গত অর্থবছরে দারুণ লভ্যাংশ দেয়ার পরও ব্যাপক দরপতনের শিকার মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে হঠাৎ করেই চাঙাভাব দেখা দিল পুঁজিবাজারে।
সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে এক দিনে দাম বেড়েছে ৩৪টির। বাকি দুটির মধ্যে একটির ইউনিট মূল্য কমেছে ২০ পয়সা, বাকিটির অপরিবর্তিত থাকে।
সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধির তালিকার ১০টির মধ্যে তিনটিই মিউচ্যুয়াল ফান্ড আর ২০টির মধ্যে সাতটি। এই সাতটির দর বেড়েছে সর্বনিম্ন ৬.৪৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯.৭৪ শতাংশ।
সব মিলিয়ে দুটি ফান্ডের দর বেড়েছে সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি, একটির প্রায় ৮ শতাংশ, দুটির প্রায় ৭ শতাংশ, দুটির প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ, একটির ৬ শতাংশের বেশি, ছয়টির ৫ শতাংশের বেশি, ৯টির ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে, ৫টির ৩ থেকে ৪ শতাংশ এবং ৬টির দর বেড়েছে ২ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে।
যে ফান্ডগুলোর দর বেড়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্তে সেগুলোর ইউনিটমূল্য আগামী কর্মদিবসে খুব একটা কমতে পারবে না। ১০ টাকার নিচের ফান্ডগুলোর ইউনিটমূল্য সর্বোচ্চ ১০ পয়সা, ১৫ টাকার নিচেরগুলোর ২০ পয়সা, ২০ টাকার নিচেরগুলোর ৩০ পয়সা কমতে পারবে।
এর কারণ এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা আছে ২ শতাংশ। কিন্তু যেহেতু শেয়ার বা ইউনিটের দর সর্বনিম্ন ১০ পয়সার হিসাব করে বাড়ানো বা কমানোরা অর্ডার দেয়া যায়, তাই ২ শতাংশ কমা সম্ভব হবে না সব সময়।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে টানা চার কর্মদিবস তিন শতাধিক পয়েন্ট সূচক বাড়ার পর সোমবার ১.৭৯ পয়েন্ট সূচক পড়লেও পরদিন তা বেড়েছে ১.৫৪ পয়েন্ট।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
দুই কর্মদিবস পর লেনদেন আবার এক হাজার কোটি টাকার বেশি বেড়েছে। সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে এক হাজার ৬৫ কোটি ৬৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা।
আগের দিন লেনদেন ছিল ৯৮৬ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
সব মিলিয়ে ১৫১টি কোম্পানির দর বেড়েছে, কমেছে ১৯৯টির। অপরিবর্তিত ছিল বাকি ২৯টির দর।
আগের দিনের মতোই লেনদেনের সাড়ে চার ঘণ্টায় সূচক উঠানামা করেছে। তবে খুব বেশি কমেনি কখনও, বাড়েওনি সেখাবে।
লেনদেন শুরু হয়েছিল ৫ পয়েন্ট বেড়ে, এক পর্যায়ে তা নেমে যায় ১৫ পয়েন্টের মতো। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ২১ পয়েন্টের মতো বাড়ে বেলা পৌনে একটায়। পরে সেখান থেকে কিছুটা কমে।
আগ্রহ বেশি বস্ত্র খাতে
আগের কর্মদিবসের মতোই সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বস্ত্র খাতে। মোট ১৬০ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে এই খাতটিতে। আগের দিন লেনদেন ছিল ১৮০ কোটি টাকার বেশি।
তবে শতকরা হিসেবে লেনদেন অনেকটাই কমেছে। আগের দিন মোট লেনদেনের ২০ শতাংশের বেশি ছিল এই খাতে, এবার তা কমে হয়েছে ১৫ শতাংশের কিছু বেশি।
তবে লেনদেনে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেলেও এই খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি দর হারিয়েছে। দর বেড়েছে ১৫টি কোম্পানির, বিপরীতে কমেছে ৩৪টির। বাকি ৯টি কোম্পানির দর ছিল অপরিবর্তিত।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে বিবিধ থাকে। এই খাতের ১৪টি কোম্পানিতে ১৩১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। এর মধ্যে অবশ্য কেবল বেক্সিমকো লিমেটেডের লেনদেন ছিল ১০৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
তথ্য প্রযুক্তি খাতেও হঠাৎ করে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। এই খাতের ১১টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ১৩০ কোটি টাকার বেশি। দাম বেড়েছে সব কটি কোম্পানির।
১০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে ওষুধ ও রসায়ন এবং প্রকৌশল খাতেও।
লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা ব্যাংক খাতে লেনদেন হয়েছে ৫৩ কোটি টাকার কিছু বেশি। কমেছে বেশিরভাগ শেয়ারের দর। বেড়েছে ৮টি কোম্পানির শেয়ারদর, হারিয়েছে দ্বিগুণ সংখ্যক কোম্পানির। অন্যদিকে ৯টি কোম্পানির দর ছিল অপরিবর্তিত।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
এই তালিকায় প্রাধান্য ছিল তথ্য প্রযুক্তি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের। দুই খাতেরই তিনটি করে কোম্পানি বা ফান্ড ছিল এতে।
প্রায় ১০ শতাংশ করে বেড়েছে ই জেনারেশন, সম্প্রতি চাঙা হয়ে উঠা বিডিকম ও আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ারদর।
জ্বালানি খাতের কোম্পানি অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন, মিউচুয়াল ফান্ড খাতের সিএপিএম আইবিবিএল ও ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটও দিনের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমায় লেনদেন হয়েছে।
শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হলো বস্ত্র খাতের এনভয় টেক্সটাইল, প্রকৌশল খাতের সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, ফার্স্ট জনতা মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের সিলভা ফার্মা।
দর পতনের সর্বোচ্চ সীমায় বিমার আধিক্য
বিএসিইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২ শতাংশের কাছাকাছি কমেছে ৩০টির বেশি কোম্পানির শেয়ারদর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোম্পানি আছে সাধারণ বিমা খাতের।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে ৫ টাকার নিচে লেনদেন হওয়া কোম্পানির শেয়ারদর কমা সম্ভব নয়, ৫ টাকা থেকে ১০ টাকার নিচের কোম্পানির শেয়ারদর সর্বোচ্চ ১০ পয়সা, ১০ টাকা থেকে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত ২০ পয়সা, ১৫ টাকা থেকে ১৯ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত ৩০ পয়সা, ২০ টাকা থেকে ২৪ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত ৪০ পয়সা, ২৫ টাকা থেকে ২৯ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত ৫০ পয়সা, ৩০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত ৬০ পয়সা, ৩৫ টাকা থেকে ৩৯ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত ৭০ পয়সা দাম কমতে পারে এক দিনে।
যতটা কমা সম্ভব ততটাই কমেছে এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিল ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, শ্যামপুর সুগার, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, এনআরবিসি, এপেক্স স্পিনিং, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স।
অর্থাৎ দর পতনের সর্বোচ্চ সীমায় লেনদেন হওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৬টিই ছিল সাধারণ বিমা খাতের।