করোনাকালীন কম মূল্যে সাধারণ মানুষকে পণ্য দিয়েছিল সরকার। সে সময় টিসিবির মাধ্যমে কয়েকটি পণ্য কম মূল্যে দিতে যে ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, সেখানে নাম ছিল মাইশা এন্টারপ্রাইজের। টিসিবির পণ্য নিজের গুদামে মজুতের অভিযোগে মাইশা এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুর রহমানকে জরিমানা করেছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত। এবার সেই প্রতিষ্ঠানকে আবারও টিসিবির পণ্য বিক্রিতে ডিলার নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রোববার থেকে দেশে কোটি মানুষকে দুই দফায় টিসিবির মাধ্যমে কম মূল্যে নির্দিষ্ট কিছু নিত্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করছে সরকার।
সেই তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৮৪ হাজার কার্ডের বিপরীতে টিসিবির পণ্য বিক্রি করতে ১৬ ডিলার নিয়োগ করেছে জেলা প্রশাসন।
প্রশাসনের সেই তালিকা নিয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম। রোববার জেলা শহরের লোকনাথ দীঘির পাড়ে টিসিবি পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে।
জেলা প্রশাসকের তালিকা ধরে খোঁজ নিয়েছে নিউজবাংলা। সেখানে ১৬ ডিলারের মধ্যে অনিয়ম করা মাইশা এন্টারপ্রাইজ ছাড়াও তিনটি ডিলারশিপের বিপরীতে একটি ফোন নম্বর দেয়া হয়েছে।
মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স, মেসার্স মদিনা ট্রেডার্স ও মেসার্স একতা ট্রেডার্সে একই ফোন নম্বর পাওয়া গেছে।
টিসিবির ডিলার নিয়োগ ও কম মূল্যে পণ্য দেয়ার কার্যক্রম সম্পর্কে জানাতে মতবিনিময় করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক।
নিউজবাংলার প্রতিবেদক ওই নম্বরে কথা বলে জানার চেষ্টা করেন ডিলারদের সম্পর্কে। ফোন নম্বরটিতে কল করলে তা রিসিভ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আলী আজম ভূইয়া।
তার প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্য আরও দুটি প্রতিষ্ঠানে কেন তার নম্বর দেয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু মেসার্স মদিনা ট্রেডার্সের মালিক। বাকি দুটিতে কীভাবে আমার নম্বর এলো আমার জানা নেই।’
তালিকায় থাকা মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের লাইসেন্স রয়েছে এলেম খাঁ নামের এক ব্যক্তির নামে। তিনি সদর উপজেলার নাটাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।
আবার মেসার্স একতা ট্রেডার্সেরও মালিক হিসেবে পাওয়া গেছে সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের বোরহান উদ্দিন সোহাগের নাম। তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
বিসমিল্লাহ ও একতা ট্রেডার্সের নামে একই নম্বর কেন জানতে চাইলে তারা জানান, আলী আজমের নম্বর তাদের ডিলারশিপে কীভাবে গেল তা জানেন না তারা।
তালিকায় থাকা ডিলার প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকির ট্রেডার্সে থাকা ফোন নম্বরে কল দিলে তা রিসিভ করেন এক নারী।
তিনি নিজের পরিচয় দেন গাজীপুরের বাসিন্দা হিসেবে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নম্বরটিতে অনেকেই ফোন করছে। কিন্তু যে কারণে ফোন দেয় সে ব্যাপারে আমাদের কোনো হাত নেই। আমাদের নম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কীভাবে গেল, সেটি নিয়ে আমিও ভাবনায়। আমি বিরক্ত।’
আগে একবার অনিয়ম করে জরিমানার শিকার প্রতিষ্ঠান আবারও কেন টিসিবির ডিলারশিপেসহ তালিকায় অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম বলেন, ‘আমি নতুন হওয়ায় মাইশা এন্টারপ্রাইজের দুর্নীতির সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। এ ব্যাপারে আমি ব্যবস্থা নেব। তা ছাড়া তিন ডিলারশিপ প্রতিষ্ঠানে একই নম্বর কীভাবে এলো সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।’
জেলা প্রশাসন জানায়, সারা দেশে এক কোটি উপকারভোগীর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় দুবারে ৮৪ হাজার ৩৮৭টি পরিবার রমজান উপলক্ষে টিসিবির পণ্য পাবে। প্রথম দিন রোববার ৯ উপজেলায় ২৯ হাজার ৭১৬ জনের মাঝে পণ্য বিক্রয় করা হবে।
তাদের মধ্যে আখাউড়ায় ২ হাজার, বাঞ্ছারামপুরে ৪ হাজার, বিজয়নগরে ২ হাজার ৫৮১, কসবায় ৩ হাজার, নাসিরনগরে ৩ হাজার ৬০০, সরাইল ৬৩৯, আশুগঞ্জে ৮৫০, নবীনগরে ৪ হাজার ৮৭৬ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে ৮ হাজার ১৭০ জন এ পণ্য কিনতে পারবেন।
প্রত্যেকেই ৫৫ টাকা দরে দুই কেজি চিনি, ৬৫ টাকা দরে দুই কেজি মসুর ডাল, ১১০ টাকা দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল পাবেন।