এ যেন আকাশ থেকে মাটিতে পতন। বছর দুয়েক আগেও ফরিদপুরের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা খন্দকার মোশাররফ হোসেন এখন এলাকাতেই ভিড়ছেন না। তিনি সবশেষ এলাকায় গেছেন এক বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেল।
এর মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন তার ছোট ভাই খন্দকার মোহতেসাম হোসেন বাবর। ঘনিষ্ঠ সহচর সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেল গ্রেপ্তার হয়েছেন তার বাসভবন থেকে। তাদের পক্ষে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপই নেই ফরিদপুর সদর আসনের সংসদ সদস্যের।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ফরিদপুর সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী হন তিনি। তখন থেকেই জেলাটিতে তৈরি হয় মোশাররফ পরিবারের দাপট।
সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে আরও বড় মন্ত্রণালয় হিসেবে বিবেচিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়ের দায়িত্ব পান মোশাররফ। এরপর ফরিদপুরে স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও দরপত্রে তার অনুসারীরাই হয়ে ওঠেন হর্তাকর্তা।
সাবেক এলজিআরডিমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই ও ফরিদপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেসাম হোসেন বাবর পুলিশ হেফাজতে। ছবি: নিউজবাংলা
তবে সব কিছু পাল্টে যেতে থাকে আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদের শুরু থেকে। মন্ত্রিত্ব থেকে মোশাররফের বাদ পড়া কিছুটা বিস্ময় তৈরি করে। তবে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও মতিয়া চৌধুরীর মতো ডাকসাইটে নেতাদেরও প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় না রাখার পর মোশাররফের বিষয়টি নিয়ে আলাদা আলোচনা হয়নি।
এই সরকারের আড়াই বছরের মাথায় ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় পাল্টে যেতে থাকে ফরিদপুরের পরিস্থিতি।
ওই বছরের ৭ জুন ফরিদপুরে খন্দকার মোশাররফের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন বরকত-রুবেলসহ ৯ জন। পরে জানানো হয়, তারা বিদেশে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার করেছেন।
সাবেক এলজিআরডিমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহচর সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেল ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। ছবি কোলাজ:নিউজবাংলা
এই মামলায় যাদের নাম আছে তারা সবাই খন্দকার মোশাররফের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।
অনুসারীরা আটক হওয়ার দুই দিন পর ফরিদপুর থেকে ঢাকায় পাড়ি জমান সাবেক এলজিআরডিমন্ত্রী। এরপর পৌনে দুই বছর তিনি কেবল দুই রাতের জন্য দুইবার ফরিদপুরে এসেছিলেন।
একবার তার মেয়েকে নিয়ে লকারে থাকা কাগজপত্র নিয়ে যান। আরেকবার ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি চাচির মৃত্যুতে জানাজায় অংশ নেন।
তার অবর্তমানে শহরের বদরপুরের বাসভবন ‘আফসানা মঞ্জিল’ এখন দর্শনার্থী ও তরুণদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। বাড়িটিতে থাকেন কয়েকজন কেয়ারটেকার। সেখানে রয়েছে একটি মিনি চিড়িয়াখানা। এতে গোটা বিশেক হরিণ, কয়েকটি উটপাখি, ময়ূরসহ আরও কিছু প্রাণীর দেখভাল করেন তারা।
সাবেক এলজিআরডিমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের অবর্তমানে শহরের বদরপুরের বাসভবন ‘আফসানা মঞ্জিল’ এখন দর্শনার্থী ও তরুণদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। বাড়িটিতে থাকেন কয়েকজন কেয়ারটেকার। সেখানে রয়েছে একটি মিনি চিড়িয়াখানা। ছবি: নিউজবাংলা
ভাইয়ের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার মোশাররফ হোসেন মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের ব্যাপারে আমি আপনাদের চেয়েও কম জানি। আর সে অপরাধ করলেও আমি কি বলে দেব যে সে এই অপরাধ করেছে? আপনারা খোঁজ নিয়ে জানেন।’
এলাকায় যাচ্ছেন না কেন- এই প্রশ্ন করার পরই কিছুটা রাগান্বিত হয়ে উঠে ফোন কেটে দেন মোশাররফ।
ফরিদপুরের আলোচিত সাংবাদিক প্রবীর শিকদার অবশ্য মনে করেন, বাবরের উত্থান ও তার সব কিছুর পেছনে খন্দকার মোশাররফের দায় রয়েছে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খন্দকার বাবর একটা ফ্যাক্টর৷ কিন্তু খন্দকার মোশাররফ সাহেবের আশীর্বাদ ছাড়া তো ফরিদপুরে লুটপাট দুর্নীতি করা সম্ভব হয়নি৷’
তিনি মনে করেন, মোশাররফ সাম্রাজ্য ভেঙে পড়া এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র। বলেন, ‘খন্দকার মোশাররফ সাহেব অনেক বাড়াবাড়ি করেছেন৷ তার চূড়ান্ত পরিণতি শুরু হয়েছে৷’
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, ‘খন্দকার বাবর ছিলেন ভিন্ন দলে, সুযোগ-সুবিধা লুটতেই তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এতদিন ভাইয়ের ক্ষমতার দাপটে তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।’
তিনি বলেন, ‘নেত্রীর (শেখ হাসিনা) আত্মীয় হওয়ার পরও এখন তারা রেহাই পাচ্ছেন না৷ এর আগে অনেকের ধারণা ছিল, খন্দকার বাবর গ্রেপ্তার হবেন না৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়েছেন৷ হাতে হাতকড়াও দেয়া হয়েছে৷ ওয়েট অ্যান্ড সি, এরপর কী হয়৷’
সাবেক এলজিআরডিমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এপিএস এইচ এম ফুয়াদকে আটক করে পুলিশ। ছবি: নিউজবাংলা
দাপটের শুরু যেভাবে
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে সারা দেশে ভূমিধস বিজয়ের কালে ১৯৭৩ সালের পর প্রথমবারের মতো ফরিদপুর সদর আসন দখল করে আওয়ামী লীগ। সংসদ সদস্য হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর উত্থান হয় ছোট ভাই খন্দকার মোহতেসাম হোসেন বাবরের। বিএনপি শাসনামলে তিনি ছিলেন দলটির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসূফের সহযোগী। সম্পর্কে তারা মামা-ভাগনে।
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বাবর তার ভাই মোশাররফের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন না। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা কামাল ইবনে ইউসূফের প্রধান এজেন্ট ছিলেন। সে সময় ২০ দলীয় জোট আসনটিতে মনোনয়ন দেয় জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে।
বড় ভাই মন্ত্রী হওয়ার পর বাবর পক্ষ পাল্টান। অভিযোগ আছে, বাবরের হাত ধরেই শুরু হয় টেন্ডারবাণিজ্য, নিয়োগবাণিজ্য, চাঁদাবাজি। স্থানীয় আওয়ামী লীগেও আসতে থাকে পরিবর্তন। ত্যাগী নেতারা কোণঠাসা হতে থাকেন, অন্য দল ও মতের অনুসারীরা ক্ষমতাসীন দলে আসতে থাকেন, যারা পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘হাইব্রিড নেতা’ হিসেবে।
একে একে বাদ পড়েন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বিপুল ঘোষ, বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন, বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসুল হক ভোলা মাস্টার, সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ মুখার্জিসহ অনেকে।
ফরিদপুর আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ বাবরের হাতে চলে যায়। মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ফরিদপুর সদরের সমস্ত ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেন।
একে একে মেডিক্যাল কলেজ, পাসপোর্ট অফিস, সড়ক বিভাগ, এলজিইডি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন তিনি। আলোচিত দুই ভাই রুবেল ও বরকতের উত্থান হতে শুরু করে।
২০১৪ সালে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বাবর। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে চেষ্টা করেন তিনি।
২০১৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগে ‘বাবরকে সাধারণ সম্পাদক চাই’ লেখা হাজারো ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে যায় ফরিদপুর শহর। কিন্তু সফল হননি।
সবকিছু ঠিকঠাকমতো চলছিল। তবে ২০১৭ সালে বড় ভাই খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে বাবরের সম্পর্কের অবনতি হয়। একাধিক ঘনিষ্ঠজন নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাবরের কাছে টাকা চান খন্দকার মোশাররফ হোসেন। কিন্তু তিনি টাকা দিতে রাজি হননি।
এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধের শুরু। একপর্যায়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের চেয়ার হারান বাবর। এরপর ফরিদপুরে এলেও টিকতে পারেননি তিনি। সেই থেকে তিনি ঢাকাতেই থাকতেন।
২ হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি বাবর রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার একটি বাসায় আত্মগোপন করেছিলেন। গত ৭ মার্চ রাতে ফরিদপুর জেলা পুলিশের একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন তাকে পাঠানো হয় কারাগারে।
পতনের শুরু
২০২০ সালের ১৬ মে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। তখন থেকেই মূলত মোশাররফ সাম্রাজ্যে ফাটল ধরা দেয়।
১৮ মে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন সুবল সাহা। এরই ধারাবাহিকতায় এই বছরের ৭ জুন ফরিদপুরে বিশেষ অভিযান চালায় পুলিশ। খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ক্ষমতার বলয়ে যারা ছিলেন, তাদের প্রায় সবাইকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
এই গ্রেপ্তারের আগে সুবল ছাড়াও সোচ্চার হন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। তারা অভিযোগ করতে থাকেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলেই তারা অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এসব নেতা ও কর্মীদের অভিযোগ, খন্দকার মোশাররফের নির্দেশে তার অনুসারী বাবর-ফুয়াদরা তাদের বিরুদ্ধে নানা মামলা দিয়েছেন। পাশাপাশি নানা নির্যাতন করেছেন।
‘ডানহাত’ বরকত-রুবেল-ফুয়াদও বন্দি
খন্দকার মোশাররফের জমানায় ফরিদপুরে তুমুল আলোচিত হয়ে ওঠেন শহরের ব্রাক্ষ্মণকান্দা গ্রামের দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেল।
এই দুজন একসময় বিএনপি নেতা খন্দকার চাঁদের ফুটফরমাশ খাটতেন। খন্দকার মোশাররফ বদরপুরে বাড়ি করলে সেখানে ভিড়তে শুরু করেন। বাবরের ক্ষমতার ভিত শক্ত হলে দুই ভাই হাত মেলান তার সঙ্গে।
খন্দকার মোশাররফ স্থানীয় সরকারমন্ত্রী হওয়ার পর বরকত-রুবেলের উত্থানের শুরু। বরকত হন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আর রুবেল হন স্থানীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, খন্দকার মোশাররফের মন্ত্রিত্বের সুবাদে স্থানীয় সরকার বিভাগের সারা দেশের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করতেন বরকত। চালু করেছিলেন ১৫ শতাংশ কমিশন ব্যবস্থা।
খন্দকার মোশাররফ প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী থাকাকালীন এপিএস সত্যজিত মুখার্জির সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি হলে তাকে নানা মামলা দিয়ে পাঠানো হয় কারাগারে। তখন এপিএস হন এ এইচ এম ফুয়াদ।
মোশাররফের ফরিদপুর নিয়ন্ত্রণের অন্যতম নাম এই ফুয়াদ। ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হন তিনি।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর এপিএস থাকাকালে তার একটি বাহিনী গড়ে ওঠে যারা ‘হাতুড়ি ও হেলমেট বাহিনী’র তকমা পায়। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই এই বাহিনী দিয়েই নির্যাতন চালানোর অভিযোগ আছে।
২ হাজার কোটি টাকার পাচারের মামলায় ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর রাতে ফুয়াদকেও ঢাকার বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
‘২ হাজার কোটি টাকা পাচার’ ইস্যু
২০২০ সালের ২৬ জুন রাজধানীর কাফরুল থানায় অর্থ পাচারের অভিযোগে বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ।
মামলায় ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে উপার্জন ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন দুই ভাই।
মামলায় বলা হয়, মাদক কারবার, ভূমি দখল করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তারা। এসি, নন-এসিসহ ২৩টি বাস, ড্রাম ট্রাক, বোল্ডার, পাজেরো গাড়ির মালিক হয়েছেন। টাকার উল্লেখযোগ্য অংশ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন তারা।
এজাহারে আরও বলা হয়, প্রথম জীবনে এই দুই ভাই রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে এক বিএনপি নেতার ফরমায়েশ খাটতেন। তখন তাদের সম্পদ বলতে তেমন কিছুই ছিল না। পরে তারা আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
২০২১ সালের ৩ মার্চ ঢাকা মুখ্য মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস।
এতে ১০ জনকে আসামি করা হয়। সাবেক মন্ত্রীর ভাই বাবর ছাড়াও মোশাররফ ঘনিষ্ঠ বরকত, রুবেল, ফুয়াদ ছাড়াও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী মিনার, শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি খন্দকার নাজমুল ইসলাম লেভি, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম কামরুল হাসান ডেবিট, তারিকুল ইসলাম নাছিম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ফাইন, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহানকে আসামি করা হয় এতে।
এ মামলায় মিনার, ডেবিট, নাছিম ছাড়া সবাই কারাগারে।
২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বরকত ও রুবেলের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও ১৮৮ ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
অনুসারীরা কোণঠাসা, বিরোধীরা চাঙা
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর ফরিদপুর আওয়ামী লীগে যারা প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন, মোশাররফের সঙ্গে সঙ্গে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন তারা।
ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণ এখন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন ও সহসভাপতি হামিম গ্রুপের কর্ণধার এ কে আজাদ, সহসভাপতি শামীম হক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সামছুল হক ভোলা মাস্টার, পৌর মেয়র অমিতাভ বোস ও তাদের অনুসারীদের হাতে, যারা দুই বছর আগে দলের মধ্যেই অত্যাচার নির্যাতনের শিকার বলে অভিযোগ করে আসছিলেন।
শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মোমিতুল হাসান বিভুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাবর ও ফুয়াদ লুটেরারা টাকার পাহাড় বানিয়েছেন। আর এ জন্য ফরিদপুরের দলের প্রকৃত ত্যাগী নেতা-কর্মীরা হয়েছেন লুটেরাদের নির্যাতনের শিকার। অন্যায়ের পতন একদিন হয়ই।’
পৌর মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে ফরিদপুর শহরে যে অত্যাচার-অবিচার হয়েছে তার গডফাদার এই বাবর (খন্দকার মোশাররফের ভাই)। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অভিযানে ফরিদপুরে অন্যায় অত্যাচায়ের খলনায়কেরা এখন কারাগারে, এটাই স্বস্তির খবর।’
সাবেক এলজিআরডিমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই মোহতেসাম হোসেন বাবর গ্রেপ্তার হওয়ায় ফরিদপুরে গত ৮ মার্চ বিকেলে আনন্দ মিছিল করেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ছবি: নিউজবাংলা
জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, ‘আমি সাধারণ সম্পাদক হলেও কোনো দিন কোনো দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারিনি। রাজনৈতিকভাবে আমাকে একঘরে করে রেখেছিল তারা।
‘বাবর ২০১৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। তখন থেকেই আমি একঘরে ছিলাম।’