বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভ্যাট প্রত্যাহারের পর তেলের দাম কত হওয়া উচিত

  •    
  • ১৯ মার্চ, ২০২২ ২১:১৭

ভোজ্যতেলের দাম কমাতে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে ৩০ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে দিয়েছে। অথচ চার দিন পেরিয়ে গেলেও তেলের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। শুল্ক বিভাগ হিসাব কষে দেখেছে, ভ্যাট প্রত্যাহারের পর ২২ টাকা পর্যন্ত খরচ কমে গেছে প্রতি লিটারে। ভোজ্যতেলের দাম কত হওয়া উচিত, এ নিয়ে রোববার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে সরকার।

কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে মাত্র ৫ শতাংশ বহাল রেখে ভোজ্যতেলের আমদানি, পরিশোধন ও ভোক্তাপর্যায়ে বিক্রিতে থাকা সব ধরনের ভ্যাট তুলে নিয়েছে সরকার। এতদিন ভোজ্যতেলের ওপর তিন স্তরে ৩৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য ছিল।

এ বিপুল ছাড়ের কারণে তেলের দাম প্রতি লিটারে ২২ টাকা কমে যাওয়ার কথা বলে মনে করছে শুল্ক বিভাগ, কেননা উৎপাদন পর্যায়ে ওই পরিমাণেই খরচ কমছে।

এ পরিস্থিতিতে ভ্যাট তুলে নেয়ার পর বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কত হওয়া উচিত, সেটি নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। আগামীকাল রোববার বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে ভোজ্যতেলের এই মূল্যনির্ধারণী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি এক প্রজ্ঞাপন জারি করে ভোজ্যতেলের (সয়াবিন ও পাম অয়েল) আমদানি, উৎপাদন ও ভোক্তা- তিন পর্যায়ে কর সুবিধা দেয়। এর মধ্যে আমদানিতে ১৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে উৎপাদন স্তরে ১৫ শতাংশ এবং খুচরা বা ভোক্তা স্তরে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ সুবিধা আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়।

এনবিআর হিসাব করে দেখেছে, ভ্যাটে ছাড় দেয়ার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত তেলের দাম ১ হাজার ৪৮০ ডলার ধরে শুল্কায়ন করলে আনুষঙ্গিক হিসাব বাদ দিয়ে দেশীয় বাজারে প্রতি লিটারে তেলের দাম ২২ টাকা কমার কথা।

এর আগে গত বছরের এপ্রিলে ৩ শতাংশ আগাম কর তুলে নেয়া হয়েছিল। ফলে সার্বিকভাবে এ পণ্যটির ওপর মোট ৩৩ শতাংশ কর প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এখন ভোজ্যতেলের ওপর আমদানি স্তরে শুধু ৫ শতাংশ ভ্যাট ছাড়া আর কোনো শুল্ক-কর নেই।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি ভোজ্যতেলের ওপর যে হারে ভ্যাট ছাড় দেয়া হয়েছে, তাতে সরকারের মোট রাজস্ব ক্ষতি হবে ২৫০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে ভ্যাট আদায় হয় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

এনবিআর হিসাব করে দেখেছে, ভ্যাটে ছাড় দেয়ার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত তেলের দাম ১ হাজার ৪৮০ ডলার ধরে শুল্কায়ন করলে আনুষঙ্গিক হিসাব বাদ দিয়ে দেশীয় বাজারে প্রতি লিটারে তেলের দাম ২২ টাকা কমার কথা।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে এখন যে তেল বিক্রি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তা কেনা হয় ১ হাজার ৪৮০ ডলারে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের কাঁচামালের দাম আরও বেড়ে গেছে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের দাম ১ হাজার ৮০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

রাজস্ব বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ভ্যাট ছাড়ের আগে মিল মালিকরা ডিলারের কাছে চালানে কত বিল করেছে, আর ছাড়ের পরে কত বিল করেছে তা পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। এটা করলে কে বেশি ফায়দা লুটছে তা পরিষ্কার বোঝা যাবে।

প্রশ্ন উঠেছে, ভোক্তাদের সাশ্রয়ী দামে তেল খাওয়াতে সরকার যে বিশাল অঙ্কের কর সুবিধা দিল, শেষ পর্যন্ত তার সুফল ভোক্তারা কি পাবে?

এনবিআরের সাবেক সদস্য আলী আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হলেও দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে শুল্ক-করে ছাড় দেয়া হয়। দুর্বল তদারকির কারণে অনেক ক্ষেত্রে এর লক্ষ্য পূরণ হয় না। মাঝখান থেকে মধ্যস্বত্বভোগীরা এর সুফল ভোগ করে।’

প্রশ্ন উঠেছে, ভোক্তাদের সাশ্রয়ী দামে তেল খাওয়াতে সরকার যে বিশাল অঙ্কের কর সুবিধা দিল, শেষ পর্যন্ত তার সুফল ভোক্তারা কি পাবে?

কোম্পানিগুলো অপরিশোধিত ভোজ্যতেল কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করার পর কারখানায় পরিশোধন করে তা বাজারজাত করে। বোতলজাত ও খোলা দুভাবে বাজারজাত করা হয়। তবে বেশির ভাগই বোতলজাত হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বাজার স্থিতিশীল করতে গত বছরের এপ্রিলে ভোজ্যতেল আমদানিতে অগ্রিম কর প্রত্যাহার করে নেয়ার পরও বাজারে দাম কমেনি। মিল মালিকরা দাবি করেছিলেন, এ পদক্ষেপে তাদের কোনো লাভ হয়নি। কারণ ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণের সঙ্গে অগ্রিম করের সম্পর্ক নেই। এটা আগে কেটে নেয়া হতো। এখন বছর শেষে আয়কর রিটার্নে সমন্বয় করা হবে। ফলে তাদের খরচ কমবে না।

ভোজ্যতেলের দাম ঠিক করে দিতে রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক বসছে।

অথচ রাজস্ব বোর্ড তখন বলেছিল, এতে মিল মালিকদের খরচ কমবে এবং সাশ্রয়ী দামে তেল কিনে খেতে পারবে জনগণ।

তখন তেলের দাম কমেনি, মাঝখান থেকে সরকারের ৭০ কোটি টাকা গচ্চা গেছে। এবারও সে রকম যাতে না হয়, সে জন্য সরকার বাড়তি উদ্যোগ নিচ্ছে।

ভোজ্যতেলের দাম ঠিক করে দিতে রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক বসছে। বৈঠকে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, সিটি গ্রুপ, মেঘনা, টিকে গ্রুপ, বসুন্ধরা ও এস আলম গ্রুপের মালিক-সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বেলা ৩টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

ইতোমধ্যে শবে বরাত পালিত হয়ে গেছে। আর দিন পনেরো পরই শুরু হচ্ছে রোজা। তখন বাজারে সব ধরনের তেলের চাহিদা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হবে। তখন কী দামে বিক্রি হবে বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন এবং পাম তেল, তা এখনই ঠিক করে দিতে চায় সরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈশ্বিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভোজ্যতেল নিয়ে সরকার খুবই সতর্ক। পণ্যমূল্য নির্ধারণে সরকার হস্তক্ষেপ না করলেও অত্যাবশ্যকীয় হিসেবে আগের ধারাবাহিকতায় এবারও ভোজ্যতেলের দাম বেঁধে দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ভ্যাট হ্রাসের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ট্যারিফ কমিশনকে এ বিষয়ে দাম ঠিক করে দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছি। তারা পণ্যটির স্থানীয় মজুত, খালাস পর্যায়ে মজুত এবং ইতোমধ্যে খোলা এলসির পরিমাণ ও বর্তমান বৈশ্বিক বাজারের দাম পর্যালোচনা করে একটি দাম নির্ধারণের সুপারিশ করবেন।

‘সেই সুপারিশকৃত দাম নিয়ে সব পক্ষ আলোচনা করে বৈঠকে সব ধরনের ভোজ্যতেলের একটি চূড়ান্ত দাম নির্ধারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি সেটি হয়, তাহলে বৈঠক শেষেই তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হতে পারে। আবার মতানৈক্য থাকলে এ বিষয়ে আরও একটি বৈঠকের প্রয়োজন হতে পারে।’

তেলের বাজার অস্থিরতার জন্য খুচরা ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করেন মৌলভীবাজার ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা। পাইকারি বাজারে দাম বাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খুচরা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির জন্য আমরা দায়ী হতে পারি না। বাজার তদারকিতে দুর্বলতা রয়েছে।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উৎপাদন ও ভোক্তাপর্যায়ে ভ্যাট তুলে নেয়া হয়েছে। আমি বিশ্বাসও করি, দেরিতে হলেও বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

তবে ৬ ফেব্রুয়ারি সরকার নির্ধারিত দাম বর্তমান বৈশ্বিক বাজারের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে জানায় ভোজ্যতেলের আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো।

প্রায় দেড় মাস ধরে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের কাঁচামালের দাম অব্যাহতভাবে বাড়ছে। সেই বাড়তি দামের সঙ্গে সমন্বয় করতে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন চলতি মাসের প্রথম দিকে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম ১৮০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে লিটারে ১৬৮ টাকায় যে তেল আমরা বিক্রি করছি, সেটির আন্তর্জাতিক বাজার ছিল টনপ্রতি ১ হাজার ৩০০ ডলার। আমরা প্রতি লিটার তেলের দাম ১৮০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলাম, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে গড় মূল্য ছিল ১ হাজার ৪২০ ডলারের। এখন ওই তেলের দাম ১ হাজার ৯০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। তেল আমদানি করে জাহাজ ভাড়া দিয়ে দেশে আনার পর আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। এরপর কোম্পানির মুনাফার বিষয় আছে। সব মিলিয়ে কী দাম পড়তে পারে সেটি ট্যারিফ কমিশন নিশ্চয়ই পর্যালোচনা করছে। তা ছাড়া দাম নির্ধারণের প্রশ্ন এলে সেটি সরকার নিজের মতো করে পর্যালোচনার পর খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। তাই বৈঠকে কী হয় দেখি।’

তেলের বাজার অস্থিরতার জন্য খুচরা ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করেন মৌলভীবাজার ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা। পাইকারি বাজারে দাম বাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খুচরা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির জন্য আমরা দায়ী হতে পারি না। বাজার তদারকিতে দুর্বলতা রয়েছে।’

ভ্যাট প্রত্যাহারের পর এর প্রভাব পড়েনি বাজারে এখনও। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের এমআর ট্রেডার্সের মো. সেলিম শনিবার নিউজবাংলাকে বলেন, খুচরা বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সোয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৮ টাকায়। আর পাঁচ লিটারের ৭৯০ টাকা।

ভ্যাট কমানোর পর বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেন কমেনি আমরা জানতে চাই।’

মিল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী তেল দিচ্ছে না তারা। ফলে বাজারে তেলের সংকট চলছে।’

বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের বাজার প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টন। এর মধ্যে রমজান মাসেই চাহিদা প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, স্থানীয় উৎপাদন প্রায় দুই লাখ টন। বাকি প্রায় ১৮ লাখ টন আমদানি করে ভোক্তার চাহিদা পূরণ করতে হয়।

এ বিভাগের আরো খবর