বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পণ্যমূল্যের ‘দাপটে’ অস্থির কলকাতাও

  •    
  • ১৭ মার্চ, ২০২২ ১৬:২১

চাল, ডাল, আটা, ময়দা, ছোলা, মটর, ভোজ্যতেল, আলু, পিঁয়াজ, সবজি প্রত্যেকটি জিনিসের দাম খেটে খাওয়া, সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষকে পীড়া দিচ্ছে। তরুণ নস্কর নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘সব জিনিসের দাম বেড়েছে। দোকানে চায়ের খরিদ্দারের সংখ্যা কমেছে। পুঁজি ভেঙে আর কতদিন সংসার চালাতে পারব জানি না।’

যেন আতঙ্কিত।

মাঝবয়সী লোকটি বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলতে থাকেন, ‘বাপরে, বাপ! যাতে হাত দিচ্চি, যেন কারেন্ট মারচে।’

আবার অনেকে হাতে নিয়েও রেখে দিচ্ছেন বা জিনিস কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। বহু মানুষ প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও দাম বেশির কথা ভেবে, প্রয়োজন থেকে দূরে থাকছেন বা আংশিক ক্রয় করছেন।

এটাই পশ্চিমবঙ্গের এখনকার সামগ্রিক বাজার চিত্র।

করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর দেশে দেশে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিজনিত যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তার বাইরে নয় ভারতও। বাংলাদেশ লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গও একই সমস্যায় জর্জর।

চাল, ডাল, আটা, ময়দা, ছোলা, মটর, ভোজ্যতেল, আলু, পিঁয়াজ, সবজি প্রত্যেকটি জিনিসের দাম খেটে খাওয়া, সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষকে পীড়া দিচ্ছে।

কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের খোলা বাজার নীতি ও পণ্য মজুত করার ওপর থেকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়ায় দেশের কয়েকটি বৃহৎ ব্যবসায়ীর হাতে ক্রমশ বাজার দরের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় নীতি শিথিল ও বিশ্ব বাজারে ব্যারেল প্রতি অশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পেট্রোল-ডিজেল, গ্যাসের দাম বাড়ছেই।

পশ্চিমবঙ্গেও দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের। ছবি: নিউজবাংলা

তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ রয়েছে। সবকিছুর পরিবহন খরচ বেড়েছে। সঙ্গে, খামখেয়ালি আবহাওয়ার ঘন ঘন নিম্নচাপের বৃষ্টিতে খেতের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি।

‘ভোজ্যতেলের যা দাম বেড়েছে, তেলে ভাজা বিক্রি করে পেট চালাবার দিন শেষ হয়ে গেছে- বলছিলেন কল্যাণী মেইন রেলওয়ে স্টেশন রোডের তেলে ভাজা বিক্রেতা সুকুমার।

‘আগের মতো আর বিক্রি বাটা নেই’- বলছিলেন তিনি।

সমস্যাটা কী?- জানতে চাইলে সুকুমার বলে, ‘মানুষের হাতে পয়সা কমেছে। মানুষ খাচ্ছে কম। ফলে বিক্রি কমেছে।’

কামরাবাদের বাসিন্দা সোনারপুর রেলওয়ে স্টেশন বাজারে নিয়মিত বাজার করেন বালীগঞ্জের চা বিক্রেতা তরুণ নস্কর। তিনি বলেন, ‘সব জিনিসের দাম বেড়েছে। দোকানে চায়ের খরিদ্দারের সংখ্যা কমেছে। পুঁজি ভেঙে আর কতদিন সংসার চালাতে পারব জানি না।’

কলেজ স্ট্রিট বাজারে সবজি বিক্রেতা বর্ধমানের পান্ডুয়ার বাসিন্দা এমডি উত্তম বলছেন, ‘এই তো বসে আছি, দেখছেন তো কোন খরিদ্দার নেই। লোকের হাতে টাকা নেই। সবজি কিনছে না, শুধু আলু খাচ্ছে।

‘বাড়িতে বউ আর দুটো মেয়ে আছে। একটা মেয়ে ক্লাস সেভেন ও একটা ক্লাস এইটে পড়ে। বউয়ের গহনা বন্ধক দিয়ে সংসার চলছে। কীভাবে সব চলবে, জানি না।’

শিয়ালদার পাইকারি সবজি মার্কেট নফর বাবুর বাজারে হাওড়া জেলা থেকে পটল নিয়ে এসেছেন সফিকুল আলম। চাষির থেকে কিনে পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে এসেছেন। এক রাশ চিন্তা নিয়ে খরিদ্দারের আশায় বসে আছেন।

ছয়শ টাকা পাল্লা পটল। এক পাল্লা মানে পাঁচ কেজি। তার কম ওজনে পাইকারি বাজারে মাল বিক্রি হয় না। বসে আছেন কিন্তু কোন খরিদ্দার নেই। বিক্রি না হলে মাল শুকিয়ে নষ্ট হবে। পরে আসল তুলতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে। জানাচ্ছেন সফিকুল।

বনমালী লস্কর নফর বাবুর পাইকারি বাজারে বড় বেগুন এনেছেন।

৭৫ টাকা (আসলে রুপি, বর্তমানে এক রুপি বাংলাদেশি টাকায় ১ টাকা ১৩ পয়সা) পাল্লা বলছেন, ৬০ টাকা হলেও দিয়ে দেবেন, কিন্তু কোনো খরিদ্দার নেই। বিক্রি না হলে, লস করে মাল ছেড়ে দিতে হবে বলে জানাচ্ছেন বনমালী।

চাঁদা মারির বাসিন্দা তারক বিশ্বাস কল্যাণীর ২ নম্বর মার্কেটে সবজি বিক্রেতা। বেলা একটা পর্যন্ত অধিকাংশ অবিক্রিত সবজি নিয়ে হতাশ বসে আছেন। এ রকম অবিক্রিত মাল নিয়ে বাজারে বসে আছেন অনেকেই।

কলকাতার বোস পুকুরের বাসিন্দা বেসরকারি অফিসে কর্মরত অচিন রায় কসবার সবজি বাজারে দাঁড়িয়ে বলছেন, ‘লকডাউনের পর থেকে কোম্পানি নিয়মিত বেতন দিচ্ছে না। বেতন আগের থেকে কমিয়ে দিয়েছে। বাজার দর যেভাবে বেড়েছে, কোন জিনিশে হাত দেয়ার উপায় নেই।’

তিনি বলেন, ‘যে ৫ হাজার টাকা বেতন পায় আর যে ৫০ হাজার টাকা বেতন পায়, খোলা বাজারে, চাল, ডাল, সবজি থেকে মুদি, মাছ, মাংস সবার জন্য একই দাম। নিম্ন আয়, আয়হীন মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকাটাই এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

কোন পণ্যের দাম কতহাল আমলের তুমুল আলোচনা যে পণ্য নিয়ে, সেই ভোজ্যতেলের প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল ব্র্যান্ডভেদে লিটার প্রতি ১৬৫ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

কলকাতায় সরিষার তেলের চাহিদা বরাবরেই বেশি। ঘানি ভাঙা সরিষার তেল সেখানে লিটারে ২১০ টাকা, প্যাকেটজাত সর্ষের তেল ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা লিটার দরে বিক্রি হয়।

প্যাকেটজাত সানফ্লাওয়ার রিফাইন তেল ১৬৫ থেকে ১৮০ টাকা লিটার দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

চালের দাম প্রকারভেদে ভিন্ন দাম। সবচেয়ে মোটা স্বর্ণা চাল ২৪ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হয়।

রত্না নামে এক ধরনের চাল ৩৮ থেকে ৪০ টাকায়, মিনিকেট নামে বিক্রি হওয়া চালের মধ্যে একটু মোটা যেটি, সেটি ৪২ আর চিকনটি ৪৫ টাকা, বাঁশকাঠি নামে এক ধরনের চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হয়।

পশ্চিমবঙ্গের কলেজ স্ট্রিট, কল্যাণী, কলকাতা, সোনারপুরসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে কাঁচামালে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ২০ টাকা হেরফের রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গেও দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের। ছবি: নিউজবাংলা

তবে মোটামুটি সব বাজারেই আলু ২০ টাকা (রুপি) কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে রাজ্য রান্নার উপকরণটির দাম বেঁধে দিয়েছে ১৪ টাকা।

এসব বাজারে পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, পটল ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, ঢেড়শ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, টোম্যাটো ২৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

কল্যাণী পৌরসভার ২ নম্বর বাজারের স্টেশনারি দোকানের মালিক রতিকান্ত মণ্ডল বলেন, ‘করোনার আগে পর্যন্ত মাসের শেষ থেকে শুরু পর্যন্ত খরিদ্দারকে মাল দিয়ে পেরে উঠতাম না। এখন বিক্রি বাটা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। দোকানে খরিদ্দার কমে গেছে। তাই মালও বেশি তুলছি না।’

এ বিভাগের আরো খবর