কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় অপরিকল্পিতভাবে একটি বক্স কালভার্ট তৈরি করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। বাড়ির উঠান ঘেঁষে কালভার্টটি তৈরিতে কোনো সুবিধাই পাবেন না এলাকার লোকজন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা কালভার্টটি নির্মাণের আগে স্থান পরিবর্তনের আবেদন করলেও তা শোনা হয়নি। পরে বাড়ির উঠান লাগোয়া বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়।
ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কচাকাটা থানা থেকে মুড়িয়ারহাটগামী রাস্তার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের লুছনি গ্রামে এই কালভার্ট।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দে ৯ মিটার (২৭ ফুট) দৈর্ঘ্যের বক্স কালভার্টটির কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। গত বছর জুনে নির্মাণ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয়রা জানান, কাজ শুরুর আগেই ওই কালভার্টের উত্তর দিকে নিজেদের জমিতে মাটি ভরাট করে বসতঘর তোলেন ফজর আলী, নাসির উদ্দিন ও লাল চান মিয়া। এতে সেখানে পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। পরে পাশের জমিতে নালা কেটে পানি নামার ব্যবস্থা করে দিলে পরে সেটিও বন্ধ করে বাড়ি তৈরি করে জমির মালিক আব্দুল খালেক।
এতে কালভার্টটির মুখ পুরো বন্ধ হয়ে যায়।
বাড়ি নির্মাণের পর কালভার্টের কাজ শুরু করলে সেটি আরও পূর্ব দিকে সরিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করলেও সে সময় গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ বাড়ির মালিকদের।
বাড়ির মালিকদের একজন ফজর আলী বলেন, ‘২০১৭ সালের বন্যায় আমাদের বাড়ি দুধকুমার নদের ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। পরে জমিতে মাটি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করি। হঠাৎ একদিন কালভার্টের কাজ শুরু হয়। আমরা কালভার্টটি অন্যখানে সরিয়ে নিতে বললেও কাজ হয়নি।’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘কালভার্ট নির্মাণের আগেই বাড়ি উঠেছে, তারপরও তারা নকশা যেখানে সেখানেই নির্মাণ করবে বলে সরায়নি।’
সাবেক ইউপি সদস্য আলমাস উদ্দিন বলেন, ‘এ কালভার্ট মানুষের কোনো কাজে লাগবে না। বাড়ির উঠানে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সরকারের টাকা নষ্ট হয়েছে।’
বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, ‘২০১৭ সালে বক্স কালভার্টটি নির্মাণের নকশা প্রস্তুত করা হয়। পরের বছর হয় টেন্ডার। নকশার সময় বাড়ি ছিল না। তবে নির্মাণের আগেই সেখানে বাড়ি ওঠে।’
কালভার্টটি নির্মাণের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে তিনি নাগেশ্বরীতে যোগ দেয়ার আগেই কালভার্টটির ভিতের কাজ শেষ হয়েছে। তখন আর কিছু করার ছিল না। ফলে সেখানেই কাজ শেষ করতে হয়েছে।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সব বিল মিটিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা প্রকৌশলী ওয়াসিম আতাহার বলেন, ‘খাল ভরাট করে কালভার্টটির পানি বের হওয়া পথ বন্ধ করার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’