আগামী ২০ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে একযোগে পালিত হবে ২৬তম ‘জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ’। এ সপ্তাহে প্রায় চার কোটি শিশুকে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। তবে পবিত্র শবে বরাতের কারণে সরকারি ছুটি থাকায় এই কার্যক্রম এবার পালিত হবে ৬ দিন।
লক্ষ্য পূরণে এক লাখ ২০ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩৩ হাজার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন সামিউল ইসলাম অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বুধবার বেলা ১১টায় এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কৃমি নির্মূলের লক্ষ্যে ৫-১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০ মার্চ ২০২২ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে ২৬তম জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পালিত হতে যাচ্ছে।’
দেশের প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে ৫ -১১ বছর বয়সী সব শিশুকে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে ১২-১৬ বছর বয়সী সব শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ঔষধ (মেবোজল বা ভারমন্স ৫০০ মি.গ্রাম) ভরা পেটে সেবন করানো হবে।
এই লক্ষ্যে হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল প্রকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের ৫-১৬ বছর বয়সী সব (স্কুলগামী, স্কুল বহির্ভূত, স্কুল থেকে ঝরে পড়া, পথ শিশু, কর্মজীবী শিশু) শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ঔষধ বিনা মূল্যে সেবন করানো হবে।
একইসঙ্গে কৃমির পূণঃসংক্রমণ রোধে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। এসব শিশুদেরকে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহারে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয়ার ফলে তা অভ্যাসে পরিণত হবে এবং তারা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যার ব্যাপারে সচেতন হবে। যা থেকে ভবিষ্যতে শিশুরা কৃমিসহ অন্যান্য পরজীবী বাহিত রোগ-ব্যাধি থেকেও পরিত্রাণ পাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, কৃমির সংক্রমণ বয়স্ক মানুষের চেয়ে শিশুদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশী (০-৪ বছর – ৭ শতাংশ , ৫-১৪ বছর - ৩২%, ১৫-২৪ বছর - ১৫%, ২৫-৪৪ বছর -৭%, ৪৫-৫৪ বছর - ৫%, ৫৫ বছরের অধিক বয়সী
মানুষের মধ্যে ৪%)।
উল্লেখিত জরীপের ওপর ভিত্তি করেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিশুদের মাঝে এই কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। আমাদের দেশে কর্মসূচিটি ২০০৫ সালে প্রথমত ৩ জেলায় নেয়া হয়। পর্যায়ক্রমে জুন ২০০৭ পর্যন্ত ১৬ জেলায়, মে ২০০৮ পর্যন্ত ২৪ জেলায় ও নভেম্বর ২০০৮ থেকে ৬৪টি জেলায় কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমটি সম্প্রসারিত করা হয়।
শুরুতে এই কর্মসূচিটি শুধুমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬-১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে সীমিত রেখে চালু করা হয়।
কারণ সমাজের ৬-১২ বছর বয়সী অধিক সংখ্যক শিশুর উপস্থিতি প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহজেই নিশ্চিত করা হয়।
আর তাই প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন - সরকারি, বেসরকারি, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, মক্তব-মাদ্রাসা ও এনজিও পরিচালিত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খুব সহজেই অধিক সংখ্যক শিশুকে কৃমি নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করানো হবে।
পরবর্তীতে লক্ষ্য করা যায় যে, ৫ বছর বয়সী অনেক শিশুই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে যায় আর তাই নভেম্বর ২০১০ সাল থেকে উক্ত কর্মসূচীতে ৫ বছর বয়সী শিশুদেরকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ৫-১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের হার সর্বাধিক বিধায় ১২ বছর বা তার অধিক বয়সী শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করতে দেশের সকল মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ২০১৭ সনের এপ্রিল রাউন্ড থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহায়তায় ১২-১৬ বছর বয়সী বা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী কিংবা সমপর্যায়ের বিদ্যালয়গামী ও বিদ্যালয় বহির্ভুত সকল শিশুকেও বিদ্যালয়ে উপস্থিতির মাধ্যমে কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করানো হচ্ছে।