দেশের অন্যতম বড় প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করতে চেয়েও পরে পিছিয়ে যাওয়া বিশ্বব্যাংক এবার দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণে সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে।
শহরের সব সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে ৫০০ থেকে ৮০০ কোটি ডলার ঋণ দিতে আগ্রহের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
সচিবালয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা এক বৈঠকে মঙ্গলবার এ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের বলেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকও আমাদের অর্থায়ন করে থাকে। আমরা যেসব প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক থেকে টাকা নিই, সেটা কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশে যে আয় হয়, সে অনুযায়ী জাতীয় অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আবার তাদের সে লোন পরিশোধ করি।
‘আমরা এ পর্যন্ত কখনো ঋণখেলাপি হইনি। এতে করে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহ বেশি রয়েছে। বিশ্বব্যাংকও আমাদের টাকা দিতে চায়।’
বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকারকে ১২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল এক চুক্তি করে। পরে সংস্থাটি সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ঋণ দেয়া থেকে পিছিয়ে যায়। অবশ্য পরে আদালত পর্যন্ত গড়ালে সেতুতে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্প নিয়ে বৈঠকের পর মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ প্রকল্পে বেশ কিছু যোগাযোগব্যবস্থার প্রয়োজন আছে, ব্রিজ-কালভার্ট করার প্রয়োজন আছে, সেগুলোতে তারা সহযোগিতা করতে রাজি আছে। কোস্টাল এলাকায় সাইক্লোন হয়, সেসব এলাকার দুর্গত মানুষের পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, সেগুলোতে তারা অর্থায়নে রাজি আছে।
‘আমাদের বেশ কিছু চলমান প্রকল্প আছে। আমাদের নতুন আরও কিছু প্রকল্প নিতে হবে। তারা আমাদের এখানে ৫০০ থেকে ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে রাজি আছে। এটা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হবে।’
২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতি ছিল ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামে শহরের সব নাগরিক সেবা সুবিধা পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার করেছে সরকার।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী মডেল গ্রামে যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা, সুপেয় পানি, তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, উন্নত পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি স্পেস ও বিনোদনের ব্যবস্থা, ব্যাংকিং সুবিধা, গ্রামীণ কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কৃষি আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সব সুবিধা রাখার কথা বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ ঘোষণা বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় পদ্মা সেতুতে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যেহেতু নিজস্ব সামর্থ্যে করতে পেরেছি, তাদের ১.২ বিলয়ন ডলার ছিল, আমরা সেটায় ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে ব্রিজসহ কানেক্টিং রাস্তাও করেছি।
‘পাশাপাশি আউটার জেলাগুলোকেও কানেক্টিভিটির আওতায় আনা হয়েছে। এ কারণে স্বাভাবিকভাবে বিশ্বব্যাংকসহ সকলের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নতি, ব্রিজ, রাস্তাগুলোকে আরও টেকসইভাবে নির্মাণ করার জন্য নতুন বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এসব প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করতে আগ্রহী হয়েছে। গ্রামের সব জায়গায় স্যানিটেশন ও পানি পৌঁছে দেয়ার বিষয়ে আমি বলেছি।
‘আমার গ্রাম আমার শহর এটা একটি সমন্বিত দর্শন। যেহেতু বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অন্যান্য মার্কেট তৈরি করার মতো অনেক প্রকল্প আমাদের দরকার। এর মাধ্যমে শহরের সুযোগ-সুবিধাগুলো গ্রামে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।’
সরকার কোন সংস্থার কাছে ঋণ নেবে তা এখনো ঠিক হয়নি বলে জানান মন্ত্রী তাজুল। বলেন, ‘আমাদের এখানে বেশ কিছু প্রকল্পে তাদের আগের কমিটমেন্ট আছে, তারা টাকা দিচ্ছে। এ ছাড়া আমরা আরও কয়েকটি প্রকল্প নিতে চাই। এসব প্রকল্পে তারা চার-পাঁচ হাজার কোটি টাকা করে অর্থায়ন করতে চায়।
‘আমরা যত টাকা চাই এবং সে অনুযায়ী যদি প্রকল্প বের করি, তাহলে তারা অর্থায়ন করতে রাজি আছে। আমরা যাচাই-বাছাই করছি, এডিবি থেকে নেব নাকি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে নেব, নাকি জাইকা থেকে নেব।’