গত ১০ বছরে দেশে গ্যাসের দাম ১০০ ভাগ বাড়ানো সত্বেও এবার অষ্টম দফায় আরও ১১৬ ভাগ বাড়ানোর পায়তারা করছে ৬টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি।
এই দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ সফল হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের ঐতিহ্যবাহী ও মেড ইন বাংলাদেশ ব্রান্ডের গর্বিত শিল্প সিরামিক খাত।
এই শিল্পকে বাঁচাতে এবং নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানো ঠেকাতে নিরুপায় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) নেতারা।
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিনসহ সংগঠনের সিনিয়র নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে বিসিএমইএ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা জানান, গত চার বছরে তিতাস গ্যাস কোম্পানি ১৫০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। তা সত্ত্বেও লোকসানের দাবি তোলে অবিবেচকের মতো আবার গ্যাসের দাম ১১৬ শতাংশ হারে বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে তিতাস শহর ৬টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি।
সিরাজুল ইসলাম দাবি করেন, ‘সিরামিক একটি গ্যাসের নির্ভর প্রসেস ইন্ডাস্ট্রি। গ্যাস নির্ভরএই শিল্পে ক্রমাগত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া একটি প্রধান সমস্যা। এই শিল্প গ্যাসচালিত হওয়ায় বিকল্প কোন জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ নাই। কিন্তু বিগত দশ বছরে এই শিল্প খাতে প্রায় শতভাগ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মোট উৎপাদন ব্যয় এর ১০-১১ শতাংশ বৃদ্ধি পায় শুধু কাঁচামাল গ্যাসের হিসেবেই।’
ফলে গ্যাসের দাম বাড়লে উৎপাদিত সিরামিক পণ্যের দামও বেড়ে যায়। এ কারণে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সিরামিক উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতা করে পেরে ওঠে না।
তিনি আরও জানান, ২০১৯ সালেই শিল্পখাতে প্রায় ৩৮ শতাংশ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। এতে প্রতি কেজি সিরামিক পণ্যের উৎপাদন ব্যয় ১০ থেকে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এবার অষ্টম দফায় গ্যাসের মূল্য ১১৬% হারে বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২১ মার্চ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গণশুনানির আয়োজন করেছে।
‘প্রস্তাবিত হারে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেলে সিরামিক পণ্যের উৎপাদন ব্যয় নতুন করে আরও ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে যাবে। তাছাড়া গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ব্যয়সহ সকল ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে- যা মরার ওপর খরার ঘা হিসেবে আবির্ভূত হবে। এতে করে দেশীয় সিরামিক পণ্যের মূল্য প্রতিযোগিতায় বিদেশী পণ্যের সঙ্গে টিকে থাকতে না পারার কারণে উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সর্বোপরি দেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
এ পদক্ষেপে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান রুগ্ন শিল্পে পরিণত হবে।
যারা টিকে থাকবে বিশ্ববাজারে সঙ্গে তাদের তাল মিলিয়ে চলার জন্য উৎপাদন খরচ কমাতে শিল্পমালিকরা বাধ্য হয়ে হয়তো শ্রমিক কর্মচারী ছাঁটাই করবে, ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়া সময় মত ব্যাংক ঋণ পরিশোধের ব্যর্থতায় ঋণখেলাপি বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি জনিত কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা ইতিমধ্যেই বাস্তবে পরিণত হতে শুরু করেছে। গ্যাসের মূল্য আবার বাড়ানো হলে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতার সহ অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিজিএমইএ নেতারা দাবি করেন, এধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিল্প খাত চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কর্মসংস্থান হারিয়েও মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে মানুষ কষ্টে পড়বে। এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই আমরা দাম বৃদ্ধির এই উদ্যোগকে থামিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোরালো আবেদন রাখছি।