লালমনিরহাটে নদী থেকে বস্তাবন্দি ও হাত-পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় জাহিদ হোসেন নামে এক তরুণকে উদ্ধার হয়েছে। তিনি সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের হুদুর বাজার এলাকার মৃত আবু বক্করের ছেলে।
বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এলাকার ত্রিমোহনী নদীর সেতুর নিচ থেকে তাকে জীবিত উদ্ধার করে সদর থানা পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী সরল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কার্তিক কুমার আচার্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকালে ব্রিজের উপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে নদীতে একটি বস্তায় কিছু পড়ে আছে বলে বুঝতে পারি। তাৎক্ষণিক এলাকার লোকজন ও পুলিশকে খবর দেই। পরে পুলিশের সহায়তায় বস্তার ভেতর থেকে জাহিদ হোসেনকে হাত-পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের সময় সে সংজ্ঞাহীন ছিল। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ছেলেটি সেখানে চিকিৎসাধীন।’
জাহিদুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি রতন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির মোবাইল ফোন কিনি। কিন্তু মোবাইল ফোন কেনার পর থেকে আমার সাথে সে সমস্যার সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে আমি ফোনটি পানিতে ফেলে দেই। তখন স্থানীয়রা আপোষ করে দেয় এবং তিন হাজার টাকা জরিমানা ধরে। আমি সে টাকাও দেই। কিন্তু সে আমার ওপর জেদ ধরেই ছিল।
‘গতকাল আমি বোনের বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে মাঞ্জটারী এলাকার মেইলেরপাড় নামক স্থানে রতন ও অজ্ঞাত আরো ৩/৪জন আমাকে আটক করে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আজ সকাল ৬টার দিকে স্থানীয় লোকজন আমাকে উদ্ধার করে। এখনও আমি ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছি না। চোখের দৃষ্টিও ঝাপসা।’
আহতের জাহিদুলের ভাই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে রতনসহ কয়েকজন মারধর করে অজ্ঞান করে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেয়। ওখানে পুলিশ একটি চিঠি উদ্ধার করেছে। তাতে লেখা ছিল- জাহিদুল আজ থেকে তুই দুনিয়া থেকে বিদায়। আমি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার চাই।’
বোন হালিমা বেগম বলেন, ‘ভাই গতকাল আমার বাড়িতে যায় এবং বিকেলেই চলে আসে। কিন্তু বহু রাত পর্যন্ত বাড়িতে ফিরে না আসায় মা আমাকে ফোন করলে আমি বলি সে তো বাড়ি গেছে। তখন আমরা অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। ভাইকে যারা মারার জন্য এরকম কাজ করেছে তাদের বিচার চাই।’
জাহিদুলের মা জোবেদা খাতুন বলেন, ‘সামান্য একটা মোবাইল ফোনের জন্যে আমার ছেলেক তো মারি ফেলবার ধরছে। মোবাইলটা জাহিদুল পানিতে ফেলে দিছে। এজন্য বিচারে ৩ হাজার টাকা জরিমানাও দিছুং। আমার ছেলের চুল কাটি দিছে, হাত পাও বান্দি নদীত ফেলে দিছে। মুই খুব গরিব মানুষ বাবা। আমি এর বিচার চাই।’
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আরএমও কামরুল হাসান প্রিন্স বলেন, ‘ছেলেটির শরীরে সম্ভবত কোনো চেতনানাশক প্রয়োগ করে অজ্ঞান করা হয়েছিল। বর্তমানে ছেলেটি সুস্থ আছে।’
লালমনিরহাট সদর থানার ওসি শাহা আলম বলেন, ‘ছেলেটিকে জীবিত উদ্ধারের পর চিকিৎসার জন্য দ্রুতই হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তবে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অজ্ঞান করে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে কি না এবং নেপথ্যে অন্য কোনো ঘটনা আছে কি না পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।’