কক্সবাজার আদালত এলাকা থেকে তুলে নিয়ে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে ওই নারীর অভিযোগ মামলা হিসেবে নেয়া হয়। তার পরই মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।
বুধবার বিকেলে ওই নারীকে ছাড়পত্র দিয়েছে ওসিসি কর্তৃপক্ষ। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে পরিবারের জিম্মায় পাঠিয়েছে পুলিশ। যদিও তার দায়ের করা মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) থেকে যাবতীয় চিকিৎসা শেষে তাকে ছাড়পত্র দেন চিকিৎসকরা। উপযুক্ত নারী হওয়ায় তার ২২ ধারার জবানবন্দি নেয়া হয়নি। সে ক্ষেত্রে পুলিশ তার দায়ের করা এজাহারের বক্তব্যকেই জবানবন্দি হিসেবে নিয়েছে।’
মামলার আসামিরা হলেন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ফিরোজ আহমদ, রাসেল উদ্দিন, নুরুল ইসলাম ও মো. শরীফ।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ও কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (অপারেশন) নাছির উদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে আসার পর আদালতের মাধ্যমে তার স্বজনদের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। এই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে তারা গ্রেপ্তার হবে।’
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি ফিরোজ আহমদ ও মো. শরীফ বিভিন্ন সময় ওই নারীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে নিয়মিত ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেয়া হতো।
অবশেষে গত সোমবার বেলা ২টার দিকে কক্সবাজার আদলতপাড়ায় আইনজীবী একরামুল হুদার চেম্বার থেকে বের হলে আসামিরা ওই নারীকে ঘিরে ফেলেন। একপর্যায়ে ফিরোজ ও শরীফ তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বাধা দিলে অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজন এসে তার হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে একটি গাড়িতে নিয়ে তোলেন।
এরপর ফিরোজ ভুক্তভোগী নারীর গলা থেকে ১২ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন এবং সঙ্গে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেন। এ সময় পথচারীরা বাঁচাতে এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা গাড়ি নিয়ে কক্সবাজার ল্যাবরেটরি স্কুলসংলগ্ন (বাহারছড়া) ফিরোজের আত্মীয় ফজল কাদেরের সেমিপাকা টিনশেড বাসায় নিয়ে ওই নারীকে আটকে রাখেন।
পরে ফিরোজ ও শরীফ ওই নারীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার হুমকি এবং ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে একইভাবে নুরুল ইসলামও তাকে ধর্ষণ করেন।
কিছুক্ষণ পর ২ নম্বর অভিযুক্ত রাসেল উদ্দিন রুমে এসে নিজেকে পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে বিষয়টি কাউকে জানালে এবং বেশি বাড়াবাড়ি করলে মানব পাচার মামলায় চালান করে দেয়ার হুমকি দেন।
একপর্যায়ে রাসেলও তাকে ধর্ষণ করেন। এরপর রাসেল ও শরীফ তাকে টেনে-হিঁচড়ে গেটের বাইরে এনে ধাক্কা দিয়ে গেট বন্ধ করে দেন। রাস্তায় থাকা এক ব্যক্তি তাৎক্ষণিক জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এ কল দিলে আসামিরা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করে।
মঙ্গলবার ওই নারী নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন, ২০২১ সালের ২৩ মে বাড়িতে ঢুকে তার নাক, ঠোঁটসহ শরীরের নানা স্থানে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দীর্ঘ কয়েক মাস চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও ঢাকা পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে সম্প্রতি বাড়ি ফেরেন তিনি। এ ঘটনায় মামলা হলে ‘চিহ্নিত ডাকাত’ মোরশেদ আত্মসমর্পণ করেন।
গত মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানির তারিখ ছিল। তাই মোরশেদের জামিনের বিরোধিতা ও ন্যায়বিচার পেতে করণীয় নির্ধারণে সোমবার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে আদালতপাড়ায় যান ভুক্তভোগী। পরে সেখান থেকেই তাকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
ভুক্তভোগী নারীর দাবি, তাকে যারা ধর্ষণ করেছেন, আগের ঘটনাটির সঙ্গে তাদের যোগসূত্র আছে।