ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ছাদ থেকে পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। স্বামী ও স্বজনরা বলছেন, জিন ধরেছিল ওই নারীকে; এ কারণেই ছাদ থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, মোসাম্মাৎ সুমাইয়া নামে ওই নারীর মানসিক সমস্যা ছিল। পরিবার থেকে সঠিক চিকিৎসা পায়নি বলে এ ঘটনা ঘটেছে।
ভাঙ্গা থানার ওসি সেলিম রেজা সুমাইয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি বলে জানান।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভাঙ্গা পৌর এলাকার কাপুড়িয়া সদরদি মহল্লায় শ্বশুড়বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে যান ১৯ বছরের সুমাইয়া। তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে শুক্রবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।
সুমাইয়ার বাবা হাফিজুর রহমান সদরদি মহল্লার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ও হজ এজেন্সির স্থানীয় প্রতিনিধি।
তিনি জানান, সুমাইয়া তার মাদ্রাসা থেকেই পড়াশোনা করেছেন। আড়াই বছর আগে অর্থাৎ ১৬ বছর বয়সে স্থানীয় আদম ব্যবসায়ী মুন্সি চান মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে দেয়া হয়। তাদের সংসারে এক বছরের সন্তান আছে। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির পাশেই হাফিজুরের বাড়ি।
তিনি আরও জানান, মাসখানেক আগেও সুমাইয়া ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন। তাতে তার হাত-পা ভেঙে যায়। এরপর সদর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেননি। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আবার ছাদ থেকে লাফ দেন সুমাইয়া।
হাফিজুর বলেন, ‘আমার মেয়ের উপরে জিনের নজর ছিল। ওই খারাপ জিনিসটাই তাকে বারবার মেরে ফেলতে চেষ্টা করে করছিল। গত মাসে পারেনি। এবার সে হাত-পা ভাঙা অবস্থাতেই লাফ দিয়ে মারা গেল।’
সুমাইয়ার স্বামী মুন্সি চান মিয়া বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি বাইরে ছিলাম। খবর পেয়ে বাড়ি গিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে ভোরের দিকে ফরিদপুরের মেডিক্যাল হাসপাতালে মারা যায় সে।
‘সুমাইয়ার কোনো শারীরিক সমস্যা ছিল না। তবে মাঝে মধ্যে সে পাগলামি করত। সবাই বলত ওর উপর জিনের প্রভাব আছে। আমরা বিভিন্ন সময় হুজুর দেখাতাম। মাঝে একটু ভাল ছিল, কিন্তু তারপর আবার সেরকমই হলো।’
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুন্সি জাকির হোসেন বলেন, ‘মাসখানেক আগে সুমাইয়া এভাবে লাফ দেয়ার পর শরীরের হাড় ভেঙে যায়। তারপর হাসপাতালে অপারেশন করে রড দিয়ে হাড় জোড়া দেয়া হয়েছিল।
‘মাদ্রাসায় পড়া অবস্থাতেই সুমাইয়ার উপর জিনের আছর ছিল। আমার নিজের মাদ্রাসাপড়ুয়া মেয়েরও এমন জিনের ভাব আছে।’
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা মোহসিন ফকির বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুমাইয়াকে মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার রক্তক্ষরণ হচ্ছিল এবং হাড়গোড় ভাঙাচোরা ছিল। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ফরিদপুরে পাঠানো হয়। সেখানে মারা যায় সে।
‘মেয়েটির মানসিক সমস্যা ছিল, কিন্তু পরিবার থেকে সঠিকভাবে চিকিৎসা পায়নি। বরং এটিকে জিনে ধরা বলে তারা তাদের উপায়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছিল।’