বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নামাজ না পড়লে চাকরি হারাবেন সাকুরা বাসের কর্মীরা

  •    
  • ১৪ মার্চ, ২০২২ ২০:১৩

সাকুরা পরিবহনে এসি এবং ননএসি দুই ধরনের বাস রয়েছে। এসি বাসের কর্মীদের বাধ্যতামূলক নামাজ আদায়ের নিয়ম আগে থেকেই রয়েছে। এবার পরিবহনের সবার জন্য নিয়মটি বাধ্যতামূলক করছে কর্তৃপক্ষ।

সাকুরা পরিবহনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামাজ আদায় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নামাজের সময় অন্য কোনো কাজ করলে আর্থিক জরিমানাসহ চাকরিচ্যুতির হুঁশিয়ারি দিয়ে নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সাকুরা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরের সই করা নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে সাকুরা পরিবহনের সব টিকিট কাউন্টারে। নোটিশে ১৫ মার্চ থেকে এটি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাকুরা পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের কাউন্টার মাস্টার আল আমিন নোটিশের সত্যতা স্বীকার করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ওপর থেকে নির্দেশনা দিয়েছে আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে সাকুরা পরিবহনের সব মুসলিম স্টাফকে নামাজ আদায় করতে হবে। গাড়ি চলাকালীন নামাজের সময়ে ১৫ মিনিট বিরতি দিতে হবে। কাউন্টারে যারা আছেন তারা তাদের কার্যক্রম ১৫ মিনিটের জন্য বন্ধ রেখে নামাজ পড়তে যাবেন। আমাদের সব কাউন্টারে এই নোটিশ দেয়া হয়েছে।’

নামাজ আদায় না করলে চাকরিচ্যুত করা হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু মুসলিমদের জন্য নির্দেশনা। আমাদের প্রতিষ্ঠানে ওভাবে নন-মুসলিম নাই। মুসলিম হোক আর নন-মুসলিম হোক, তাদের প্রার্থনার জন্য সময় দেয়া হবে।’

রাজধানীর টেকনিক্যাল কাউন্টারের কাউন্টার মাস্টার আব্দুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের মালিকেরা পাঁচ ভাই। একজন মারা গেছেন। আমাদের মালিকেরা সবাই হজ করেছেন। স্টাফরা যাতে নামাজি হন, সেই চিন্তা করেই এই নিয়ম তারা করেছেন।’

সাকুরা পরিবহনে এসি এবং ননএসি দুই ধরনের বাস রয়েছে। এসি বাসের কর্মীদের বাধ্যতামূলক নামাজ আদায়ের নিয়ম আগে থেকেই রয়েছে। এবার পরিবহনের সবার জন্য নিয়মটি বাধ্যতামূলক করছে কর্তৃপক্ষ।

সাকুরা পরিবহনের ম্যানেজার নিজাম হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১৮ সালে আমরা এসি বাসে এই সিস্টেম চালু করেছি। এখন এসি, ননএসি সব সেক্টরেই নামাজ আদায়ের সিস্টেম চালু করছি। চাকরিচ্যুতির বিষয়টি আমরা নোটিশে লিখেছি। কারণ, কর্মীরা ভয় পেয়ে শুধরে গেলে তো আলহামদুলিল্লাহ্‌। নামাজ সবার ঊর্ধ্বে। আমাদের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির স্যারও চাচ্ছেন সবাই নামাজ পড়ুক।’

সাকুরা পরিবহনের কার্যনির্বাহী পরিচালক রায়হান কবির জানান, কর্মীদের ‘নিয়মের মধ্যে রাখার জন্য’ তারা এই নিয়ম চালু করছেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উদ্যোগটা নেয়ার কারণ হচ্ছে, আমাদের পরিবহন সেক্টরটায় যারা আসেন, তাদের শিক্ষার ব্যাকগ্রাউন্ড খুব কম। আমার ছয় শর বেশি স্টাফ। তার মধ্যে হাতে গোনা ১০ থেকে ১৫ জন আছেন অন্যান্য ধর্মের। তাই মেজরিটিকে যদি আমি কন্ট্রোলে নিয়ে আসতে পারি, আমার পরিবহনের শৃঙ্খলাটা সঠিক লাইনে চলে আসবে। আর আমি যেহেতু মুসলিম, আমিও কিছু সওয়াবও কামাইলাম।’

শ্রমিক আইনে এ ধরনের ক্ষেত্রে আর্থিক জরিমানা বা চাকরিচ্যুতির নিয়ম আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার প্রাইভেট কোম্পানি। আমি আমার স্টাফদেরকে সঠিক লাইনে রাখার জন্য যেকোনো কিছু করতে পারি।

‘চাকরিচ্যুতির বিষয়টা আসলে তাদেরকে প্রেশারে রাখার জন্য। তুমি (কর্মী) এই শৃঙ্খলার মধ্যে থাকো। ওরা (কর্মী) সিগারেট খায়, রাস্তা থেকে টিকিটবিহীন যাত্রী ওঠায়। বিভিন্ন সময় আমরা যাত্রীদের অভিযোগ পাই। আমরা অনেক ব্যবস্থা নিয়েছি নিয়মে রাখার জন্য, কিন্তু কোনো কাজ হয় নাই। তাহলে সবশেষ একটা চেষ্টা করে দেখি তাদেরকে লাইনে রাখা যায় কি না, সঠিক পথে চলে কি না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মুসলিম। নামাজ-কালাম পড়লে মনটা নরম থাকে, শান্ত থাকে। সবার নেতিবাচক ধারণা, পরিবহন মাফিয়ারা চালায়। পরিবহন কোনো দিকনির্দেশনা মানে না, সড়ক পরিবহন আইন মানে না। এই বিষয়গুলো সব সময়ই আমাদের পীড়া দেয়। আসলেই কি আমরা মাফিয়া, আসলেই কি আমরা নিয়ম মানতে চাই না? আমাদের মূল লক্ষ্য সবাইকে লাইনে রাখা।’

তবে কর্মীদের জন্য এ ধরনের নির্দেশনা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি আইনে নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) খুরশীদ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘না কোনো সুযোগ নাই। আইনে এ ধরনের কোনো নিয়ম নাই।’

এই নির্দেশনা না মানলে চাকরিচ্যুত করার এখতিয়ার পরিবহন মালিকের আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশে প্রচলিত যে আইন আছে, সে আইন তো মানতে হবে। আইনের বাইরে তো কেউই না। আমার জানা মতে, কেউ নামাজ না পড়লে তাকে জোর করে নামাজ পড়ানোর কোনো স্কোপ নাই।’

‘নামাজ না পড়ার কারণে চাকরিচ্যুত হওয়ার অভিযোগ কেউ করলে আমরা দেখতে পারি। এ রকম ঘটনা ঘটলে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি দেখা যেতে পারে।’

অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সেলিম মিয়া জানান, সংবিধান অনুযায়ী ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে এও বলা আছে ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে কাউকে যন্ত্রণা, নিষ্ঠুরতা ও কোনো ধরনের তিরস্কার; এক কথায় কোনো কিছুই করা যাবে না। এটা শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। শ্রম আইনের একটা লিস্ট আছে। শ্রম আইনের বিরুদ্ধে শ্রমিকেরা কিছু করলে তখনই শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।’

তিনি বলেন, ‘যারা শ্রমিকের সংজ্ঞায় পড়বেন তারা যেকোনো ক্ষতিপূরণ এবং চাকরিচ্যুতির ক্ষেত্রে শ্রম আইন লঙ্ঘন হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রম আইনে মামলা করতে পারবেন।’

এ বিভাগের আরো খবর