দরিদ্র বাবার সন্তান শিশু শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণার অসহায়ত্ব স্পর্শ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুটির দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
ইউনিফর্ম পরে না আসায় শিশু শিক্ষার্থী স্বর্ণাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার সংবাদ মিডিয়ায় প্রকাশ হলে তা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। তাৎক্ষণিক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসককে শিশুটির পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণা। শিশুটির বাবা পৌর শহরের রামচন্দ্রপুর গ্রামের দরিদ্র শাহিনুর ইসলাম একজন সুপারি বিক্রেতা।
নির্ধারিত ইউনিফর্ম না থাকায় স্কুল খোলার প্রথম দিন মঙ্গলবার সাধারণ পোশাক পরেই স্কুলে হাজির হয় স্বর্ণা। কিন্তু ইউনিফর্ম না পরায় এই শিশু শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়। এ নিয়ে নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্কুল ইউনিফর্ম ও চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তা নিয়ে শিশুটির বাড়িতে হাজির হন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী।
মঙ্গলবার রাত ১০টায় পৌর শহরের রামচন্দ্রপুর গ্রামে স্বর্ণাদের বাড়িতে যান জেলা প্রশাসক। এ সময় তিনি স্বর্ণার হাতে স্কুল ইউনিফর্ম ও অর্থ সহায়তা তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতে স্বর্ণার হাতে সহায়তাসামগ্রী তুলে দেন জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী। ছবি: নিউজবাংলা
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ বারিউল করিম খান, ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দীন, ফুলবাড়ী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামীমা আক্তার জাহান তার সঙ্গে ছিলেন।
এ সময় ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসেম আলী নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়ে আগামীতে এ ধরনের আচরণ না করার অঙ্গীকার করেন।
জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী বলেন, ‘ইউনিফর্ম না থাকায় সকালে শিশু শিক্ষার্থীকে স্কুল বের করে দেয়ার ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশ হলে তা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আমাকে বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। সেই নির্দেশের আলোকে শিশু সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণার জন্য নতুন ইউনিফর্ম ও আর্থিক সাহায্য নিয়ে এসেছি। শিশুটির চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু/একদিনের মধ্যে সহযোগিতা পৌঁছে দেয়া হবে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষকের এ ধরনের আচরণে আমরা পুরো শিক্ষা পরিবার লজ্জিত ও মর্মাহত। এ ধরনের ঘটনার জন্য প্রধান শিক্ষককে শো-কজ করা হবে। এ ছাড়া আগামীকাল (বুধবার) এ ব্যাপারে জেলার সব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশনা দেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, ‘ইউনিফর্ম না পরায় বের করে দেয়া হলো স্কুল থেকে’ শিরোনামে মঙ্গলবার বিকেলে নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশ হয়। খবরটি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি দরিদ্র পরিবারের শিশুটির দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।