বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শুকাচ্ছে নদী, দুশ্চিন্তায় কৃষক-জেলেরা

  •    
  • ১৬ মার্চ, ২০২২ ০৮:৩০

স্থানীয়রা জানান, গত দুই যুগেও কোনো নদী খনন করা হয়নি। মরা খালের মতো হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই নদীর পানি উপচিয়ে আশপাশের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আর খরা মৌসুমে এসব নদীর পানি দিয়ে আগে যেসব জমি চাষ হতো, সেসব জমি এখন সেচ সংকটে পড়েছে।

দেশে খাদ্যশস্যের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর জেলা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই জেলায় উৎপাদিত ধান, চাল, গম, ভুট্টা, আম, লিচুসহ বিভিন্ন ফল ও শস্য প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়।

ফসল উৎপাদনে বিভিন্ন নদী ও ভূগর্ভস্থ পানির ওপরই নির্ভর করেন এই জেলার বেশির ভাগ কৃষক। তবে গত কয়েক বছরে দিনাজপুর জেলার নদ-নদী ও ভূগর্ভস্থ পানি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এতে কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যয় বাড়ছে।

এ ছাড়া নদীতে পানি না থাকায় এই জেলার মৎস্যজীবীরাও চরম সংকটে পড়েছেন। দেশি প্রজাতির মাছের স্বাদ বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় এবং খনন না হওয়ার কারণে নদীর পানি ভূগর্ভে যেতে পারছে না। ফলে ভুগর্ভস্থ পানির স্থিতিতল নিচে নেমে যাচ্ছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ইতোমধ্যেই নদীগুলোর খনন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খনন সম্পন্ন হলে ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ বেড়ে যাবে।

জেলার বিভিন্ন নদী ঘুরে দেখা গেছে, এগুলোতে পানি নেই বললেই চলে। খরস্রোতা নদীগুলো পরিণত হয়েছে ছোট নালায়। একেকটি নদীর বেশির ভাগ অংশজুড়েই পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের বাকি সময়গুলোতে এই চিত্র চোখে পড়ে।

স্থানীয়রা জানান, গত দুই যুগেও কোনো নদী খনন করা হয়নি। মরা খালের মতো হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই নদীর পানি উপচিয়ে আশপাশের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আর খরা মৌসুমে এসব নদীর পানি দিয়ে আগে যেসব জমি চাষ হতো, সেসব জমি এখন সেচ সংকটে পড়েছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবীরা।

জেলার বিরল উপজেলার ফরক্কাবাদ গ্রামের কৃষক আসলাম আলী বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে এই জায়গায় আমরা কৃষিকাজ করছি। পাঁচ বছর আগেও এই এলাকার নদী থেকে পুনর্ভবা নদীর পানি দিয়ে আমার ফসলের ক্ষেতে পানি দিতাম। দুই বছর ধরে নদীর পানি একেবারে শুকিয়ে গেছে।’

পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত মেশিন দিয়ে জমিতে পানি দেয়া হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা

আসলাম জানান, বর্তমানে মাটিতে গর্ত করে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করে ক্ষেতে দিতে হচ্ছে। মাটির নিচ থেকেও ঠিকমতো পানি উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না। এতে ডিজেলের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

একই সমস্যার কথা উল্লেখ করে সদর উপজেলার করিমুল্লাহপুর গ্রামের কৃষক খায়রুল আলম বলেন, ‘আমাদের ফসল উৎপাদনের খরচ দিন দিন বাড়ছে।’

সদর উপজেলার ফুলতলা গ্রামের মাছ চাষি আজম আলী বলেন, ‘বাড়ির পাশেই পুনর্ভবা নদী। কয়েক বছর আগেও এই নদী থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি। কিন্তু এখন আর নদীতে পানি নেই। ফলে মাছও পাওয়া যায় না। আমি এখন মাছ শিকার বাদ দিয়ে অটো চালাই। কী করব, পরিবার তো চালাইতে হবে।’

আজম জানান, তার মতো আরও অনেক মৎস্যজীবী এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।

দিনাজপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছরই খরা মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্থিতিতল ৩ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। আর প্রতি ৫ বছরে এই স্থিতিতল নামছে স্থানভেদে ১ থেকে ২ ফুট পর্যন্ত। অর্থাৎ শুধু খরা মৌসুমেই নয়, পানির স্থিতিতল নিম্নমুখী বর্ষা মৌসুমেও। গত ১০ বছরে দিনাজপুর জেলায় স্থানভেদে পানির স্থিতিতল নেমেছে ২ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত।

জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গত ৫ বছরের হিসাবে জেলায় মাছের চাহিদা বেড়েছে। তবে সেইভাবে বাড়েনি মৎস্যজীবীর সংখ্যা। হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে জেলায় ১১ হাজার ৫৭ জন নিবন্ধিত জেলে ছিল। ২০২১ সালে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯১২ জনে।

জেলায় বর্তমানে ৫২ হাজার টন মাছের চাহিদা রয়েছে। তবে সে তুলনায় মাছের উৎপাদন বাড়েনি। বর্তমানে সেখানে ১২টি মৎস্য অভয়াশ্রম থাকলে নদীর পানি ও গভীরতা কমে যাওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) খালেদুর রহমান বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে জেলায় পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে কমছে।’

এদিকে দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে নদীর সংখ্যা ১৯। এর মধ্যে পুনর্ভবা, আত্রাই, ঢেপা, গর্ভেশ্বরী, ছোট যমুনা, ইছামতি নদীর খননকাজ শুরু হয়েছে। খনন সম্পন্ন হলে খরা মৌসুমেও পানির স্তর স্বাভাবিক থাকবে।’

ভূগর্ভস্থ পানির স্থিতিতল স্বাভাবিক রাখতে নদী খননের ওপর জোর দিয়েছেন দিনাজপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সদ্যোবিদায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী মুরাদ হাসানও।

এ বিভাগের আরো খবর