বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমির হামজা স্বভাবে কবি, জাতে বীর

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৫ মার্চ, ২০২২ ২১:২১

এবার স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তালিকায় আমির হামজা নামটি বেশ চমক সৃষ্টি করেছে। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি পাওয়া মরহুম এই কবিকে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। অনেকেই তার সম্পর্কে কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন।

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের ১০ গুণী ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’ প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে সাহিত্য বিভাগে নাম রয়েছে মরহুম মো. আমির হামজার। তবে তিনি কে, তার পরিচয় জানতে বিভিন্ন মাধ্যমে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার নিভৃত গ্রাম বরিশাটের বাসিন্দা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি আমির হামজা। জীবনজুড়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দেশপ্রেমকে ধারণ করেছিলেন।

১৯৩১ সালে জন্ম নেয়া দীর্ঘদেহী আমির হামজা মধ্য বয়সে সংসারের মায়া ত্যাগ করে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দেন। ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। সে সময় রাইফেলের পাশাপাশি ধরেছিলেন কলমও। মহানায়কের কণ্ঠ যেন ধ্বনিত হয়েছে তার লেখা কবিতায়।

দেশ স্বাধীন হলো যুদ্ধজয়ী বীরের দল যে যার ঘরে ফিরে গেল। কবিও ফিরলেন, তবে মনটা তার আটকে ছিল বঙ্গবন্ধুতেই।

কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তার লেখা কবিতা ও গানের শব্দ চয়নে যে গভীরতা, তা যেকোনো মানুষকে ভাবিয়ে তোলে।

বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে তিনি লিখেছেন- ‘যে ক্ষতি তুমি করিতে পারো না পূরণ/কেন সেই মহাপ্রাণ করিলে হরণ/কারে নিয়ে বলো আজ কবিতা লিখি/একটি মুজিব এনে দাও তো দেখি…।’

অথবা ‘এই প্রার্থনা বঙ্গজননী, আমার কথা নিও/যুগে যুগে তুমি শেখের মতো দু’একটা ছেলে দিও।’

কবি আমির হামজা ছিলেন দক্ষিণবঙ্গের বিখ্যাত কবিয়াল বিজয় সরকারের শিষ্য। অনেক বাঘা বাঘা কবিয়ালের সঙ্গে পালা ও কবিগানের টক্করে আসর মাত করার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে তার।

সমগ্র গ্রামবাংলা ছিল কবি আমির হামজার বিচরণক্ষেত্র। বাংলার সংস্কৃতির বাহক হিসেবে জারি ও কবিগানের মধ্যযুগীয় ধারাকে আধুনিকায়নে কবি আমির হামজার অবদান অনস্বীকার্য। মধ্যযুগীয় ধারায় কবিগানের মূল বিষয়বস্তু ছিল ধর্ম, পির-ফকির ও দেব-দেবীর পরস্পরবিরোধী মহিমা কীর্তন ও আদি রসাত্মক চিত্তবিনোদন। আধুনিক যুগে এর পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। পরিবর্তনের এই ধারায় কবিয়াল আমির হামজা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেন। তিনি জারি ও কবিগানে দেশপ্রেম, প্রকৃতি, মাটি ও মানুষকে অনুষঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করেন।

কবির এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৩টি। বাঘের থাবা, পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি ও একুশের পাঁচালি। তিনটি গ্রন্থই ‘অন্যপ্রকাশ’ থেকে মুদ্রিত হয়েছে। তার অপর দুটি কাব্যগ্রন্থ ‘কাব্যরাণী’ ও ‘ইকরা’ প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।

বরিশাট গ্রামের লোকজন ও কবির পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা যায়, আমির হামজা একই আসরেই গান লিখে, সুর করে তা পরিবেশনও করতে পারতেন। তার কবিজীবনের অপর বৈশিষ্ট্য হলো- তিনি তাৎক্ষণিক দেশ ও জাতির হয়ে এমন গান ও কবিতা লিখতেন, যা মানুষ তার কাছে আশা করত।

অন্যদিকে, রণাঙ্গনের দুর্ধর্ষ গেরিলা আমির হামজা ছিলেন অসীম সাহসের অধিকারী। ১৯৮৩ সালে যখন রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর নাম বলা যেত না, সে সময় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে তিনি জাতির পিতাকে নিয়ে স্বরচিত গান পরিবেশন করেছিলেন।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কিংবদন্তি সুরকার শেখ সাদী খান কবি আমির হামজার ‘একটি মুজিব এনে দাও তো দেখি’ গানটির সুর করেছেন। বর্তমানে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের আরেক কিংবদন্তি শিল্পী রফিকুল আলম। গানটি বাজারে আসার অপেক্ষায় আছে।

তিনি লিখেছেন এবং গেয়েছেন আপন মনে। কোনো প্রতিদান অথবা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আশা করেননি। যে কারণে তার অনেক সৃষ্টি সংরক্ষিত হয়নি। বর্তমানে কবির পরিবার তার কিছু সৃষ্টি পাঠকের জন্য প্রকাশের চেষ্টা করে যাচ্ছে। নিভৃতচারী কবিয়াল আমির হামজা অনেকটা নিভৃতেই ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।

কবির মেজো ছেলে মো. আসাদুজ্জামান বাংলাদেশ সরকারের একজন উপসচিব। বর্তমানে তিনি খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

কবিপুত্র বলেন, ‘কবি আমির হামজা সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। তবে কোনো দিন কোনো নাম, সুনাম চাননি। আজ তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়েছে। এই অনুভূতি আসলে মুখে বলে প্রকাশ করতে পারব না।’

এ বিভাগের আরো খবর