আগে লভ্যাংশ ঘোষণা করা পাঁচটি ব্যাংকের মতোই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএফআইসি ব্যাংকের আয়ও মহামারির দ্বিতীয় বছরে বেড়েছে ব্যাপক হারে। তবে কোম্পানিটি লভ্যাংশ বাড়ায়নি। আর অতীতের মতোই এবারও নগদের বদলে বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ বোনাস অর্থাৎ প্রতি ২০টি শেয়ারের বিপরীতে একটি বোনাস শেয়ার দেয়ার কথা জানানো হয়েছে।
বুধবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য অনুসারে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির আয় আগের বছরের তুলনায় সোয়া দুই গুণের মতো বেড়েছে।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আইএফআইসি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৪৯ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ৬৭ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ২২২ শতাংশ আয় করেছে কোম্পানিটি।
আয়ের পাশাপাশি কোম্পানিটির সম্পদমূল্যও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট সম্পদ দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৩ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার টাকা, যা আগের বছরের ডিসেম্বর শেষে ছিল ২ হাজার ৭১২ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।
শেয়ারপ্রতি বর্তমানে সম্পদ আছে ১৭ টাকা ৭৮ পয়সার, যা আগের বছর ছিল ১৫ টাকা ৯৫ পয়সা।
যারা এই লভ্যাংশ নিতে চায়, তাদেরকে আগামী ১২ এপ্রিল পর্যন্ত শেয়ার ধরে রাখতে হবে। অর্থাৎ সেদিন হবে রেকর্ড ডেট। লভ্যাংশ চূড়ান্ত করতে বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম ডাকা হয়েছে ১২ মে।
আইএফআইসি ব্যাংকের লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা
১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ব্যাংকটি বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। গত কয়েক বছরে অন্য ব্যাংকগুলো নগদ লভ্যাংশে জোর দিলেও আইএফআইসি ব্যাংকটি এই পথে হাঁটছে না।
এবারের অর্ধেকেরও কম আয় করে ২০২০ সালের জন্যও এবারের সমান ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়া হয়েছিল।
আগের বছর কোম্পানিটি এই সিদ্ধান্ত জানানোর পর শেয়ারের ব্যাপক দরপতন হয়েছিল। গত বছরের ৪ এপ্রিল লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে মূল্যসীমা না থাকার দিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ১১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়ে যায় ৯ টাকা। এক দিনেই কমে ২১ দশমিক ০৫ শতাংশ।
তবে ওই বছরের মে মাস থেকে এই ব্যাংকটির শেয়ারদরের পালে হাওয়া লাগে।
নেপাল বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা আইএফআইসির বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৪৪১ কোটি ৮৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫৩ টাকায় নেপালের নাগরিক সারিকা চৌধুরী আইএফআইসির কাছে থাকা নেপাল বাংলাদেশের সব শেয়ার কিনে নিচ্ছেন।
এই শেয়ার বিক্রিকে কেন্দ্র করে প্রায়ই আইএফআইসির শেয়ারদরে উত্থান পতন দেখা গেছে। এর মধ্যে গত ১৮ নভেম্বর শেয়ারদর ওঠে গত দুই বছরের সর্বোচ্চ অবস্থান ২১ টাকা ৮০ পয়সায়।
তবে সেদিন থেকেই শুরু হয় দর সংশোধন। লভ্যাংশ ঘোষণার দিন শেয়ারদর ছিল ১৫ টাকা ৭০ পয়সা। এদিক ব্যাংকটি দর হারায় ৩০ পয়সা।
এবার ভালো লভ্যাংশ পাওয়া যাবে, এমন আশায় লভ্যাংশ ঘোষণার আগে দুই দিনে ১৪ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১৬ টাকায় উঠেছিল।
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য এর আগে আরও পাঁচটি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর সবগুলোরই আয় বেড়েছে আগের বছরের তুলনায়।
এর মধ্যে ডাচ্-বাংলা নগদ লভ্যাংশ বাড়িয়ে বোনাস শেয়ার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই ধরনের মিলিয়ে তাদের লভ্যাংশ কিছুটা কমেছে। আগের বছর লভ্যাংশ ছিল ৩০ শতাংশ, এবার তা প্রস্তাব করা হয়েছে সাড়ে ২৭ শতাংশ। এর মধ্যে ১০ শতাংশ দেয়া হবে বোনাস, আর সাড়ে ১৭ শতাংশ নগদ।
অন্যদিকে ব্র্যাক ব্যাংক নগদ লভ্যাংশ কমিয়ে বোনাস শেয়ার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকটি আগের বছর ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল। এবার তারা দেবে সাড়ে সাত শতাংশ নগদ ও সমপরিমাণ বোনাস।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক গত বছর ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস দিয়েছিল। এবারও সমপরিমাণ বোনাস শেয়ারের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নগদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উত্তরা ব্যাংক গত বছর সাড়ে ১২ শতাংশ করে নগদ ও বোনাস শেয়ার দিয়েছিল। এবার বাড়িয়ে ১৪ শতাংশ করে ২৮ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে তারা।
ব্যাংক এশিয়া এবার বিনিয়োগকারীদের ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগের বছর লভ্যাংশ ছিল ১০ শতাংশ।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এবার বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগের বছর ব্যাংকটি ৭ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল।