জামায়াত-শিবির আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আগেই তাদের নির্মূল করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
তিনি বলেছেন, ‘একটি সুযোগের অপেক্ষায় আছে জামায়াত-শিবির। সুযোগ পেলেই তারা সাপের মতো ফোঁস করে উঠবে। ফোঁস দেয়ার আগেই তাদের গলাটা কেটে পার করে দিতে হবে।’
সোমবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মিলিত হল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে সিটি মেয়র বলেন, ‘আজকে জামায়াত-শিবির প্রকাশ্যে নেই, কিন্তু তারা আছে। হলেই আছে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে তো আছে। পালিয়েও যায়নি, হারিয়েও যায়নি। তারা আপাতত মিছিল করছে না, স্লোগান দিচ্ছে না। শুধু ক্লাস করছে আর বাড়ি চলে যাচ্ছে।
পেপার পড়লে ও টিভি খুললেই দেখা যায়, পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ী, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, রাজশাহী সিটি, ফোর লেন রাস্তা, ঢাকার বিশাল বিশাল ফ্লাইওভার। কোনোটা বানোয়াট নয়। আমরা খালেদা জিয়ার মতো শুধু ভিত্তিপ্রস্তের রাজনীতি করি না। আমরা যেমন ভিত্তিপ্রস্তর দিই, ঠিক আনুষ্ঠানিকভাবে সেটার উন্মোচন করি
‘একটি সুযোগ যদি তারা আবার পায়, সাপের মতো ফোঁস তুলে উঠবে। এই ফোঁস তোলার সুযোগ যেন তারা না পায়। ফোঁস দেয়ার আগেই গলাটা কেটে পার করে দিতে হবে। এটি পরিষ্কার নির্দেশ আমাদের।’
মেয়র বলেন, ‘আমরা বিএনপিকে ভয় পাই না। কারণ আজ রাজনীতি করতে করতে এতদূর এসেছি। মাননীয় নেত্রী আমাদের যেভাবে গাইড করে নিয়ে এসেছেন এবং দেশে যে দৃশ্যমান উন্নয়ন সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের বোঝানোর কোনো দরকার নেই।
এটা দেখে মনে হয়েছিল সেই পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা আবার উত্তরবঙ্গের মাটিতে ফিরে এসেছে। সেই দিন এ এইচ এম খায়রুজ্জামানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের দামাল ছেলেরা রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করে ওই মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন
‘পেপার পড়লে ও টিভি খুললেই দেখা যায়, পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ী, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, রাজশাহী সিটি, ফোর লেন রাস্তা, ঢাকার বিশাল বিশাল ফ্লাইওভার। কোনোটা বানোয়াট নয়। আমরা খালেদা জিয়ার মতো শুধু ভিত্তিপ্রস্তের রাজনীতি করি না। আমরা যেমন ভিত্তিপ্রস্তর দিই, ঠিক আনুষ্ঠানিকভাবে সেটার উন্মোচন করি।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, ‘আজকের এই রাজশাহীর মাটি একসময় পরিচিত ছিল সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আর দুর্নীতির আখড়া হিসেবে। সেই মিজানুর রহমান মিনু, নাদিম মোস্তফা, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নওগাঁর আলমগীর কবির- তারা সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট তৈরি করেছিল। এই সিন্ডিকেট আমাদের নাটোর, নওগাঁ, রাজশাহীর মানুষকে অতিষ্ঠ করে ফেলেছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সেই দুঃসময়ে দেখেছি দিনে-দুপুরে মানুষকে জবাই করে হত্যা করেছে বাংলাবাহিনীর জঙ্গিরা, বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা। আমরা বিচার পর্যন্ত চাইতে পারিনি।
‘এটা দেখে মনে হয়েছিল সেই পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা আবার উত্তরবঙ্গের মাটিতে ফিরে এসেছে। সেই দিন এ এইচ এম খায়রুজ্জামানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের দামাল ছেলেরা রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করে ওই মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।’
সম্মেলনে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘এই হল সম্মেলনে সেই নেতৃত্ব উঠে আসবে, যারা শিক্ষার্থীদের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করবে। যারা নিজের কথা চিন্তা না করে জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে জননেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করবে। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, আমাদের কোনো কাজে যেন প্রাণপ্রিয় নেত্রীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হোঁচট না খায়।
‘আমরা দেখেছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে ওই জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা, যারা বাংলাদেশকে মেনে নেয়নি, তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্তাক্ত করেছে। যেখানেই জামায়াত-শিবির পাওয়া যাবে, সেখানেই গণধোলাই দেয়া হবে। এই বাংলাদেশে জামায়াত-শিবিরের কোনো নাম-চিহ্ন থাকবে না।’
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই মতিহারের সবুজ চত্বরে মনে হয় এমন জায়গা নেই যেখানে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা ছাত্রলীগের ভাইদের রক্তে রঞ্জিত করেনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সব সময় আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
‘আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও কিন্তু ওই শিবিররা ছাত্রলীগের ওপর অত্যাচার বন্ধ করেনি। একটি সময় পর্যন্ত তারা পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠীর সহায়তা নিয়ে ছাত্রলীগের ওপর আক্রমণ করত। ছাত্রলীগের সামনে যেন ওই জামায়াত-শিবির একবিন্দু দাঁড়াতে পারে। আপনাদের সব শক্তি দিয়ে এই মাটি থেকে তাদের বিতাড়িত করবেন।’
সম্মেলন শেষ হলেও হল কমিটি ঘোষণা করেনি ছাত্রলীগ।
এদিন বেলা ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলাদেশ মাঠে জাতীয় ও ছাত্রলীগের দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া।
সম্মেলনের শুরুতে সব অতিথিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। সম্মেলনে শোক প্রস্তাব পাঠ শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে সব শহীদ এবং ছাত্রলীগের শহীদ ও প্রয়াত নেতাকর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী কামাল, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল সরকার, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা।
প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহসভাপতি খালিদ হাসান নয়ন, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ হিল বারী, সহসম্পাদক শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম, আহসান হাবীব বাপ্পী, শফি আজাদ বান্টি ও প্রদীপ কুমার সাহা পিংকু, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস।