মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকর ও দশম সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিন থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে অনেকটাই পর্দার আড়ালে চলে যাওয়া জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা নানা ইস্যুতে ইদানীং রাজপথে নামছেন।
জাতীয় দিবসের পাশাপাশি মদের লাইসেন্স ও পণ্যমূল্য ইস্যুতে একই দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছে দলটি। রাজশাহীতে একটি মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলাও হয়েছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি যখন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে, সে সময় জোটসঙ্গী জামায়াতের রাজপথে কর্মসূচি বাড়ানোর বিষয়টিতে আলাদা নজর রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জামায়াত-শিবির যখন রাজপথে নানা কর্মসূচি দিয়ে সক্রিয় থেকেছে, সে সময় ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সরকারি সম্পত্তির পাশাপাশি বেসরকারি স্থাপনায় বেপরোয়া হামলায় জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা নানা ইস্যুতে ইদানীং রাজপথে নামছেন। পণ্যমূল্যের ইস্যুতে সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত
তবে সাত বছর আগে সরকারপতনের আন্দোলন ভেঙে পড়লে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। দলের কার্যক্রম তখন চলতে থাকে গোপনে।
প্রায় এক দশক ধরে খুলছে না বড় মগবাজারে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, নয়াপল্টনে ছাত্র শিবিরের কার্যালয়ের দশাও একই।
এর মধ্যেও গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মদের লাইসেন্স ইস্যুতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মিছিল বের করে জামায়াত। ১০ মার্চ দলটির নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করে পণ্যমূল্য ইস্যুতে। এর আগে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীদের মিছিল ছিল রাজপথে।
এতদিন জামায়াত-শিবিরের গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, বা ভার্চুয়াল বৈঠক করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিত বা বিবৃতি দিয়ে আসছিল।
গত বছরের মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতীয় সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদির সফরে ঘিরে যখন ডানপন্থি বিভিন্ন দল রাজপথে সহিংসতা করেছিল, সে সময় নিজেদের ব্যানার ছাড়া জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি পুলিশের তদন্তে বের হয়ে এসেছিল। পরে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দল ও সংগঠনগুলো নিজেদের গুটিয়ে নিলে জামায়াতও আর সামনে আসেনি।
এবার রাজশাহী ছাড়া জামায়াতের মিছিলগুলো এবার হয়েছে শান্তিপূর্ণ। পুলিশও তাদেরকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে, এমন নয়। আবার মিছিলগুলোও হয়েছে কম সময়ের জন্য। হঠাৎ করেই তারা এসেছে, আবার হঠাৎ করেই মিশে গেছে।
তবে ১৫ দিনের দিনের ব্যবধানে রাজপথে দুটি কর্মসূচি দলটির ভবিষ্যতে রাজপথে নামার অনুশীলন কি না, এই বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির মনে করেন, কৌশলগত কারণে জামায়াত রাজপতে নামতে পারে। তিনি বলেন, ‘তাদের আসল উদ্দেশ্য কী, সেটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ রাখা উচিত।
হঠাৎ রাজপথে নামাটাকে গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ বলছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের সর্বশেষ যে দুটি কর্মসূচি ছিল সেগুলো ছিল জনসম্পৃক্ত ইস্যু। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে সরকার মদ বিক্রির লাইসেন্স দিতে পারে না। মদ ইসলামে নিষিদ্ধ। মদের লাইসেন্স দিচ্ছে সরকার, এর প্রতিবাদ জানানো আমাদের ঈমানি দায়িত্ব।
‘আরেকটা ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ে। দ্রব্যমূল্য তো অস্বাভাবিক আকার ধারণ করছে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিবাদ জানানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা কর্মসূচিগুলো পালন করছি।’
মতিউরের দাবি, যখনই কোনো ইস্যু আসে তারা সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং জানান। তিনি বলেন, ‘বাজেটে গণবিরোধী যেসব পয়েন্ট ছিল, সেগুলো নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করেছি। গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি।’
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশীদ বলেন, ‘তাদের হঠাৎ রাজপথে নামাটা সন্দেহজনক। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য তারা কোনো ষড়যন্ত্র করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমাদের নজরদারি আছে।’