বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পায়রা মহাপ্রকল্প পুরোদমে চলবে কবে

  •    
  • ১৯ মার্চ, ২০২২ ০৮:১৫

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন সক্ষমতার বিষয়টি মাথায় রেখেই এটিকে যথাসময়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে দুটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছিল। গোপালগঞ্জ থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত ১৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে চালু করা হয়। কিন্তু গোপালগঞ্জের গ্রিড থেকে ঢাকার আমিন বাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণকাজ শেষ করা যায়নি।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মহাপ্রকল্প পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকলেও এটি পুরোদমে কবে চালু করা যাবে, সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনও কাটছে না।

আগামী সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রটি উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। তবে এই কেন্দ্রের একটি ইউনিট থেকে আগেই বিদ্যুৎ যাচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)।

এর মোট উৎপাদনক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি উৎপাদনে আসে ২০২০ সালের জুনে। একই বছরের ডিসেম্বরে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে দ্বিতীয় ইউনিটও। তবে সঞ্চালন অবকাঠামো প্রস্তুত না হওয়ায় সেটিকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন সক্ষমতার বিষয়টি মাথায় রেখেই এটিকে যথাসময়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে দুটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছিল। গোপালগঞ্জ থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত ১৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে চালু করা হয়। কিন্তু গোপালগঞ্জের গ্রিড থেকে ঢাকার আমিন বাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণকাজ শেষ করা যায়নি।

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্ত) রেজওয়ান ইকবাল খান জানান, পদ্মায় রিভার ক্লোসিং লাইন নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে সেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন জাতীয় গ্রিডে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে।

মোট সক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহৃত হওয়ায় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে (আইপিপি) বসিয়ে রেখে অর্থ দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি)। ফলে কেন্দ্রটি থেকে লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে। একে বলা হয় ক্যাপাসিটি পেমেন্ট।

কর্মকর্তারা বলছেন, সেই হিসেবে একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করা বিদ্যুৎ ও অপর ইউনিটের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট মিলে বিদেশি লোনের কিস্তি শোধ করা সম্ভব। অর্থাৎ সরকারের লোকসান হলেও কেন্দ্র পরিচালনা করছে যে কোম্পানি, তার কোনো লোকসান হচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে প্রস্তুতি

এক ইউনিট বসিয়ে রেখেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন আগামী সোমবার পায়রা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

করোনার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বাইরে এই প্রথম কোনো জেলায় সশরীরে যাচ্ছেন সরকারপ্রধান। তার এই সফরের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রকল্প পরিচালক (প্রধান প্রকৌশলী) শাহ্ আব্দুল মওলা।

তিনি জানান, উদ্বোধনের পরপরই এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ শুরু করা হবে। পাশাপাশি ওই দিন দেশের মানুষের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুৎতায়নের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।

কয়লা আসছে কীভাবে

এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরসেদুল আলম জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতিদিন লাগছে ১৩ হাজার টন কয়লা। ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি বন্দরের নিজস্ব টার্মিনালে ভিড়ছে সেগুলো।

কয়লা ব্যবহারে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য এখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আছে শ্রমিকদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।

তিনি জানান, কয়লাবাহী জাহাজ সরাসরি টার্মিনালে ভেড়ানোর পর ওই জাহাজ থেকেই সরাসরি কনভেয়ারের মাধ্যমে কোল্ডডোরে পৌঁছে যাচ্ছে। সেখানেই মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সব প্রসেসিং। যে কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের সুযোগ নেই।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এখন পর্যন্ত স্থাপিত দেশের সবচেয়ে বড় মহাপ্রকল্প। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১৩তম আলট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশ। জ্বালানি সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব ক্লিন কোল প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দক্ষতা ৪৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।

সালফার নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন (এফজিডি) স্থাপন করা হয়েছে। ফ্লাই অ্যাশ কমাতে ৯৯ শতাংশ দক্ষতাসম্পন্ন ইলেক্ট্রো স্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর (ইএসপি) বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে সংযোজিত হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক শাহ্ আব্দুল মওলা জানান, ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন সাড়ে ৬ হাজার টন কয়লা দরকার। তবে রাবনাবাদ চ্যানেলে নাব্যতার কারণে মাদারভ্যাসেল সরাসরি তাদের জেটিতে ভিড়তে না পারায় সমস্যা হচ্ছে।

২০২০ সালে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করায় মাত্র ৭টি মাদার ভ্যাসেল সরাসরি তাদের জেটিতে ভিড়তে পেরেছিল। যেগুলোর ধারণক্ষমতা ছিল ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টন। এরপর ড্রেজিং না হওয়ায় ছোট ছোট ভ্যাসেলে করে ২০ থেকে ২৫ হাজার টন কয়লা বহন করাতে হয়েছে।

বর্তমানে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ রাবনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করায় পুনরায় আশার আলো দেখছেন তাপবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় দেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি হয় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের।

পরে ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের চুক্তির পর ১২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। মূল কাজের পুরো তদারকি করেছেন চীনের ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এ বিভাগের আরো খবর