকারি মার্কেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যে দামে বিক্রি হয় খুচরা বাজারে সেটা ১০ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়। যে কারণে আমরা ক্রেতা ধরে রাখতে পারি না।’
কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘আমাদের দেশে সুবিধাভোগীরা সব ভোগ করছে। ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা নিয়ে শোধ করছে না। সুদ মওকুফের আবেদন করছে তারা৷ রাঘব-বোয়ালদের ঋণের সুদ মওকুফ করা হচ্ছে। আর ক্ষুদ্র খাতের উদ্যোক্তারা অবহেলিত রয়ে গেছে৷ সামনে বাজেট। এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাজেটে এ খাতে যেন বরাদ্দ থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।’
যারা ব্যাংকের টাকা আত্মসাত করছে তারা প্রণোদনার টাকা পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘সুবিধাভোগীরা এসব টাকা পেয়েছে, বিদেশে টাকা পাচার করেছে। আর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বঞ্চিত।’
উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পণ্যের গুণগত মান বাড়াতে হবে। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে যেন বিদেশেও রপ্তানি করা যায় সে লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রপ্তানি হাউজ করতে হবে। কারণ উদ্যোক্তাদের পক্ষে সরাসরি রপ্তানি সম্ভব না। এজন্য ফাউন্ডেশন রপ্তানি হাউজ করলে উদ্যোক্তাদের পণ্য রপ্তানি করা যাবে।’
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং নারী-উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্য দেশের প্রথম সারির ক্রেতাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতেই নিয়মিত এ ধরনের ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মিলন আয়োজন করে আসছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন বলেন, ‘পুঁজি ও পণ্যের বাজার সংযোগের অভাবে পিছিয়ে পড়েন দেশের এসএমই উদ্যোক্তারা। সেই সঙ্গে তাদের পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করাও বড় চ্যালেঞ্জ। এসএমই উদ্যোক্তাদের এসব সংকট সমাধানে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে প্রায় ১০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং প্রায় ৬৮ লাখ কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার ৭ দশমিক ২১ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ৩৭ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তা পুঁজি সংকটের কথা বললেও ২০ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তা পণ্যের বাজারজাতকরণকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করছেন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৬০ জন নারী-উদ্যোক্তা সম্মিলনে বুটিক, পাটজাতপণ্য, চামড়াজাত, হস্তশিল্প, জুয়েলারি, ইত্যাদি প্রদর্শন করেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত গত পাঁচটি ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মিলনে প্রায় ২০০ জন নারী-উদ্যোক্তা পণ্য প্রদর্শন করেন। প্রায় ১৬০ জন নারী-উদ্যোক্তা নিয়মিত দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পণ্য সরবরাহ করছেন।
মেলায় ‘এসএমই পণ্যের মানোন্নয়ন এবং বাজার সংযোগ’ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।