ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার ঘনিয়ামোড়া গ্রামে মুহুরী নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি তুলছিলেন স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের লোকজন। বৃহস্পতিবার রাত ২টায় সেখানে যান ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী।
তার ‘অভিযানের’ খবর পেয়ে স্থানীয়রা রাতে মাটি কাটা অবস্থায় দুটি এস্কাভেটরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মাটি বহনকারী দুটি ট্রাক জব্দ করে ফুলগাজী থানা পুলিশ।
ফুলগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিন বলেন, গাড়িগুলো কার সেটি খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
মুহুরী নদী সোজা করার দাবি তুলে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলীম ও সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সেলিম জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেই মাটি কাটা শুরু করে দেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে কোনো অনুমতি দেননি। তার আগেই কোটি কোটি টাকার মাটি বিক্রি করে দেয়া হয়।
যদিও ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলীম মাটি কাটার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, ‘আমি এর সঙ্গে জড়িত নই। কারা কাটে, তা জানি না।’
স্থানীয়দের শঙ্কা, মাটি কাটার কারণে নদীর বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়বে। তাই তারা এই পদক্ষেপে খুশি।
ফুলগাজীর ঘনিয়ামোড়া গ্রামে মুহুরী নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি তুলছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের লোকজন। ছবি: নিউজবাংলা
স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমীন বলেন, ‘অভিযানে আমরা খুশি হয়েছি। মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এভাবে মাটি কাটলে খুব সহজে পাড় ভেঙে যাবে।’
ধলিয়া ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, ‘এ ধরনের অভিযানে আমরা সাহস পেয়েছি। এভাবে অভিযান অব্যাহত রাখলে আর কেউ মাটি কাটার সাহস পাবে না।’
গত ১৪ মার্চ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইউপি সেবা, ফেনী’ অ্যাপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিজাম উদ্দিন হাজারী ফসলি জমির মাটি অবৈধভাবে কাটা বন্ধ করতে বলেছিলেন। কোনো ইউপি চেয়ারম্যান মাটি কাটায় যুক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে অনুরোধও করেন তিনি। এর পরও মাটি কাটা বন্ধ হয়নি। এ কারণে ১৭ মার্চ রাতে নিজাম হাজারী নিজেই অভিযানে নামেন।
জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান বলেন, ‘মুহুরী নদীর পাড় থেকে মাটি কাটার জন্য কাউকে অনুমতি দেয়া হয়নি। শুনেছি কেউ কেউ নদী থেকে মাটি কাটছে। আমরা এর আগে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছি।’
নিজাম উদ্দিন হাজারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘টপ সয়েল কাটার কারণে জমির উর্বরাশক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে ওই জমিতে ভালো ফসল হবে না। কৃষকের জমি রক্ষায় আমার অভিযান অব্যাহত থাকবে।’