আগামী ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে কানাডার টরন্টোতে পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরুর ঘোষণা রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দিলেও এখনই পুরোদমে বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু হচ্ছে না। উদ্বোধনী ফ্লাইটের পরে আরও অন্তত ১০ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমানকে।
বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, কানাডা কর্তৃপক্ষের সব নির্দেশনা পূরণ করে পুরোদমে ফ্লাইট চালু করতে অন্তত জুন পর্যন্ত সময় লাগবে।
গত শনিবার বিকেলে রুটটির উদ্বোধনী ফ্লাইটের টিকিট সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। স্বল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়ে এই ফ্লাইটটি ২৬ মার্চ রাত ১১টায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করবে এবং ২৭ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ৭টায় টরন্টোতে নামার কথা রয়েছে।
টিকিট উন্মুক্তের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় বেশিরভাগ টিকিট। এরপরই বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে যে উদ্বোধনী ফ্লাইটি সবার জন্য নয়, শুধু বিমান নির্ধারিত যাত্রীরাই এতে ভ্রমণ করতে পারবেন।
বিমানের ঢাকা-টরন্টো উদ্বোধনী ফ্লাইটের ওয়ানওয়ে এই টিকিটটির দাম ওয়েবসাইটে দেখানো হয় ৯০ হাজার ২৮০ টাকা। ছবি: সংগৃহীত
রোববার বেলা ১১টায় বিমানের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টরন্টোর উদ্বোধনী ফ্লাইটের টিকিট কাটতে গিয়ে দেখা যায় অবিক্রিত রয়েছে মাত্র একটি টিকিট। ওয়ানওয়ে এ টিকিটটির দাম ওয়েবসাইটে দেখানো হচ্ছিল ৯০ হাজার ২৮০ টাকা।
বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফ্লাইটটি পরীক্ষামূলক হওয়ায় সীমিত সংখ্যক যাত্রী এতে ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন। ফ্লাইটের টিকিট বিমান নির্ধারিত যাত্রীদের জন্য, এমন তথ্য নাকচ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টরন্টোর উদ্বোধনী ফ্লাইটটি সবার জন্যই উন্মুক্ত। এটি কোনো ভিআইপি ফ্লাইট নয়। যে কেউ টিকিট কেটে এই ফ্লাইটে যেতে পারবেন। হয়তো আসন সংখ্যা কম হতে পারে কিন্তু এটি সবার জন্য উন্মুক্ত।
‘এই রুটে ফ্লাইট শুরু করতে আমাদের কমিটমেন্ট ছিল সেটির জন্যই মার্চে এই ফ্লাইটটি করা হচ্ছে। ফিরতি ফ্লাইটের ক্ষেত্রে সেখান থেকে ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে টিকিট কাটা যাবে না তবে আমাদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে যে কেউ টিকিট কাটতে পারবেন।’
টরন্টো থেকে ফিরতি ফ্লাইট বিজি ৩০৬ আগামী ২৯ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা রয়েছে। এটি ৩০ মার্চ দুপুর সোয়া ১২টায় ঢাকায় অবতরণের কথা রয়েছে। রুটটিতে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান ব্যবহার করছে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ।
পুরোদমে বাণিজ্যিক ফ্লাইট কবে নাগাদ শুরু হতে পারে জানতে চাইলে বিমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘পুরোদমে বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু করতে কিছু ইন্টিপ্রেটেড সিস্টেমের কাজ এখনও চলমান, এগুলো শেষ হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।’
‘পুরোদমে বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু করতে জুন পর্যন্ত সময় লাগবে। আমরা বলেছি সব কাজ সম্পন্ন করতে মোট ১২ সপ্তাহ সময় লাগবে। এর মধ্যে ২ সপ্তাহ পেড়িয়েছে, কাজ আমরা চলমান রেখেছি। এই সময়ের মধ্যে সেখানে জিএসএ নিয়োগ দিতে হবে, সে কাজ আমরা চলমান রেখেছি। আশা করছি জুনে আমরা বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু করতে পারব।’
ঢাকা থেকে জাপানের নারিতা হয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং কানাডার টরন্টো হয়ে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে আকাশপথে যুক্ত হতে চেষ্টা বেশ কয়েক বছর ধরেই চালিয়ে আসছে বিমান। কিন্তু করোনার কারণে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
এই রুটটিতে বিমানের ফ্লাইট চলাচল পুরোদমে শুরু হলে এয়ারলাইনসটি তার বহরে থাকা দূরপাল্লার উড়োজাহাজগুলোর পূর্ন সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে সরাসরি টরন্টো যেতে সময় লাগে প্রায় ১৪ ঘণ্টা।
বিমানের বহরে লম্বা দূরত্বে উড়তে সক্ষম অন্তত ১০টি উড়োজাহাজ থাকলেও রুট না থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই সেগুলোর সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি বোয়িং সেভেন এইট সেভেন ও চারটি বোয়িং ট্রিপল সেভেন মডেলের উড়োজাহাজ। এর প্রত্যেকটি টানা ১৬ ঘণ্টার বেশি উড়তে সক্ষম।
লম্বা দূরত্বের মধ্যে বর্তমানে ফ্লাইট চালু রয়েছে শুধু লন্ডন রুটে। এ রুটে সরাসরি যেতে সময় লাগে প্রায় ১১ ঘণ্টা।
বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করা কোনো এয়ারলাইনসেরই ঢাকা থেকে সরাসরি টরন্টোতে ফ্লাইট নেই। বিমান আশা করছে, নারিতা ও টরন্টোতে ফ্লাইট শুরু করলে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্যএশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক আন্তর্জাতিক যাত্রী তারা পাবে।