মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন আড়িয়াল বিলের পাশ থেকে মিষ্টি কুমড়া তোলায়। সারা দেশেই কদর রয়েছে এই এলাকার কুমড়ার। পাঁচ কেজি থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত হয় এগুলোর ওজন।
স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায়ের কৃষিমেলাতে প্রদর্শনীর জন্য নিয়ে যাওয়া হয় এখানকার কুমড়া। ভালো দামে বিক্রি হয় এগুলো।
তবে এবার কুমড়া নিয়ে হতাশ চাষিরা। তাদের অভিযোগ, পাইকারদের সিন্ডিকেটের কারণে তারা আশা অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন না। পাইকারদের দাবি, বাজারে এবার মিষ্টিকুমড়ার তেমন দাম নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সান্ত্বনা রানীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর শ্রীনগর উপজেলার গাদিঘাট, শ্রীধরপুর, আলমপুর, বাড়ৌয়খালীসহ ১৪৫ হেক্টর জমিতে কুমড়া চাষ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ১৯০ হেক্টর জমিতে।
চাষিরা জানান, আশ্বিন মাসে ১৪ শতাংশ জমিতে ১০ থেকে ১২টি করে চারা রোপণ করা হয়। প্রতিটি চারায় ২০ থেকে ৬০টি কুমড়া ধরে। শীতের শেষ দিকে কুমড়া বিক্রির মতো পরিপক্ক হয়।
জমি থেকে মাথায় ও নৌকায় করে কুমড়া নিয়ে চাষিরা জড়ো করেন রাস্তার পাশে। সেখান থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পাইকাররা কুমড়া কিনে নিয়ে যান।
গাদিঘাট গ্রামের রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার তিন কানি জমিতে কুমড়া চাষ করেছি। ঢাকা থেকে অনেক পাইকার আসে। তারা সিন্ডিকেট করে রেখেছে। আমাদের কাছ থেকে অনেক কম দামে কুমড়া কিনে নিয়ে যায়। আড়িয়াল বিলের কুমড়ার স্বাদই আলাদা। তারপরও তারা দাম দেয় না।’
আরেক কুমড়াচাষি ফারুক বলেন, ‘আমি ১০ গণ্ডা জমিতে কুমড়া চাষ করেছি। এবার দাম ভালো পাই না। পাইকাররা সিন্ডিকেট করে আসে। যদি কোনো পাইকার এসে দাম করে যায় তাহলে আর কোনো পাইকার সেই কৃষকের কাছে আসে না। ঢাকায় নিয়ে গেলেও একই অবস্থা।
‘বাধ্য হয়ে একজন এসে যে দাম বলে সেই দামেই বিক্রি করি। বাজারে আমাদের কুমড়া অনেক দামে বিক্রি হয় কিন্তু আমরা দাম পাই না। কষ্ট আমরা করি, লাভ করে পাইকাররা।’
পাইকার জামাল হোসেন জানান, তারা চাষিদের কাছ থেকে কুমড়া কিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিক্রি করেন। লট বা মণ হিসেবে কুমড়া কেনেন। ৬০ মণের কুমড়ার গাড়ি কেনেন ২৫ হাজার টাকায় আর ৭০ থেকে ৮০ মণের গাড়ি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। এই হিসাবে প্রতিটি কুমড়ার দাম পড়ে ১০ থেকে ১২ টাকা। সেই কুমড়া ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন ২২ থেকে ২৫ টাকায়।
সিন্ডিকেটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে আসি ব্যবসা করতে। খুব যে লাভ করি তা না। গাড়ি ভাড়ার পর তেমন লাভ হয় না। বাজার যেমন তেমন দামে কিনি। এখন কুমড়ার বাজার এমনিতেই ভালো না।’