সাতক্ষীরার দেবহাটায় শিশুকে ক্ষতবিক্ষত করার অভিযোগে এবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে ছোট মামাকে। কিশোর বয়সী এই মামাই শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। ১৬ বছরের ওই কিশোরকে সদর হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে সোমবার গ্রেপ্তার করা হয় শিশুটির বড় মামী অর্থাৎ গ্রেপ্তার কিশোরের ভাবী রানী বেগমকে।
পুলিশ বলছে, রানী বেগমের সঙ্গে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল ওই কিশোরের। তাদের দুজনকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলে শিশুটি। এ কারণে তারা শিশুটিকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
শিশুটিকে সোমবার দুপুরে দেবহাটার চরবালিথার মরিচ্চাপ নদীর তীর থেকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেয় ওর ছোট মামা। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ ওবায়দুল্লাহ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শিশুটির মা মারা যাওয়ার পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর থেকে দেবহাটা উপজেলার চরবালিথা গ্রামে নানি ও মামাদের সঙ্গে।
ওসি জানান, শিশুটি সোমবার দুপুরে মৃতপ্রায় অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার পরপরই ঘটনা তদন্তে মাঠে নামে পুলিশ। চিকিৎসাধীন শিশুটি প্রথমে পুলিশকে জানায়, বড় মামী রানী বেগম ধারাল অস্ত্র দিয়ে ওর চোখ-মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ খুঁচিয়ে জখম করে। সেই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রানী বেগমকে সোমবার বিকেলে আটক করা হয়।
ওসি আরও জানান, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে রানী বেগম নির্যাতনের কথা স্বীকার করেন। একই সঙ্গে তিনি জানান, সোমবার দেবরের সঙ্গে তাকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলে শিশুটি। ঘটনা আড়াল করতে শিশুটিকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন দেবর-ভাবি।
শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগে আটক মামী রানী বেগম (বামে) ও হাসপাতালে শিশুটির পাশে নির্যাতনে অভিযুক্ত মামা। ছবি: নিউজবাংলা
নিউজবাংলাকে ওসি জানান, রানী ও তার দেবর মিলে শিশুটির হাত-পা বেঁধে চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে জখম করে। এক সময় মৃত ভেবে বাচ্চাটাকে বাড়ির পাশে মরিচ্চাপ নদীর ধারে ফেলে রাখে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর শিশুটি স্থানীয়দের নজরে পড়লে সন্দেহ এড়াতে ওই কিশোর মামা তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
রানী বেগমের দেয়া তথ্যে সদর হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার সকালে ওই কিশোরকে আটক করা হয় বলে জানান ওসি ওবায়দুল্লাহ।
তিনি বলেন, শিশুর বাবা মঈনুদ্দীন সরদার মঙ্গলবার হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। তাতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দেবর-ভাবিকে আদালতে তোলা হয়। সেখানে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
শিশুটির বাবা বলেন, ‘আমার প্রথম স্ত্রী শারমীন সুলতানা মারা যাওয়ার পরে বাচ্চাটা নানির কাছে থাকত। সৎ মায়ের অত্যাচার ছেলেটাকে যেন সইতে না হয় সেজন্য নানির কাছে রেখেছিলাম, কিন্তু এমন ঘটনা ঘটবে আমি জানতাম না।
‘ডাক্তার জানিয়েছে ছেলের ডান চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে। বাম চোখটাও ভাল হবে কি না ৭২ ঘণ্টা পর জানা যাবে। এভাবে কীভাবে নির্যাতন করতে পারল তারা? কোনো বিবেকবান মানুষ শিশুর সঙ্গে এমন করতে পারে না।’