আকাশে, অনেক উঁচুতে যে মেঘকে আমরা উড়ে যেতে দেখি, সেই মেঘই সাজেক ভ্যালিতে থাকে খুব কাছাকাছি। শরীর ছুঁয়ে দিয়ে করে লুকোচুরি।
এই লুকোচুরিতে গা ভাসাতেই প্রতিদিনই সাজেকে আসেন হাজারও পর্যটক। তবে সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে তাদের অনেকেই এখান থেকে নিয়ে যান কুৎসিত স্মৃতি। কারণ মেঘের রাজ্যে গিয়ে ময়লার স্তূপ পাড়ি দিতে হয় তাদের। মুক্ত নিঃশ্বাসের বদলে নাক-মুখ বন্ধ করে দেখতে হয় মেঘেদের ওড়াওড়ি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাজেকের বিভিন্ন রাস্তার পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এমনকি হোটেল-রেস্তোরাঁর আঙিনাগুলো অপরিচ্ছন্ন। যেখানে-সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে পানির খালি বোতল, টিস্যু, ওয়ান টাইম চায়ের কাপসহ আরও কত কী!
শুধু তা-ই নয়, সাজেকের অন্যতম আকর্ষণ কংলাক পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তার পাশে দেখা যায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার একটি স্থান। বিভিন্ন স্থান থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে সেখানে নিয়ে ফেলা হচ্ছে। তাই কংলাক পাহাড়ে যেতে হয় একরাশ দুর্গন্ধকে সঙ্গী করে।
সাজেক ভ্যালিতে ঘুরতে যাওয়া পর্যটক মিনা চাকমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হোটেল এবং রেস্তোরাঁর আঙিনা ও রাস্তার আশপাশে দেখা যায় ময়লা-আবর্জনা। এতে পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি সাজেক ভ্যালির গুরুত্ব হারাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, কংলাক পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তার পাশে যে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়, সেখান থেকেও দুর্গন্ধ ছড়ায়।’
সাজেক রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জেরী লুসাই বলেন, ‘সমিতি থেকে ২-৩ দিন বলা না হলেই যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা জমে যায়। প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য একটা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
সরেজমিনে সাজেকের বিভিন্ন রাস্তার পাশে দেখা যায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। ছবি: নিউজবাংলা
তবে ময়লা-আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলার কারণ হিসেবে স্থানীয় হোটেল-রিসোর্ট মালিকদেরই দায়ী করেছেন জেরি লুসাই। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পর্যটকরা হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁর পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলতেই পারে। এ ক্ষেত্রে মালিকদের উচিত এগুলোকে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা। কেননা পর্যটকরা একটি টিস্যু ব্যবহার করে তো এটি পকেটে রাখবে না। ফেলে দিতেই হবে।’
এদিকে সাজেক পর্যটন থেকে একটু দূরে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করলে দুর্গন্ধ থেকে পর্যটক ও স্থানীয়রা মুক্তি পাবে বলে মন্তব্য করেছেন জুম্মোবী হোটেল অ্যান্ড রেস্ট্রুরেন্টের মালিক সুমেধ চাকমা।
তিনি বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিয়ে সামগ্রিক চিন্তা করতে হবে। প্রতি মাসে সরকারকে কর দিচ্ছি আমরা। তাই উপজেলা প্রশাসন যদি একটা নির্দিষ্ট জায়গা দেয় তাহলে ময়লা-আবর্জনা সেখানে ফেলতে সহজ হবে। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা জমে থাকবে না।’
এ বিষয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সাজেকে অনেক কাজ করার আছে। উপজেলা প্রশাসনেরও মাথায় আছে। মূলত হোটেল মালিক সমিতি থেকে যদি ময়লা-আবর্জনা ফেলার সঠিক ব্যবস্থা নিত, তাহলে এসব হতো না।’