রাজধানীর কাফরুলে সামরিনা সুলতানা রুনা নামে ৪০ বছর বয়সী শারীরিক প্রতিবন্ধী নারীকে হত্যার দায়ে দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। সাজাপ্রাপ্ত মোহাম্মদ জুলহাস ও ডলি আক্তার সম্পর্কে প্রেমিক-প্রেমিকা।
ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সল আতিক বিন কাদের সোমবার এ রায় ঘোষণা করেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে তাদের আরও দুই মাস কারাভোগ করতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
আসামি ডলি আক্তার বর্তমানে পলাতক। তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যান। আদালত তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
রায় ঘোষণার আগে আসামি জুলহাসকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলায় জানা যায়, ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর সামরিনা সুলতানা রুনাকে রাজধানীর দক্ষিণ ইব্রাহিমপুরের বাসায় খুন করা হয়। পরদিন তার বড় বোন রোজিনা সুলতানা অজ্ঞাতনামা দুজনকে আসামি করে কাফরুল থানায় মামলা করেন।
মামলার পর পুলিশ প্রাথমিক তদন্তকালে গ্রেপ্তার করে জুলহাস ও ডলিকে। তারা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মফিদুল ইসলাম আকন্দ ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর জুলহাস ও ডলিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ডলির ভাই জাকিরের বিরুদ্ধে শিশু আদালতে দোষীপত্র দাখিল করা হয়।
চার্জশিটে বলা হয়, জুলহাস ও ডলি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। সেখানে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা পালিয়ে ভাসানটেক এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়েই তারা বসবাস করছিলেন।
বিয়ে ও সংসার করার জন্য ১ লাখ টাকা লাগবে বলে ডলিকে জানান জুলহাস। টাকার জন্য তারা অন্যের বাসায় চুরি ও মালামাল লুটের পরিকল্পনা করেন। এরই একপর্যায়ে জুলহাস ডলিকে নিয়ে যান শারীরিক প্রতিবন্ধী সামরিনা সুলতানা রুনার বাসায়।
গৃহকর্মী পরিচয়ে তারা বাসাটিতে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সন্ধ্যায় ডলি ফের বাসাটিতে পৌঁছে দারোয়ানকে ব্যস্ত রাখেন নানা রকম কথা বলে। একপর্যায়ে জুলহাস কৌশলে বাসায় ঢুকে যান। তর্কাতর্কি করে কিছুক্ষণ পর ডলি তার ১৫ বছর বয়সী ভাই জাকিরকে নিয়ে ভেতরে ঢোকেন।
দরজা নক করলে রুনা বাইরে আসেন। তিনি ডলিকে কাজে নিতে রাজি হননি। তখন ডলি পানি খাওয়ার কথা বললে রুনা তা আনতে ভেতরে যান। দরজা খোলা পেয়ে সিঁড়িতে অপেক্ষা করা জুলহাস বাসায় ঢুকে পড়েন। এরপর তারা উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করেন রুনাকে।