সড়ক, মহাসড়ক ও স্থাপনা নির্মাণের জন্য আবাদি জমি বা জমির টপসয়েল কেটে ভাটাগুলো তৈরি করছে ইট। এতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ভাটার ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
এসব কারণে ২০২৪ সালের মধ্যে গ্রামীণ সড়কে বিটুমিনাস কার্পেটিং এবং ইটের বদলে শতভাগ ইউনি ব্লক ব্যবহার করতে চায় সরকার। এই ইউনি ব্লক তৈরিতে পাথর, সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার করা হয়। এটি দিয়ে নির্মিত সড়ক দেখতেও সুন্দর।
এবার প্রথমবারের মতো ফেনীতে পরিবেশবান্ধব ইউনি ব্লক দিয়ে সড়ক তৈরি করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। শুরুতে জেলায় তিনটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। বর্তমানে পরশুরামের কোলাপাড়া-সাহাপাড়া এলাকায় একটি সড়কের কাজ চলছে। এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কের কাজ শুরু হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।
স্থানীয়দের আশা, পরিবেশবান্ধব ইউনি ব্লকের ব্যবহার বাড়লে ইটের ব্যবহার বন্ধ হবে।
ফেনীর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী জানান, বিটুমিনাস দিয়ে সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয় প্রায় ৭০ লাখ টাকা। ইউনি ব্লক দিয়ে সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হচ্ছে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা। প্রতি তিন বছরে বিটুমিনাস সড়ক মেইনটেনেন্স খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। তবে ইউনি ব্লকে খরচ হবে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, ‘সরকার এ ধরনের ইট দিয়ে সড়ক এবং সরকারি বাসভবন নির্মাণের ওপর জোর দিয়েছে। এ কারণে এ বছর ইউনি ব্লক দিয়ে তিনটি সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। সাধারণ ইটের চাপ নেয়ার ক্ষমতা ১৭ এমপিএ হলেও ইউনি ব্লকের ৩৫ এমপিএ চাপ নেয়ার ক্ষমতা আছে।’
হাসান আলী বলেন, ‘বিটুমিনাস কার্পেটিং করতে পিচ পোড়াতে হয়। এতে পরিবেশের অনেক ক্ষতি হয়। এ ছাড়া বর্ষায় বিটুমিনের কাজ করা যায় না। তবে ইউনি ব্লক দিয়ে বর্ষায়ও কাজ করা যাচ্ছে। বৃষ্টিতে বা জলাবদ্ধতায় বিটুমিনের সড়ক নষ্ট হলেও ইউনি ব্লক দিয়ে তৈরি সড়ক নষ্ট হবে না। ইউনি ব্লক দিয়ে সড়ক নির্মাণ বা সংস্কারের পদ্ধতিও অনেক সহজ।’
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘জীবনে এমন সড়ক দেখিনি। সড়কের দুই পাশে লাল রঙের ব্লক আর মাঝখানে সাদা রঙের ব্লক দেয়ায় খুবই সুন্দর লাগছে দেখতে। বিভিন্ন এলাকার লোকজন এই সড়কটি দেখতে আসে।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ট্রাস্ট করপোরেশনের কর্ণধার মোস্তাফিজুর রহমান মামুন বলেন, ‘কাজটি নতুন হওয়ায় অনেক বেগ পেতে হয়েছে। ইউনি ব্লক ফেনীতে স্থানীয়ভাবে তৈরি হয় না। এগুলো নারায়ণগঞ্জ থেকে আনতে হয়েছে। ফলে কিছুটা ঝামেলা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন এবং সরবরাহ করা গেলে ভালো হতো।’