কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের বটতলা মোড়ে সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য বসানো হয়েছে একটি পানির ফোয়ারা।
পৌর শহরের স্টেশন রোড থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দিকে যেতে কোহিনূর রেস্টুরেন্টের সামনে গেলেই চোখে পড়ে এই ফোয়ারটি।
দেয়ালেই রয়েছে এর সুইচ। কিন্তু এই সুইচে চাপ দিলে ফোয়ারার পানি এত ওপরে ওঠে যে তা বিদ্যুতের মেইন লাইন স্পর্শ করে। সেই পানি যখন নিচের দিকে পড়ে তখন তা সুইচ বোর্ডটিকেও ভিজিয়ে দেয়। তাই এই ফোয়ারা থেকে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদের অর্থায়নে স্থাপন করা হয় এই ফোয়ারাটি। প্রায় পাঁচ মাস আগে এটি স্থাপন করা হলেও চালু ছিল ১৫ থেকে ২০ দিন। বিশেষ বিশেষ দিনেও বন্ধ থাকে ফোয়ারাটি।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের অর্থায়নে ফোয়ারাটি স্থাপন করে দিয়েছি। এখন দেখভাল করার দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের।’
এদিকে পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. শহিদুল হক বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বললেন, ‘জেলা পরিষদ আমাদেরকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ফোয়ারাটি বুঝিয়ে দেয়নি। তারপরও আমরাই দেখভাল করে থাকি।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ফোয়ারাটি দেখভালের জন্য নির্দিষ্ট কোনো লোক নেই। দেয়ালে থাকা সুইচে চাপ দিয়ে ফোয়ারাটি চালু ও বন্ধ করার দায়িত্ব পালন করেন পাশেই জুতা সেলাইয়ের কারিগর নারায়ণ চন্দ্র দাস অথবা চায়ের দোকানি মাহাবুর।
শনিবার সন্ধ্যায় ফোয়ারাটির পাশে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন লোক ওপরের দিকে তাকিয়ে কী যেন দেখছেন। ওপরে তাকাতেই দেখা যায়, ফোয়ারার পানি বিদ্যুতের মেইন লাইন স্পর্শ করছে। আবার সেই পানি গড়িয়ে সুইচবোর্ডে এসে পড়ছে। ঘটনাস্থলের উৎসুক মানুষেরা মূলত এই ব্যপারটি নিয়েই আলোচনা করছিলেন।
এদের মধ্যে একজন ছিলেন নজরুল ইসলাম। নিকলী উপজেলার এই বাসিন্দার এক স্বজন কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি। সারাক্ষণ রোগীর পাশে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছে না। তাই একটু প্রশান্তির জন্য হাসপাতাল থেকে বের হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বসানো পানির এই ফোয়ারা না জানি কোন দিন আগুনের ফোয়ারায় পরিণত হয়।’
মনের প্রশান্তির জন্য ফোয়ারার সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নজরুল।
ফোয়ারার পাশে কোহিনূর রেস্টুরেন্টের শ্রমিক এমদাদুল হকও জানান, ফোয়ারার কাছে দাঁড়িয়ে এর সৌন্দর্য দেখার বদলে লোকজন এর সম্ভাব্য দুর্ঘটনা নিয়েই বেশি আলোচনা করেন।
ফোয়ারার পাশে বসে জুতা সেলাই করেন নারায়ণ চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার পর এই ফোয়ারাটি চালু করে চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। পৌরসভার অর্ডারে আমি আর মাহাবুর এইডা চালু-বন্ধ করি।’
নারায়ণ জানান, ফোয়ারা থেকে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি নিজেও আতঙ্কে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানি জানান, ফোয়ারাটি দুই দিন পরপর নষ্ট হয়ে যায়। গাছের পাতা পরেও বন্ধ থাকে এটি। এ জন্য মাঝে মাঝে যখন চালু হয় তখন পানির লাইনের পাইপ পরিষ্কারের জন্য স্পিড বাড়িয়ে রাখা হয়। আর এ সময় বিদ্যুতের তারের ওপর দিয়ে সেই পানি প্রবাহিত হয়। এই পানিতে সুইচ ভিজে যায় বলে বন্ধ করার সময় এটি হাতে স্পর্শ না করে একটি কাঠি ব্যবহার করা হয়।
এ বিষয়ে পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) শহিদুল হক বলেন, ‘ফোয়ারা থেকে পানি গিয়ে বিদ্যুতের তার ভিজলেও কোনো সমস্যা নাই। লাইনের তার তো আলাদা আলাদা। তা ছাড়া এগুলো ঠিক আছে।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘যখন মুষলধারে বৃষ্টি হয় তখন যেহেতু সমস্যা হয় না, ফোয়ারার পানিতেও তেমন কোনো সমস্যা হবে না।’
তবে সুইচে পানি পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সুইচে পানি পড়লে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি পৌরসভায় গিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
কিশোরগঞ্জ পৌর মেয়র পারভেজ মিয়া বলেন, ‘আমি এই বিষয়টি জানতাম না। আপনার মাধ্যমেই জেনেছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’