বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের’ জেরে হত্যায় সমাজ কতটা দায়ী?

  •    
  • ১৭ মার্চ, ২০২২ ১৯:৫২

সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সমাজে মানবীয় সম্পর্কের নানাবিধ জটিল মেরুকরণে এ ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটছে। ‘বিয়েবহির্ভূত’ সম্পর্ককে অনৈতিকতার বেড়াজালে আটকে রাখার কঠোর চেষ্টা আধুনিক সময়ে খুব বেশি কাজে আসছে না। বরং এ ধরনের সম্পর্ক লুকিয়ে রাখার চেষ্টার বলি হচ্ছে মানুষ।

খাবারে বিষ মিশিয়ে নিজে সন্তানদের হত্যার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে লিমা আক্তারকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের দাবি, মিষ্টির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে নিজ সন্তান ইয়াছিন ও মোরসালিনকে খাওয়ান লিমা। তাতে মৃত্যু ঘটে দুই শিশুর। এরপর নাপা সিরাপ খেয়ে তাদের মৃত্যু বলে প্রচার চালান লিমা।

লিমার বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে দুই শিশুকে হত্যার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন তার স্বামী। এর আগেও এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনার খবর প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। এ ছাড়া, প্রায়ই খবরের শিরোনাম হচ্ছে রাস্তার পাশে নবজাতক কিংবা নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার অথবা ভ্রূণ হত্যার মতো ঘটনা।

সমাজবিশ্লেষক, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মীরা বলছেন, সমাজে মানবীয় সম্পর্কের নানাবিধ জটিল মেরুকরণে এ ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটছে। ‘বিয়েবহির্ভূত’ সম্পর্ককে অনৈতিকতার বেড়াজালে আটকে রাখার কঠোর চেষ্টা আধুনিক সময়ে খুব বেশি কাজে আসছে না। বরং এ ধরনের সম্পর্ক লুকিয়ে রাখার চেষ্টার বলি হচ্ছে মানুষ। পারিবারিক জীবনে বাড়ছে প্রতারণামূলক সহাবস্থানের ঘটনা।

মানুষকে তার কথাগুলো মন খুলে বলার সাহস দেয়া উচিত বলেও মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তারা মনে করছেন, সততাকে সমাজ নিন্দার চোখে না দেখলে কমে আসবে ব্যক্তি মানুষের অপরাধপ্রবণতা। একই সঙ্গে নিজের ইচ্ছে পূরণ করতে গিয়ে হন্তারক হয়ে ওঠার বিপক্ষে তাদের অবস্থান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ককে আমরা যে নামেই পরিচিত করি না কেন, সমাজে মানুষ যখন একত্রে বসবাস করা শুরু করেছে, সেই তখন থেকে এ ধরন বা এ রকম একটি ইচ্ছে মানুষের মনে ছিল এবং সেটি চলমান আছে।’

কোনো কোনো দেশ এমন সম্পর্ককে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

তৌহিদুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশের বাস্তবতায় সামাজিকভাবে বা রাষ্ট্রীয়ভাবে বা ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার কথাও যদি চিন্তা করেন, এটাকে আমরা প্রকাশ্যরূপে মানতে পারি না। মানতে না পারার পেছনে কারণগুলো যদি বলি, ধর্মীয় বিশ্বাস কিংবা মূল্যবোধের জায়গা। আর দ্বিতীয়ত সামাজিক যে পরিমণ্ডলের মধ্যে আমরা থাকি, তা এ ধরনের সম্পর্ককে প্রকাশ্যে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। কিন্তু এর চর্চা বন্ধ নেই।’

বিবাহিত নারী-পুরুষের অন্য কারও প্রতি আগ্রহী বা ভালো লাগা তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন এই অপরাধ বিশ্লেষক। তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই ভালো লাগাটাকে অনেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। আবার পরিস্থিতির কারণে সেই ভালো লাগা, ভালো লাগার গতি অতিক্রম করে আরও অনেক দূর গড়ায়। ফলে যখন তারা অঙ্গীকারে আবদ্ধ হন, সংসার করতে চান বা বিয়ে করতে চান, তখন দুই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়।’

বিবাহিত নারী-পুরুষের সন্তান থাকলে ‘বেশি বিপদ ঘটে’ বলে মনে করেন তৌহিদুল। তিনি বলেন, ‘ওই বিবাহিত নারী বা পুরুষ দুইভাবে চিন্তা করেন। তিনি সন্তানকে নিজের কাছে রাখা অথবা বাবার বাড়ি বা অন্য কোথাও রেখে সন্তান প্রতিপালনের চেষ্টা করেন। যখন সেখানে কোনো সমর্থন পাবেন না বলে মনে করেন, তখন কোনো কোনো সময় আমরা দেখি আরেকটি সম্পর্ককে চলমান রাখার জন্য বাবা অথবা মা নিজের সন্তানকে হত্যা করেন।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাটি দ্বিতীয় মডেলের মধ্যে পড়েছে। এমন ঘটনার বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই অবস্থা কেন? কারণ সমাজ, রাষ্ট্র, আইন এ রকম কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না অথবা কোনো দিন পারবেও না যে নারী-পুরুষের বিয়ের পর আর কাউকে কোনো দিন ভালো লাগতে পারবে না বা ভালো লাগবে না।’

আর এসব সংকট দূর করতে পশ্চিমা দেশগুলো এমন সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিচ্ছে বলে জানান তৌহিদ।

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিকে যদি মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভালো রাখা সম্ভব না হয়, এমন সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে যারা বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদেরকে নির্যাতন বা হত্যাকাণ্ডের মুখোমুখি হতে হয়। এমন কর্মকাণ্ডের কারণে আমরা দুই শিশুকে হারালাম।’

এ ধরনের বিষয়গুলোকে মোকাবিলা করার জন্য যে বক্তব্যগুলো উঠে আসা উচিত, সমাজ বাস্তবতার কারণে তা বলা যায় না বলে মন্তব্য করেন এই সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ।

আমাদের দেশে লুকিয়ে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্পর্কের বড় বৈশিষ্ট্য হলো, কোনো সম্পর্ক বেশি দিন গোপন থাকে না। সহজাত বৈশিষ্ট্যের কারণে সেটা প্রকাশ পায়। আর তখন প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফলে ওই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সক্ষমতা অনেকের থাকে না।’

পরিবারিক, সামাজিক বা কাঠামোগতভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে অনেকে ‘বিশৃঙ্খলা’ বা ‘নিজের সন্তানকে হত্যা করে’ সমাধানের চেষ্টা করেন বলে জানান তৌহিদ।

তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু এগুলো আদৌ কোনো সমাধান না। বরং সমাজ যদি কাঠামোগতভাবে প্রস্তুত থাকে, তাহলে একজন ব্যক্তি সহজ করে জানাতে পারবেন যে তিনি সেই সম্পর্কে থাকতে চান না, মানসিকভাবে থাকতে পারছেন না। তাহলে ডিভোর্স নেয়ার একটি বিষয় আছে।’

বিয়েবিচ্ছেদকেও সমাজ এখনও সহজভাবে দেখে না বলে জানান তৌহিদুল হক। তিনি বলেন, ‘কারণ, জীবনের প্রয়োজনে যেমন আমরা একত্রিত হই, আবার জীবনের প্রয়োজনেই দূরে সরে যাওয়া অথবা ভালো লাগা না লাগার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। মানুষকে যদি আমরা মূল্য দিই, মানুষকে ভালো রাখা এবং তার মনস্তত্ত্বকে যদি আমরা গুরুত্ব দিই, তাহলে তার বিষয়গুলোকে মেনে নেয়ার মতো করে সমাজের পরিবর্তন করা প্রয়োজন। সামাজিক সুশাসন নিয়ে যারা কাজ করেন এবং রাষ্ট্রের বা সরকারের উচিত এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো।’

তিনি বলেন, ‘সমাজ, আইন বা বাস্তবতার দোহাই দিয়ে বেশি দিন কিন্তু চলা যাবে না, যদি ওই বিষয়গুলোর বৈশ্বিক চর্চা শুরু হয়। কালচারাল গ্লোবালাইজেশন বা সাংস্কৃতিক বৈশ্বায়ন কিন্তু একটা দেশে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটা ছড়িয়ে পড়ে। তাই সচেতনতা বাড়ানো হলেও এই চর্চাকে থামিয়ে রাখা যাবে না। ফলে সার্বিক বিষয় বিবেচনায় রেখে সেভাবে সমাজকাঠামোকে প্রস্তুত করা, মানুষের মনস্তত্ত্ব এবং আচরণকেও সেইভাবে তৈরি করতে হবে। না হলে আরও বিপর্যয় বা হত্যার ঘটনা ঘটবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মানুষ হিসেবে সহমর্মিতা, ভালোবাসা, আদর, স্নেহ এই জায়গাগুলোকে ভুলে বিশ্বাসঘাতক হয়ে উঠছি। পরকীয়া করা, পরকীয়া দেখে ফেললে যেকোনো একটা ইনসিডেন্ট ঘটানো, অন্যায়কে কাছে টেনে নেয়া এবং সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর সেটি হলো মানুষকে মেরে ফেলা- এসব ঘটছে।’

এসব ঘটনাকে ‘অ্যালার্মিং’ হিসেবে দেখছেন তানিয়া হক। তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনা একটাও ঘটা উচিত নয়। কিন্তু সমাজে দিনের দিন পর আমরা এসব দেখতে পাচ্ছি। আর এটা খুব অ্যালার্মিং।’

মোবাইল ও ইন্টারনেটের অপরিমিত ব্যবহারকেও দায় দিচ্ছেন এই অধ্যাপক।

জেন্ডার বিশ্লেষক তানিয়া হক বলেন, ‘মানুষের মন ধরাছোঁয়ার বাইরে একটা জায়গায়। পরকীয়া ভালো নাকি খারাপ, সেটা আলাদা বিশ্লেষণ। বিয়ের পর সন্তান জন্ম নেয়া মানে একটা দায়িত্ব তৈরি হয়। আমি বলছি না যে রেসপনসিবিলিটির জন্য নিজের মনকে কষ্ট দিতে হবে। কিন্তু যদি বলেন সন্তানের কথা, সেখানে বাবা-মার দায়িত্ববোধ থাকতে হবে।’

নির্যাতন সয়ে সংসার টিকিয়ে রাখার বিপক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরে এই অধ্যাপক বলেন, ‘নিজের লোভের জায়গাটা নিজের সংবরণ করতে হবে। কারণ সন্তান কোনো দোষ করেনি। হয়তো বলা যায়, স্বামীকে ভালো লাগছে না, তার সঙ্গে থাকতে ইচ্ছে করছে না, কিন্তু তার জন্য তো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করা যায় না।’

বিয়েকে একটা ‘মৌলিক জায়গা’ অভিহিত করে তানিয়া হক বলেন, ‘বিয়ের ক্ষেত্রে আরেকটু বোঝাপড়া করে করা উচিত। এখানে আমার মনে হয় কিছু জ্যামিতিক সিস্টেম তৈরি করা উচিত। যাচাই-বাছাই করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।’

বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে কেউ জড়িয়ে গেলেও সংকট সমাধানে সমঝোতাকে সমাধান হিসেবে দেখছেন এই অধ্যাপক।

তিনি বলেন, ‘তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকবেন না, ওই ছেলের সঙ্গে থাকতে চান। সেখানে সমঝোতার একটা জায়গা বের করা দরকার। আমরা সমঝোতায় যেতে চাই না। সমঝোতাকে আমরা ভয় পাই, কনফ্লিক্টকে আমরা আমন্ত্রণ জানাই। যার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে আমাদের সোসাইটিতে এ ধরনের ঘটনা।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাকে সামনে এনে তানিয়া হকের দাবি, ‘সত্যকে ভয় পাওয়ার একটা প্রবণতা’ সমাজে আছে।

তিনি বলেন, ‘ঘটনা জানাজানি হয়ে যাবে বলে সে (লিমা) হয়তো তার স্বামীকে বলতে ভয় পেয়েছে। কিন্তু দুটো সন্তানকে মেরে ফেলতে এক ফোঁটা ভয় পায়নি। কিন্তু সে সত্যকে ভয় পেয়ে ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিজ করে ফেলল।’

তানিয়া হকের মতে, ‘আমাদের পলিসি তৈরি হয়, কিন্তু পলিসির ইমপ্যাক্ট অ্যানালাইসিস হয় না। পারিবারিক বিষয় নিয়ে প্রচুর গবেষণা হওয়া দরকার। সেটাও হয় না।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার বিশ্লেষণ করে ‘আমরাই পারি'-এর নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাতৃত্বকে আমরা মহান করে ফেলি। আমরা মনে করি, সন্তানের যত্নআত্তি থেকে শুরু করে সব করবে মা। কিন্তু মা যে একজন মানুষ, তারও যে মানসিক টানাপড়েন হতে পারে, সন্তান লালনপালন যে বিরক্তিকর হতে পারে, এটা আমরা জানি না, আমরা মানি না।’

এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘মায়েদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভালো রাখার কোনো ব্যবস্থা আমাদের নেই। যেটা থাকলে ভালো হতো। ভালো রাখার কোনো চেষ্টা নেই। আমরা ধরে নিই, এটা অবধারিত।’

বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক সামাজিক নৈতিকতা দিয়ে বন্ধ করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন না জিনাত আরা হক। তিনি বলেন, ‘ভালোবাসার আমরা যত নামই দিই না কেন, শ্লীল, অশ্লীল, খারাপ, ভালো; ভালোবাসা আসলে কাগজে মেপে হয় না। এটা মনের বিষয়। শিকল দিয়েও বাঁধা যায় না। শিকল দিয়ে বাঁধা যায় না বলেই আমরা অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান তৈরি করি, রুলস তৈরি করি, ভ্যালুজ তৈরি করি। এগুলো করার মধ্য দিয়ে আমরা আসলে মানুষকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি।’

সমাজের প্রচলিত ধারণাগুলোও মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলেও মনে করেন তিনি।

জিনাত আরা হক বলেন, ‘বিয়ে করলে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে ভালোবাসবে- এটা তো বইয়ের নিয়ম। বইয়ের নিয়ম মনে নাও খাটতে পারে। স্বামীর স্ত্রীকে বা স্ত্রীর স্বামীকে ভালো নাও লাগতে পারে, অন্য কাউকেও ভালো লাগতে পারে। এইগুলো স্বাভাবিক, সহজাত বিষয়। এগুলো ন্যাচারাল। কারণ, আমরা মানুষ, আমাদের শরীরের অনেক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আছে। মানসিক টানাপড়েন থাকবেই।’

ফলে কারও প্রতি কারও ভালো লাগাকে অন্যায় বলে মনে করেন না তিনি। বলেন, ‘আমরা এটাকে অন্যায়, পাপ বলে কিছু ট্যাবু দিয়ে দিই। এ কারণে শেষ পর্যন্ত একটা মানুষকে হন্তারক হয়ে উঠতে হয়, হত্যা করতে হয় মানুষকে। মানুষ যদি ভালোবাসতে পারে, হন্তারক হতে পারে না।’

সামাজিক ট্যাবুর কারণে ব্যক্তি মানুষ চাপে পড়ে থাকেন বলে মনে করেন এই অধিকারকর্মী। তিনি বলেন, ‘চাপে পড়ে থাকেন বলেই হিতাহিত জ্ঞান নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু অন্য মানুষের সঙ্গে সম্পর্ককে যদি আমরা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারতাম, এটা অন্যায় হিসেবে না দেখতাম, তাহলে তিনি নিজের কথা বলতে পারতেন, লুকোছাপার দরকার ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবে সমাজ তৈরি করতে চাই, সেটা করতে গিয়ে সমস্যা তৈরি করি। ফলে সমাজ তো দায়ী, অবশ্যই দায়ী। আমরা মনে করি যেসব নিয়ম-কানুন বানিয়েছি, সেভাবে সমাজ চলবে। এটা করতে গিয়ে আমাদের সবাইকে এক ধরনের শিকলে বেঁধে দেয়া হয়। শিকলে আমরা কেউ থাকতে চাই না।’

জিনাত আরা হক মনে করেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওই নারী যদি হত্যাকারী হয়েও থাকেন, তিনি হত্যাকারী হতেন না, যদি তার ভালোবাসায় বিধিনিষেধ আরোপ না থাকত।

তার মতে, ‘এখন সমাজ বদলাচ্ছে। বুঝতে হবে, মানুষের মনকে উন্মুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিলে এসব হত্যার ঘটনা ঘটবে না।’

মাতৃত্বকে মহান করে না দেখে নারীদের ওপর থেকে সেই বোঝা কমানো উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

জিনাত আরা হক বলেন, ‘নারীদের মাতৃত্বের বোঝা যেটা, সেখান থেকে রিল্যাক্স করে দিতে হবে। মাকে এত চাপ দেয়া যাবে না। তার জন্য স্পেস তৈরি করতে হবে। মা হওয়া মানে তার শখ, আহ্লাদ সব শেষ হয়ে যাওয়া না। এই ভাবনাগুলো অনেক বেশি আলোচনা করতে হবে, মানুষকে ট্রেইনআপ করতে হবে। মগজে ঢোকাতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর