নানা সমালোচনার পর অবশেষে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার থেকে আমির হামজার নাম বাদ দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে এই পুরস্কারের সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করা হয়। নতুন তালিকায় সাহিত্যে অন্য কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি।
কী কারণে পুরস্কার থেকে আমির হামজার নাম বাদ পড়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে তা জানানো হয়নি। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই এমন সিদ্ধান্ত এসেছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি বলেন, ‘তার (আমির হামজা) বিরুদ্ধে নানা তথ্য-উপাত্ত এসেছে। যেসব তথ্য-উপাত্ত এসেছে, এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভালো চিন্তা থেকেই পুরস্কার দেয়া হয়েছিল। তবে যেসব অভিযোগ এসেছে; খারাপ কিছু এসেছে। দেশের মানুষের কথাকে সম্মান জানিয়েছে সরকার।’
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৫ মার্চ এ বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করে সরকার। এতে সাহিত্যে অবদান রাখায় মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পান আমির হামজা।
আমির হামজার নাম ঘোষণার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। প্রথম দিকে বাংলা সাহিত্যে তার অবদান নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
জানা গেছে, মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরিশাট পূর্ব পাড়ায় ১৯৭৮ সালে প্রতিপক্ষের হামলায় শাহাদত ফকির নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার মামলায় দণ্ড পান আমির হামজা। হত্যা মামলার প্রায় সাত বছর পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়ার পর কারাগারে যান তিনি। এরপর ১৯৯১ সালে দণ্ড মওকুফ হলে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।
২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ৮৭ বছর বয়সে মারা যান আমির হামজা। তার এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৩টি। বাঘের থাবা, পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি ও একুশের পাঁচালি। তিনটি গ্রন্থই ‘অন্যপ্রকাশ’ থেকে মুদ্রিত হয়েছে। তার অপর দুটি কাব্যগ্রন্থ ‘কাব্যরাণী’ ও ‘ইকরা’ প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি আমির হামজা। মুক্তিযুদ্ধে রাইফেলের পাশাপাশি ধরেছিলেন কলমও।
কবির মেজো ছেলে মো. আসাদুজ্জামান বাংলাদেশ সরকারের একজন উপসচিব। বর্তমানে তিনি খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। বাবার পুরস্কারপ্রাপ্তির ঘটনায় আসাদুজ্জামানের তৎপরতার খবর এসেছে গণমাধ্যমে।
এর আগে ২০২০ সালেও সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক হয়। ওই বছর এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ নামের এক ব্যক্তিকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। পরে নানা সমালোচনায় তার পুরস্কারও বাতিল করা হয়।
স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার বা স্বাধীনতা পুরস্কার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে ২৬ মার্চ এই পুরস্কার দেয়া হয়। ৫ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেট মানের ৫০ গ্রামের স্বর্ণপদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেয়া হয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে।