করোনা সংক্রমণের শঙ্কা নিয়ে শুরু হওয়া অমর একুশে বইমেলার পর্দা নামল। শুরু থেকেই পাঠক-ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। এবারের মেলায় বই বিক্রিতেও খুশি প্রকাশকরা।
বাংলা একাডেমির হিসাব অনুযায়ী, এবার কমপক্ষে ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে।
বইমেলার সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ বলেন, ‘বইমেলায় বাংলা একাডেমিসহ সব প্রতিষ্ঠানের বই ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি হয়েছে। ২০২০ সালে বাংলা একাডেমি মোট ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছিল। এবার ১৬ মার্চ পর্যন্ত ৩০ দিনে বাংলা একাডেমি ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে একাডেমি মাত্র ৪৬ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছিল। আজকের বিক্রি হিসাবে নিলে বাংলা একাডেমির মোট বিক্রি হবে কমপক্ষে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ২০২০ সমগ্র মেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। এবার ১৬ মার্চ পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং আজকের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে বলা যায় যে, এবার কমপক্ষে ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে।’
ইত্যাদি প্রকাশনীর কর্ণধার আদিত্য অন্তর বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা যা আশা করিনি তার চেয়ে অনেক ভালোভাবেই শেষ হলো মেলা। ভেবেছিলাম এবারও হয়তো জমবে না মেলা; কিন্তু শুরু থেকেই দর্শক-ক্রেতায় মুখর ছিল মেলা। আজ শেষ দিনে এতটা ভিড় থাকবে তাও ভাবিনি। সব মিলিয়ে বলতে হবে করোনাকালেও ভালো একটা মেলা হলো।’
মেলার শেষ দিনেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। ছবি: নিউজবাংলা
যেমন ছিল শিশু চত্বর
এবারের মেলায় শিশু ও অভিভাবকদের পদচারণায় সবচেয়ে বেশি মুখর ছিল শিশু চত্বর। করোনার কারণে মেলার প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দুদিন শিশুপ্রহর অনুষ্ঠিত না হলেও পরের ছুটির দিনগুলোয় ছিল প্রাঞ্জল। ছিল শিশুদের বই কেনার হিড়িক।
লেখক ও শিশুদের প্রকাশনা সংস্থা ইকরিমিকরি সহকারী সম্পাদক মাসুদ মাহমুদ বলেন, ‘গত বছর মেলার কথা নাই বললাম। করোনার কারণে যেভাবে মেলা হওয়ার কথা হয়নি। এবার সুন্দর পরিবেশ ছিল। অনেকটা করোনার আগের অবস্থার মতো। শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। শুধু যে ঘুরতে এসেছিল তা নয়, তারা বইও কিনেছে। সব মিলিয়ে বলতে হবে খুব ভালো কাটল এবারের মেলা।’
ভিন্ন চিত্র ছিল লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে
শুরু থেকেই পুরো মেলা জাঁকজমক থাকলেও ঝিমিয়ে ছিল লিটল ম্যাগাজিন চত্বর। এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়ে উদ্যানের এম্ফিথিয়েটারের পূর্ব দিকে মেলার মূল প্রাঙ্গণে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। বরাদ্দ পেয়েছিল ১২৭টি লিটলম্যাগ স্টল, কিন্তু সবগুলো স্টল শেষ দিন পর্যন্ত বসতে দেখা যায়নি।
লিটলম্যাগ চন্দ্রবিন্দুর সম্পাদক মঈন ফারুক বলেন, ‘আমি তিন বছর ধরে মেলায় স্টল দিচ্ছি। চত্বর বড় হচ্ছে, কিন্তু প্রতিবারই মনে হয় লিটলম্যাগ চত্বরের জৌলুস কমে যাচ্ছে। হয়তো আমরা পাঠক টানতে পারছি না।’
তবে ভিন্ন সুরে কথা বললেন লিটলম্যাগ একান্নবর্তীর সম্পাদক শেলী সেনগুপ্তা। বলেন, ‘যে সংখ্যকই হোক পাঠক বা দর্শক যাই বলেন না কেন, যারা এসেছেন কম বলা যায় না। লিটলম্যাগ দিয়ে ব্যবসা করতে চাইলে তো হবে না। সেই হিসেবে বলা যায় সব মিলিয়ে মানুষের রেসপন্স খারাপ নয়।’