ক্রয়ক্ষমতা যদি আগের চেয়ে অনেক বেড়েই থাকে, তাহলে মানুষ কেন নিত্যপণ্য কিনতে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের পেছনে ছুটছে, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার দুপুরে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে লিফলেট বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ প্রশ্ন তোলেন তিনি।
জনগণের ক্রয়ক্ষমতা অনেক গুণ বেড়েছে বলে মাঝেমধ্যেই মন্ত্রী-এমপিদের বক্তব্য দিতে দেখা যায়। গত ৩ মার্চ প্রেস ক্লাবে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। আর ১২ মার্চ কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠানে এলজিআরডিমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, দেশের উন্নয়নের সঙ্গে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও মাথাপিছু আয়ের পরিমাণও বেড়েছে।
এসব বক্তব্যের সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে তো হাছান মাহমুদের, ওবায়দুল কাদেরের। বেড়েছে যুবলীগ-ছাত্রলীগের। সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি।
জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে টিসিবির ট্রাকের পেছনে এত বড় লাইন হতো না। মন্ত্রীরা জনগণের সঙ্গে রসিকতা করছেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে নিয়ে অনেক ছবক দিচ্ছেন। কেন উনি (প্রধানমন্ত্রী) ক্ষমতা ছাড়ছেন না? কেন উনি গদি ছাড়ছেন না? কারণ উনি ক্ষমতা থেকে সরে গেলে আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ দলটির সিনিয়র নেতারা দখল করবেন।
‘এই ভয়ে তিনি জোর করে অগণতান্ত্রিকভাবে গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে জবরদখল করে বসে আছেন। বিশ্বের নিষ্ঠুরতম সরকাররা যা করে, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তিনিও তাই করছেন।’
রিজভী বলেন, ‘জনগণকে ক্ষুধা-দারিদ্যের মধ্যে ফেলে দিয়ে সরকার এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে দেশে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি দেখা দিয়েছে।
গণবিরোধী সরকার, জনগণ খেয়ে-পরে বাঁচল কি না, এটা তাগিদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন মনে করে না। দেশে আজ যদি নির্বাচিত সরকার থাকত, তাদের জবাবদিহিতা থাকত, তাহলে যেভাবেই হোক এটা নিয়ন্ত্রণ করত।’
তিনি বলেন, ‘আজকে গণমাধ্যমে আসছে মানুষ দুপুর বেলা ভাতের বদলে বনরুটি ও কলা খেয়ে থাকছে। একেবারে দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
‘জনগণকে ক্ষুধা-অনিদ্রায় রেখে শুধু নিজের ও নিজের লোকদের ভালো করছেন। নিজের লোকেরা বিদেশে টাকা পাচার, ডুপ্লেক্স বাড়ি করার ব্যবস্থা করছেন। আর দেশের মানুষ কোনো রকমভাবে কলা-রুটি খেয়ে বেঁচে থাকে। তাও আবার সরকারি চাকরিজীবী মধ্যম আয়ের মানুষ।’
রিজভী বলেন, ‘আগে যারা মেসে থাকত তারা একটা ডিম ভেজে ভাত খেত। সেই ডিম ভেজে ভাত খাওয়ার সামর্থ্য আর মধ্যম আয়ের মানুষের নেই। নিম্ন আয়ের মানুষের কথা বাদই দিলাম।’
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘এরা নিজেরা ভালো থেকে দুর্ভিক্ষকে বিলাসবহুল হিসেবে দেখতে চায়। তাদের তো খাবারের কোনো অভাব নেই। তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে রাস্তা, ফুটপাতে ডাস্টবিন থেকে খাবার তুলে মানুষ খেয়েছে। এখন সেই পরিণতি আমরা আবার দেখছি।
‘আমরা ’৭৫-এ দেখেছি এখন শেখ হাসিনাকে দেখছি। তার বাবার আমলে যা হয়েছে এখন তার আমলেও হতে যাচ্ছে।’
‘বিএনপির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে’- আওয়ামী লীগের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিদিন হামলা-মামলার শিকার হচ্ছে। সিন্ডিকেট গোটা মাফিয়া চক্র সব তারাই। ক্যাসিনো-জুয়া সব সিন্ডিকেটের মালিক তারা। তারা কারা তাদের নামও তো আপনাদের গণমাধ্যমে এসেছে।
‘সুতরাং এগুলো তারা বিভ্রান্ত করার জন্য বলেন। কিন্তু মানুষ বিভ্রান্ত হয় না। তারা আরও হাসির পাত্র হন। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা যখন কথা বলেন, তখন তারা হাসির পাত্র হন।’
লিফলেট বিতরণকালে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যুবদল মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক গোলাম মওলা শাহিন, সদস্য সচিব খন্দকার এনামুল হক এনাম, যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম নয়ন, মহানগর পূর্ব ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ হাসান জ্যাকি, সদস্য সচিব আলামিন হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।