এক দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ক্রমেই বাড়ছে, অন্যদিকে দুটি স্তর থেকে তুলে দিলেও আমদানি পর্যায়ে রয়ে গেছে ভ্যাট। এর ফলে উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলেও তাতে ভোজ্য তেলের দাম আদৌ কমবে কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ভোজ্যতেল বাজারজাতকারী কোম্পানি বলছে, আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট থাকলে বাজারে তেলের দাম কমানো সম্ভব নয়। উল্টো এখন যে দাম, তাতে এই দামে বিক্রি করা কঠিন।
আবার ভোক্তা পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলেও সুপার শপে যারা কেনাকাটা করেন, তারা এই সুবিধা পাবেন কি না, তা নিয়ে আছে প্রশ্ন। এর কারণ, চেইন শপগুলোতে কেনাকাটা করলে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয় যেসব পণ্যে, তার মধ্যে ভোজ্যতেল একটি।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজার নতুন করে চড়েছে। এই অবস্থায় কী করা যায়, সেটি নিয়ে তারা ভাবছেন।
পণ্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে তুমুল আলোচনা ভোজ্যতেল নিয়ে। গত এক বছরে সয়াবিন তেলের নাম বেড়েছে লিটারে ৩৪ টাকা। সেটি ১ মার্চ থেকে আরও ১২ টাকা বাড়াতে প্রস্তাব দিয়েছিল ভোজ্য তেল পরিবেশকরা। তবে সরকার সেই দাবি মেনে না নেয়ার পর বাজারে সরবরাহে দেখা দেয় ঘাটতি।
ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, তারা তেল কিনতে গেলে সঙ্গে অন্য পণ্য নেয়ার শর্ত দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানি তাদেরকে তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য নিতে বাধ্য করছে। নইলে তেল দিচ্ছে না। তবে কোম্পানি দাবি করছে, তাদের সরবরাহ ঠিক আছে, পাইকারি ব্যবসায়ীরা মজুত করছেন।
এই পরিস্থিতিতে জেলায় জেলায় বাজারে বাজারে চলছে অভিযান। এসব অভিযানে তেল মজুত করে তা বিক্রি না করার অভিযোগের প্রমাণ মিলছে। এমনকি ব্যক্তি পর্যায়েও তেল রেখে দেয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। ভারতে পাচারের সময় ধরা পড়েছে চালান।
এই অবস্থায় রজমানে তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার দুটি স্তর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করে আদেশ জারি করেছে।
এ বিষয়ে ভোজ্যতেলের অন্যতম আমদানিকারক, পরিশোধনকারী তীর ব্র্যান্ডের তেল সরবরাহকারী কোম্পানি সিটি গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রত্যাহার করেছে স্থানীয় উৎপাদন ও বিক্রি পর্যায়ের ভ্যাট। ভ্যাট প্রত্যাহারের এমন সিদ্ধান্তে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার ক্ষেত্রে খুব একটা সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।’
তিনি বলেন, ‘ভোজ্যতেলের কাঁচামালের আন্তর্জাতিক বাজার এখন ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে এক লিটার ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে ২০ টাকা ভ্যাট পড়ছে। এখন এনবিআর উৎপাদনপর্যায়ে যে ভ্যাট তুলে নিয়েছে, তাতে প্রতি লিটার তেলে দাম কমবে মাত্র তিন টাকা।
‘অপরদিকে বিক্রি পর্যায়ের ভ্যাটও তুলে নিয়েছে। এর সুবিধা খোলাবাজারের ভোক্তারা হয়ত পাবে। তবে স্বপ্ন, আগোরা ও মীনা বাজারের মতো বিভিন্ন চেইনশপ থেকে তেল কিনতে গেলে কিন্তু ভোক্তাদের সেই ভ্যাটের মওকুফ সুবিধা মিলবে না। বর্তমানে চেইনশপের কেনাকাটায় শতকরা পাঁচ টাকা ভ্যাট দিতে হচ্ছে।’
সুফল না মেলার কারণ উল্লেখ করে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘বর্তমানে লিটারে ১৬৮ টাকায় যে তেল আমরা বিক্রি করছি, সেটির আন্তর্জাতিক বাজার ছিল টনপ্রতি এক হাজার ৩০০ ডলার। আমরা প্রতি লিটার তেলের দাম ১৮০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলাম, তার আন্তর্জাতিক বাজারে গড় মূল্য ছিল এক হাজার ৪২০ ডলারের।
‘ইতিমধ্যে সেই প্রস্তাবিত সময়েরও প্রায় ২০-২২ দিন পার হয়ে গেছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে ওই তেলের দাম ১ হাজার ৯০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। তেল আমদানি করে জাহাজ ভাড়া দিয়ে দেশে আনার পর আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট পরিশোধ করে কী দাম পড়তে পারে সেটি একবার ভেবে দেখুন।’
সামনের দিনগুলোতে ভোজ্যতেলের দাম কেমন হতে পারে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও সরাসরি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম কমতেও পারে। আমরা চেষ্টা করছি রমজান পর্যন্ত দামটা যেন ১৬৮ টাকা লিটার ধরে রাখা যায়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের গড় দাম ১ হাজার ৩৫০ ডলার দাম ধরে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম ১৬৮ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছি। বর্তমানে সেই তেল ১ হাজার ৯০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। এসআরও জারি হওয়ার পর পর্যালোচনা করে আমরা সঠিক দামটি বলতে পারব।’