র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর গত তিন মাসে এই এলিট ফোর্সের কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।
ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে অষ্টম ইউএস-বাংলাদেশ অংশীদারত্ব সংলাপে অংশগ্রহণ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড এ তথ্য জানান।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হয় এ সংলাপ।
সংলাপে অংশ নিতে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান। সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে বাহিনীটির তিন মাসের অ্যাক্টিভিটিজ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। এতে গত তিন মাসে বাহিনীটির কার্যক্রমে ইতিবাচক দিক উঠে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আরো আলোচনা করব। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া ইউক্রেনে যে আগ্রাসন চালিয়েছে, তাতে বিশ্বে আইনের শাসন, মানবতা ও গণতন্ত্র হুমকিতে পড়েছে। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে এই গণতন্ত্র ও মানবতা রক্ষার লড়াইয়ে বাংলাদেশকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তার উদ্যোগ হিসেবে এই অঞ্চলের উদীয়মান অর্থনীতি বাংলাদেশকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কারণ এই উদ্যোগে সবই আছে।’
‘আমরা সামরিক সহায়তা সংক্রান্ত একটি খসড়া আজ বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছি। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ সব সময়ই উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর হয়। তাই এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরো কাজ করতে হবে।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘দুদেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ডোমেইনগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর আজ আমরা একটি খোলামেলা, বিস্তৃত এবং বেশ ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি।
‘এ বছরের অংশীদারত্ব সংলাপ দুটি কারণে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, আমরা দ্রুতই কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করব।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এই অংশীদারত্বের সংলাপটি প্রকৃতপক্ষে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে প্রথম এবং আসন্ন মাসগুলোতে নির্ধারিত সংলাপের একটি সিরিজের মধ্যেও প্রথম।
‘আমি মনে করি এই বৈঠকে উভয় পক্ষ পরস্পরকে আরও ভালভাবে বোঝা এবং কিছু বিষয়ে নিজ নিজ অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগটি নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, র্যাব ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর আরোপিত সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। এটা সন্ত্রাসবাদ ও আন্তর্জাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টাকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে তা আমরা ব্যাখ্যা করেছি। বাংলাদেশ সরকারও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছে যে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে আমরা উন্মুখ।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক চর্চা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার এবং ধর্মীয় সম্প্রীতির মতো বিষয়েও আমরা আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উপায় এবং ব্লু ইকোনমিতে সম্ভাব্য সহযোগিতা নিয়েও গভীর আলোচনা হয়েছে।
‘আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল সম্পর্কে মতবিনিময় করেছি। জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছি। বৈঠকে দুপক্ষই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে পারষ্পরিক সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে, জুনের শুরুতে অর্থনৈতিক অংশীদারী পরামর্শ এবং টিকফার পরবর্তী রাউন্ডে আরও আলোচনার জন্য আমরা উন্মুখ।’
সচিব মোমেন বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমি বলব যে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল খুশি ও সন্তুষ্ট।