ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রসঙ্গ টেনে অসাধু ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘দোলনা থেকে কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা সবাই ভোক্তা। সেই অর্থে ব্যবসায়ীরাও ভোক্তা। আপনারা ব্যবসায় লাভ করুন, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই লোভ করবেন না।’
অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভোক্তাদের সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকেও আরও বেশি তৎপর হওয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী।
রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে মঙ্গলবার বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবসের আলোচনা সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভোক্তা সচেতনতা বাড়াতে ভোক্তা অধিকার আইনটি সবাইকে জানতে হবে। না হলে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। কারণ অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগের জন্য অপেক্ষা করেন। আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বগতির সুযোগ নিয়ে ইতিমধ্যে দেশে কিছু অসাধু ও লোভী ব্যবসায়ী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছেন। এদের দমাতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভোক্তা অধিকার আইনের যথাযথ প্রয়োগ, ভোক্তা সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে আরও বেশি তৎপর হওয়া।’
তিনি ভোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের একটা হটলাইন আছে। ভোক্তা হিসেবে যেখানে আপনি প্রতারিত হচ্ছেন, ঠকছেন, হটলাইনে ওই অসাধু ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন।’
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিমউদ্দিন বলেন, ‘ভেজাল হয়ে থাকে খোলা পণ্য বিক্রির কারণে। এ জন্য সরকার দেশে খোলা তেল বিক্রি বন্ধ করতে যে উদ্যোগ নিয়েছে, এফবিসিসিআই তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন। তবে এই অভিযানে কোনো নিরপরাধ ব্যবসায়ী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য ব্যবসায়ী নেতাদেরও ওই টিমে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন তিনি।
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের কারণে আমাদের সব উন্নয়ন ম্লান করে দিচ্ছে। তবে সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে। বিশ্ব বাজারে দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ এর সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছেন, তারা ভোক্তাকে দুর্ভোগে ফেলছেন। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ ও নজরদারি চালিয়ে যেতে হবে।’
গোলাম রহমান বলেন, ‘ভোক্তারা হলো দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংগঠক। তারা সংগঠিত নয় বলে অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্বারা যেখানে-সেখানে প্রতারিত হন। ভোক্তারা তখন তাকে ভাগ্য বলে বিবেচনা করলেও বর্তমানে প্রতারিত ভোক্তা প্রতিকারও পাচ্ছেন।’
ভোক্তাদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা পরিমাণমতো পণ্য কিনুন, স্বার্থপরের মতো প্রয়োজনের বেশি কিনে অন্যকে দুর্ভোগে ফেলবেন না এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা তৈরির সুযোগ করে দেবেন না।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তার আইনের ভেতর থেকে ক্ষমতার সবটুকু প্রয়োগ করবে। ভবিষ্যতে ভোক্তাদের আরও বেশি ভোক্তা সহায়ক কার্যক্রম ও সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছে অধিদপ্তর। তেলের সরবারহ নিশ্চিত করতে তেল রিফাইনারি শিল্পে অব্যাহতভাবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’
শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আগামী ৩১ মের পর থেকেই দেশে খোলা সয়াবিনের বাজারজাত বন্ধ হবে। খোলা পাম তেলের সরবরাহ বন্ধ করা হবে চলতি বছর ৩০ ডিসেম্বরের পর থেকে। খোলা তেলের বাজারজাত বন্ধ হলে দেশে তেলকেন্দ্রিক ভোক্তা অধিকার অনেকাংশে নিশ্চিত হবে।’
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভোক্তা অধিকার আইন সংশোধন করা হচ্ছে। এই সংশোধনীতে ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করারও পদক্ষেপ থাকবে।’