মূল আয়ের ওপর ২ শতাংশ ন্যূনতম করের প্রভাবে প্রত্যাশিত মুনাফা বাড়েনি বলে দাবি করেছে মোবাইল অপারেটর রবি।
এই কর অপারেটরগুলোর ওপর অযৌক্তিকভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে দাবি করে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত সিইও অ্যান্ড সিএফও এম রিয়াজ রশীদ বলেন, ‘২০২১ সালে মুনাফা অর্জন করতে পারলেও ন্যূনতম করের ফলে গুরুতর ক্ষতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এই অযৌক্তিক করের বাধ্যবাধকতা না থাকলে আমাদের মুনাফা ১৮০ কোটি টাকার পরিবর্তে ৩৪৩ কোটি টাকা হতো।’
বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদন তুলে ধরে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
এম রিয়াজ রশীদ বলেন, ‘তালিকাভুক্ত টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোর জন্য করপোরেট করে যে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছে, ন্যূনতম করের প্রভাবে সে সুবিধা থেকেও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।’
এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই কর থেকে মুক্ত করার অুনরোধ করেন তিনি।
আর্থিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২১ সাল শেষে রবির আয় ও গ্রাহক দুটিই বেড়েছে। অপারেটরটি গত বছর আয় করেছে ৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
একই সময় অপারেটরটির গ্রাহকও বেড়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। বলা হয়, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে রবির গ্রাহকসংখ্যা ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৫ কোটি ৩৭ লাখে পৌঁছেছে, যা দেশের মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ।
২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ২ হাজার ৪৬ কোটি টাকাসহ বছর শেষে রবির আয় দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকা।
এম রিয়াজ রশীদ বলেন, ‘২০২১ সালসহ টানা তিন বছর রবি টেলিকম খাতে সর্বোচ্চ আয় বৃদ্ধির হার নিশ্চিত করেছে। ফোরজিতে রবির আধিপত্য প্রমাণ করে উদ্ভাবনকে পুঁজি করে ডিজিটাল রূপান্তর যাত্রায় সঠিক পথেই রয়েছি আমরা।’
দেশের মোট গ্রাহকের ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ ফোরজি গ্রাহক নিয়ে গত বছর ফোরজি সেবায় নেতৃত্ব আরও সুসংহত করেছে রবি। এ সময়ে ফোরজি গ্রাহকসংখ্যা ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২ কোটি ৩৮ লাখে পৌঁছেছে।
রবি ১৪ হাজার ৮২২টি ফোরজি সাইট দিয়ে ৯৮ দশমিক ১ শতাংশ গ্রাহকের জন্য ফোরজি কাভারেজ নিশ্চিত করেছে।
২০২১ সালে রবির মোট গ্রাহকের ৭৩ দশমিক ৭ শতাংশ গ্রাহকই ছিলেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, যা এ খাতে সর্বোচ্চ।
গত বছর রবির ডাটা ব্যবহারকারীরা গড়ে প্রতি মাসে ৪ জিবি ডাটা ব্যবহার করেছেন।
২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে প্রতি মাসে গ্রাহকপ্রতি ডাটা ব্যবহারের পরিমাণ ৪১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে।
এক বছরের ব্যবধানে ডাটা গ্রাহকসংখ্যা ১২ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৯৬ লাখে পৌঁছেছে।
গত বছর ভয়েস থেকে রবির আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ভয়েস থেকে আয়ের হার ১১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে ডাটায় ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০২০ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় ২০২১ সালের একই প্রান্তিকে ডাটায় আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
২০২১ সালে ৪৯৯ কোটি টাকা মূলধনি বিনিয়োগসহ বছর শেষে রবির মূলধনি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা।
গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে ১৩ কোটি টাকা কর-পরবর্তী (পিএটি) মুনাফাসহ ১৮০ কোটি টাকা পিএটি নিয়ে বছর শেষ করে রবি। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে পিএটি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ।
সে বছর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রবি জমা দেয় ৪ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালের মোট আয়ের ৫৬ দশমিক ২ শতাংশ।
২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল দশমিক শূন্য ২ টাকা এবং পুরো বছরের ইপিএস ছিল দশমিক ৩৪ টাকা, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
রবির পরিচালনা পর্ষদ ২ শতাংশ হারে চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে। এর আগে ঘোষিত ৩ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশসহ ২০২১ সালে দেয়া মোট নগদ লভ্যাংশ ৫ শতাংশ। ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত বোর্ডসভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রবির ২৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে।