দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে আমির হামজার নাম কীভাবে এলো তা খতিয়ে দেখছে সরকার।
এ ঘটনায় প্রশাসনের কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান আ ক ম মোজাম্মেল।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারা ভুল তথ্য সরবরাহ করেছে তাদের খুঁজে বের করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারী এমনটা করে থাকে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘কোনো তথ্য যাচাই না করে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, তা আমরা খুঁজে বের করব এবং ব্যবস্থা নেব। আমরা পুরো বিষয়টিই খতিয়ে দেখছি কীভাবে এ ঘটনাটি ঘটল।’
নানা সমালোচনার পর গত শুক্রবার স্বাধীনতা পুরস্কারের সাহিত্য বিভাগ থেকে আমির হামজার নাম বাদ দিয়ে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নতুন তালিকায় সাহিত্যে অন্য কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গত ১৫ মার্চ এ বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করে সরকার। এতে সাহিত্যে অবদান রাখায় মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পান আমির হামজা।
আমির হামজার নাম ঘোষণার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। প্রথম দিকে বাংলা সাহিত্যে তার অবদান নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। একপর্যায়ে হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়।
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরিশাট পূর্ব পাড়ায় ১৯৭৮ সালে প্রতিপক্ষের হামলায় শাহাদত ফকির নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার মামলায় দণ্ড পান আমির হামজা। হত্যা মামলার প্রায় সাত বছর পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়ে কারাগারে যান তিনি। এরপর ১৯৯১ সালে দণ্ড মওকুফ হলে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।
২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ৮৭ বছর বয়সে মারা যান আমির হামজা। তার এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা তিনটি। ‘বাঘের থাবা’, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ ও ‘একুশের পাঁচালি’। তিনটি গ্রন্থই ‘অন্যপ্রকাশ’ থেকে মুদ্রিত। তার অপর দুটি কাব্যগ্রন্থ ‘কাব্যরাণী’ ও ‘ইকরা’ প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি আমির হামজা। মুক্তিযুদ্ধে রাইফেলের পাশাপাশি ধরেছিলেন কলমও।
কবির মেজো ছেলে মো. আসাদুজ্জামান বাংলাদেশ সরকারের একজন উপসচিব। বর্তমানে তিনি খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। বাবার পুরস্কারপ্রাপ্তির পেছনে আসাদুজ্জামানের তৎপরতার খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে।
এর আগে ২০২০ সালেও সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক হয়। ওই বছর এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ নামের এক ব্যক্তিকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। পরে নানা সমালোচনায় তার পুরস্কারও বাতিল করা হয়।
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছরের স্বাধীনতা দিবসে (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়। ৫ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেট মানের ৫০ গ্রামের স্বর্ণপদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেয়া হয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে।