বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়া সব বেঈমানের করুণ পরিণতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। '৭৫-এ সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ বঙ্গবন্ধুর প্রাণ রক্ষায় ভূমিকা রাখেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জাতির পিতার ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের আলোচনা সভায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বৃহস্পতিবার তিনি এসব মন্তব্য করেন।
শেখ সেলিম বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য আল্লাহতালা তাকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি বাংলার মানুষের জন্য কষ্ট করেছেন, বারবার জেল খেটেছেন, ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন। তবুও তিনি বাংলার অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে একবারও পিছপা হননি।
‘পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাকে হত্যা করতে চেয়েছে, ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় তাকে হত্যা করার জন্য কবর পর্যন্ত খুঁড়েছিল। আল্লাহর অসীম কৃপায় বঙ্গবন্ধুকে তারা হত্যা করতে পারেনি। কিন্তু বাঙালি মিরজাফর মোশতাক-জিয়া চক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে আমাদের কলঙ্কিত করেছে।’
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘিরে সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা নিয়ে তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তৎকালীন সেনাপ্রধান শফিউল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কে এম সফিউল্লাহকে বলেছিলেন- তোমার আর্মি আমাকে আক্রমণ করেছে, তুমি দেখো। দেখছি বলেও কোনো কিছু করেননি সফিউল্লাহ। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মাথা নত করতে শেখেননি, আত্মসমর্পণ করতে শেখেননি।
‘সেদিন সফিউল্লাহ অন্তত এক ট্রাক আর্মি পাঠালে বঙ্গবন্ধু মারা যেতেন না। সফিউল্লাহ তা করেন নাই। তিনি রেডিও সেন্টারে গিয়ে খুনিদের সঙ্গে আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। সফিউল্লাহ এখনো বেঁচে আছেন, কিন্তু মানুষ তাকে ঘৃণা করে। খালেদ মোশাররফ সেদিন যদি বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে যেতেন তাহলে তার পরিণতিও অমন হতো না।’
সব বেঈমানের করুণ পরিণতি হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এ নেতা বলেন, ‘কর্নেল তাহেরকে বঙ্গবন্ধু চাকরি দিয়েছিলেন, সেই তাহেরও বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য গণবাহিনী করেছিলেন, সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিপ্লবী গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। জিয়ার সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করার বিরোধে তার করুণ পরিণতি হয়। তাকে ফাঁসি দেয়া হয়।
‘পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তার মৃত্যু হয়েছে ফাঁসিতে। কর্নেল গাদ্দাফি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের লিবিয়ায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। সেই গাদ্দাফিকে তার দেশের জনগণ রাস্তার ওপর ফেলে পিটিয়ে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির সঙ্গে প্রতারণা করে কারও শেষ রক্ষা হয়নি।’
শেখ সেলিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু নেই, যতদিন বাংলার মানুষ থাকবে, বাংলার ইতিহাস থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধুর নাম কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর দৈহিক মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধু আমাদের কাছে আদর্শ হয়ে নক্ষত্রের মতো জ্বলবে চিরদিন।’