মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পাবনার ঈশ্বরদী স্টেডিয়ামে চলছে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। গত ১১ মার্চ থেকে মেলা পরিচালনা করছে ঈশ্বরদী পৌরসভা।
মেলায় প্রতারক চক্র লটারির নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গয়না-গাড়ির আশায় গ্রামের দরিদ্র নারী-পুরুষ হাঁস-মুরগিসহ ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র বেচে লটারির টিকিট কিনে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
পৌরসভার অধিভুক্ত আবুল মনসুর খান স্টেডিয়ামের সংস্কারে অর্থ সংগ্রহের জন্য মেলা আয়োজন কথা জানান ঈশ্বরদীর মেয়র ইসাহাক মালিথা। তবে আয়ের বড় অংশ ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ উঠেছে। মেলায় র্যাফেল ড্র আয়োজনেরও অনুমোদন নেই।মঙ্গলবার স্টেডিয়ামে দেখা যায়, পৌর শিল্প ও বাণিজ্য মেলার বিশাল গেট। বাইরে চাকচিক্য, ভেতরে নামমাত্র স্টলে তেমন পণ্য নেই। মাঠের মাঝখানে বিশাল মঞ্চে ঝুলছে দৈনিক স্বপ্নপুরী র্যাফেল ড্রর ব্যানার।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিরাতেই মেলার মূল মঞ্চে চলে র্যাফেল ড্র। সরাসরি দেখানো হয় স্থানীয় কেবল চ্যানেলেও। ২০ টাকায় গাড়ি, মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর, অটোরিকশা, গরু, স্বর্ণালংকারসহ নানা লোভনীয় পণ্যের প্রচারণায় চলে টিকিট বিক্রি।২০ টাকায় দামি পণ্য লাভের আশায় দরিদ্র মানুষ অবাধে কিনছে টিকিট। জনসাধারণ প্রতারিত হলেও আয়োজকদের দাবি, প্রশাসনের অনুমতিতেই চলছে মেলা।
প্রতিদিন প্রায় ২০০টি ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মাইকিং করে ঈশ্বরদী শহরসহ প্রতিটি ইউনিয়নে র্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রি চলছে।
লোভনীয় পুরস্কার ঘোষণা এবং গান বাজিয়ে র্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রি করছেন আয়োজক কমিটির লোকজন।
শেরশাহ রোডে ইজিবাইকে ভ্রাম্যমাণ এক টিকিট বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মেলা শুরুর প্রথম দিনেই তিনি এক হাজার টিকিট বিক্রি করেছেন। যত দিন যাচ্ছে, ততই টিকিট বিক্রি বাড়ছে। ক্রেতাদের বড় অংশই হতদরিদ্র, রিকশা ভ্যানচালক, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
পৌর এলাকার ফতেহ মোহম্মদপুর এলাকার গৃহবধূ মেরিনা বেগম বলেন, ‘স্বর্ণের গয়নার লোভে তিনটি হাঁস বিক্রি করে টিকিট কিনেছিলাম, আমার কপালে গয়না তো দূরে থাক, কিছুই বাঁধেনি।’
নারিচা এলাকার গৃহবধু ইয়াসমিন আরা বলেন, ‘মেলা শুরুর পর থেকে বাড়ির পুরুষরা বাজার করা বন্ধ করে দিয়েছেন। আমার ইজিবাইক চালক স্বামী সারাদিনে যা আয় করেন, তা লটারির টিকেট কিনে শেষ করে আসে। বার বার বলেও তাকে বোঝাতে পারছি না। বাচ্চাদের নিয়ে খুবই কষ্টে পড়েছি। গরীব ঠকানোর এই মেলা প্রশাসনের বন্ধ করা উচিত।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার টিকিট বিক্রি করছে র্যাফেল ড্র কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা জানান, পৌরসভার অধীনে থাকা আবুল মনসুর খান স্টেডিয়ামের সংস্কারে অর্থ সংগ্রহের কথা বললেও, আয়ের সিংহভাগ ভাগাভাগি হচ্ছে জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে। রহস্যজনক কারণে প্রশাসনও নীরব।
মেলার আয়োজক ঈশ্বরদীর পৌর মেয়র ইসাহাক মালিথা বলেন, ‘পৌরসভার আবুল মনসুর খান স্টেডিয়াম জরাজীর্ণ। পৌরসভায় স্টেডিয়াম সংস্কারে ফান্ড নেই বলেই মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে অর্থ সংগ্রহ হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক সবার মতামত নিয়েই মেলা পরিচালনা করা হচ্ছে।’
র্যাফেল ড্র আয়োজন হলেও মেলার বাইরে টিকিট বিক্রি হচ্ছে না বলে দাবি করেন মেয়র।
র্যাফেল ড্র আয়োজনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে সাক্ষাতে আসেন, কথা হবে বলে ফোন কেটে দেন মেয়র।
এ বিষয়ে জানতে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিএম ইমরুল কায়েস ফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।